কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় আবারও সাড়ে ৩ কোটি টাকার প্রকল্প
সাগরের প্রবল ঢেউয়ের কবল থেকে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেছে। প্রকল্পের আওতায় সৈকতের দেড় কিলোমিটার এলাকায় জিও-টিউব ও ৩৭ হাজার জিওব্যাগ দিয়ে একটি অস্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। ২০১৯ সালেও এক কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে একই স্থানে জিও-টিউব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই সেটি সাগরে বিলীন হয়ে যায়।
সম্প্রতি কুয়াকাটা সৈকতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকায় ১৫-১৬ জন শ্রমিক জিও-টিউব স্থাপনের কাজ করছেন। কয়েকজন শ্রমিক সৈকত থেকেই বালু কেটে তা জিও ব্যাগে ভরছেন। আবার কয়েকজন সৈকতে স্থানীয় ড্রেজার বসিয়ে জিও টিউবের মধ্যে বালু ভরছেন।
পাউবো কলাপাড়া সার্কেল সূত্র জানায়, পাউবো'র 'কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সকর্তকতামূলক প্রতিরক্ষা কাজ’ প্রকল্পের আওতায় সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকায় দেড় কিলোমিটার জিউটিউব স্থাপন করা হচ্ছে। সাগরের প্রচণ্ড ঢেউয়ের ঝাপটায় এই জিও-টিউব যেন অক্ষত থাকে সেজন্য জিও-টিউবের বাইরে এবং ভেতর দিকে জিও ব্যাগ বসানো হচ্ছে। এভাবে ৩৭ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ বসানো হবে।
পাউবো কলাপাড়া সার্কেলের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শওকত ইকবাল মেহেরাজ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, জিও টিউবের মধ্যে এক কিলোমিটার সাদা রংয়ের বা নন-ওভেন জিও টিউব এবং বাকি ৫০০ মিটার বা আধা কিলোমিটারে কালো রঙয়ের বা ওভেন জিও টিউব বসানো হচ্ছে। নন-ওভেন টিউবের চেয়ে ওভেন টিউব বেশি টেকসই।
তিনি বলেন, 'জিও-টিউবের বাইরে এবং ভেতর দিকে জিও ব্যাগ স্থাপন করায় এবারের প্রতিরক্ষা বাঁধটি আগের চেয়ে টেকসই হবে এবং সৈকত রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।'
পর্যটকরা এর কোন ক্ষতি না করলে এটি দুই থেকে তিন বছর টিকবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'এটি সৈকত রক্ষায় একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা। কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় একটি স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজের জন্য ডিপিপি বা খসড়া প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলমান। ডিপিপি চূড়ান্ত হলে সে অনুযায়ী এখানে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ তৈরি হবে। তার আগে সৈকতটি ভাঙন থেকে রক্ষায় এ সাময়িক প্রতিরক্ষা বাঁধ দেয়া হচ্ছে।'
তিনি জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হয় এবং জুন মাসের মধ্যে কাজটি শেষ হবে। কাজের প্রায় ৫০ শতাংশ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে।
সৈকত রক্ষায় দুই বছর আগের একই ধরনের প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমি এখানে নতুন এসেছি। তবে শুনেছি পর্যটকরা ওই জিও-টিউবের ওপর দিয়ে হাঁটা-চলা করেছেন, ধারালো যন্ত্রপাতি দিয়ে এর ক্ষতি করেছেন। ফলে জিও টিউবের বালু সাগরে ঢেউয়ের ঝাপটায় বের হয় বিলীন হয়ে যায়।'
এ প্রকল্প সম্পর্কে ট্যুর অপারেটরস অব কুয়াকাটা (টোয়াব) এর সভাপতি রুম্মান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, 'সৈকত রক্ষার এ উদ্যোগটি খুবই ভালো। তবে এর চেয়ে টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে সৈকতটি ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেত।'
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, 'প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে সাগরের প্রবল ঢেউ সৈকতে আছড়ে পড়ে এবং সৈকতটি ক্রমাগত ভাঙনের শিকার হচ্ছে। আর এ ভাঙনের কবল থেকে সৈকতটি রক্ষা করতে না পারলে পর্যটকরা এখানে ভ্রমণের আগ্রহ হারাবেন।'
Comments