‘পুষ্টি আপা’

ব্রহ্মপুত্রের বুকে দুর্গম চর শাখাহাতীতে নিউট্রিশন সেলস এজেন্ট রোকেয়া বেগম (ডানে)। ছবি: স্টার

ব্রহ্মপুত্রের বুকে দুর্গম চর শাখাহাতীর রোকেয়া বেগম (২৮) এখন আর তার নামে পরিচিত হচ্ছেন না। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার এই দুর্গম চরে তিনি ‘পুষ্টি আপা’ বলে পরিচিত।

রোকেয়ার মতো চর মনতোলার আনিছা বেগমকেও (৩০) ‘পুষ্টি আপা’ বলে ডাকা হয়। তাদের মতো চর জোরগাছ এলাকার মর্জিনা বেগম (৩২) ও চর গাজীরপাড়া এলাকার নাজমা বেগমসহ চরাঞ্চলের প্রায় অর্ধ শত নারী ‘পুষ্টি আপা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

গত বছর দুয়েক ধরে তারা দুর্গম চরাঞ্চলে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে নারী ও শিশুদের পুষ্টি সেবা দিয়ে আসছেন। তারা বেসরকারি সংস্থায় নিউট্রিশন সেলস এজেন্ট (এনএসএ) হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে চরাঞ্চলে কাজ করছেন।

চর শাখাহাতীর রোকেয়া বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চরাঞ্চলে আমি এখন “পুষ্টি আপা” নামেই পরিচিত। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বাড়ি-বাড়ি গিয়ে নারী ও শিশুদের পুষ্টি বার্তা পৌঁছে দিই। বিশেষ করে, অন্তঃসত্ত্বা নারীদের খোঁজখবর রাখি এবং তাদেরকে পুষ্টি সম্পর্কে সচেতন করি।’

‘পুষ্টি সংক্রান্ত ওষুধও চরের নারীদের কাছে ন্যায্যমূল্যে সরবরাহ করে থাকি,’ যোগ করেন তিনি।

চর মনতলার আনিছা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হলো চরাঞ্চলে নারীদের পুষ্টি সম্পর্কে সচেতন করে তোলা এবং পুষ্টিকর খাবার ও ওষুধে অভ্যস্ত করে তোলা। একসময় চরের নারীরা পুষ্টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। পুষ্টিহীনতা ছিল তাদের অন্যতম সমস্যা।’

‘পুষ্টি সম্পর্কে সচেতন না থাকায় চরের নারীরা সন্তান প্রসবের সময় নানা সমস্যায় ভুগতেন’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘মা ও শিশুর মৃত্যুর ঘটনাও দেখা যেত। এখন তারা এসব বিষয়ে খুব সচেতন ও নিরাপদ।’

‘খুব ভালো লাগে চরের মানুষ এখন আমাকে “পুষ্টি আপ” বলে ডাকেন,’ মন্তব্য আনিছার।

চর জোরগাছ এলাকার মর্জিনা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আগে চরের অন্তঃসত্ত্বা নারীরা আয়রন ট্যাবলেট খেতেন না। কিন্তু, এখন তারা এ বিষয়ে সচেতন। তারা পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি প্রয়োজনে আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণ করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম দিকে চরের নারীদের বুঝাতে আমার কষ্টই হতো। কিন্তু, এখন তাদেরই আগ্রহ বেশি। চরের মানুষ আমাকে “পুষ্টি আপা” বলে ডাকেন। এ ডাক শুনেই সারাজীবন চরে কাজ করতে চাই।’

চর গাজীপাড়া এলাকার নাজমা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তা আরডিআরএস বাংলাদেশ ও আইসিসিও কো-অপারেশন পার্ট অব কর্ড এইড’র সাসটেইনেবল অপরচুনিটি ফর নিউট্রিশন গভর্নেন্স (সঙ্গো) নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা কাজ করছি। এই প্রকল্পটির মাধ্যমে প্রতি মাসে চরের নারীদের নিয়ে পুষ্টি সংক্রান্ত মতবিনিময় করা হয়।’

আরও বলেন, ‘আমাদের “পুষ্টি আপা” ডাকতে তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন আর আমরাও খুশি হই।’

‘সঙ্গো’ প্রকল্পের চিলমারী উপজেলা কো-অর্ডিনেটর আহসানুল কবীর বুলু ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পুষ্টি আপরা ব্রহ্মপুত্রের দুর্গম চরের নারীদের জন্যে কাজ করছেন। তারা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করায় চরের নারীরা নিরাপদে সুস্থ সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। চরের মানুষ পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন এবং আগের কুসংস্কারগুলো মানছেন না।’

Comments

The Daily Star  | English

Trump started this war, we will end it, says Iranian military

Iran vowed to defend itself a day after the US dropped 30,000-pound bunker-buster bombs onto the mountain above Iran's Fordow nuclear site

1d ago