টেকনিক্যাল বদল এনেই এমন শাণিত তাসকিন

ডানহাতি এই পেসারের উন্নতির পেছনের গল্প, অন্য পেসারদের অবস্থা নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসন।
Taskin Ahmed & Otis Gibson
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

শ্রীলঙ্কা সফরে চরম হতাশার মাঝেও আলোর রেখা ছিলেন তাসকিন আহমেদ। মরা পিচেও ফুল ফুটিয়েছেন, দারুণ বল করে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের কাবু করেছেন। কঠিন কন্ডিশনে দুই টেস্টে নিয়েছেন ৮ উইকেট। পরিসংখ্যানে অবশ্য তার নিজেকে নিংড়ে দেওয়ার নিবেদনটা ধরা পড়বে না পুরোটা। ডানহাতি এই পেসারের উন্নতির পেছনের গল্প, অন্য পেসারদের অবস্থা নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসন।

শ্রীলঙ্কা সফরে তাসকিন আহমেদের লক্ষণীয় উন্নতি দেখা গেছে সেটার পেছনে কি কাজ করেছে?

ওটিস গিবসন: নিশ্চিতভাবেই তার ফিটনেসের নতুন মাত্রার জন্য (এমন উন্নতি হয়েছে)। ফিটনেস নিয়ে সে অনেক পরিশ্রম করেছে।  ফিটনেসে উন্নতি করায় গতি বেড়েছে, ছন্দ এসেছে। এর কারণে  টেকনিক্যাল দিক নিয়ে কাজ করাও তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে। সে পরামর্শগুলো খুব ভালোভাবে নিজের ভেতরে নিয়েছে।  যা তাকে টেস্টে ম্যাচে মানসম্মত বোলারে পরিণত করেছে।

টেকনিক্যাল কোন দিকটা নিয়ে কাজ করেছেন একটু বিস্তারিত বলা যায়

গিবসন: আমরা তার রানআপ নিয়ে অনেক লম্বা সময় ধরে কাজ করেছি। এমনকি নিউজিল্যান্ড সফরের আগে ঘন ঘন নো বল (ওভারস্টেপিংয়ে) করার তার একটা প্রবণতা ছিল। তার রানআপটা আরও সহজ করে দিয়েছি। দেখবেন শ্রীলঙ্কায় সে দুই টেস্টে প্রায় ৭০ ওভার (৬৮ ওভার) বল করেছে, একটাও নো বল করেনি।

আপনি যদি স্বস্তি দায়ক (কমফোর্টেবল) একটা রানআপ আত্মস্থ করতে পারেন তাহলে বোলিংয়ে অন্য সব কিছুও সহজ হয়ে যায়। এই কারণে দেখবেন তার লাইন-লেন্থেও খুব ভাল ছিল। পাশাপাশি সে এখন কিছুটা স্যুয়িং করাতে পারছে। সব মিলিয়ে তার উন্নতিতে আমি খুবই মুগ্ধ।

Taskin Ahmed
ছবি: এসএলসি

আপনার কি মনে হয় তিন সংস্করণেই সে ভাল করতে পারবে? বা তাকে সব ফরম্যাটে খেলানো যায়?

গিবসন: বর্তমান ছন্দ থাকলে সে সব সংস্করণেই সেরা পারফর্ম করতে পারবে। তবে এটা বলা কঠিন যে একজন বোলার টানা তিন সংস্করণে খেললে কি হবে। আমাদের এখানে ম্যানেজ করতে হবে। বুঝতে হবে কাকে কখন কোথায় খেলাতে হবে, কখন বিশ্রাম দিতে হবে। এই ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা দরকার।

অন্যদের পেসারদের পারফরম্যান্স কীভাবে দেখছেন?

গিবসন: শ্রীলঙ্কার কন্ডিশন খুব কঠিন ছিল পেসারদের জন্য। আমরা দেখেছি দুদলের জন্যই কঠিন ছিল। প্রথম টেস্টে তো আমরা লম্বা সময় ব্যাট করলাম, তারাও তা করল।  বিশেষ করে উপমহাদেশে যখন এই ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হয় তখন পেসারদের দোষ দেওয়া মুশকিল। দুই দলের পেসারদের জন্যই তা ছিল কঠিন। আমার মনে হয় তাসকিন হচ্ছে দুই দলের পেসারদের মধ্যেই সেরা। কেবল সেই ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলতে পারছিল।

ইবাদতকে দেখলাম অনেক গতিতে বল করেছেন। ১৪৭ কিমিও তুলেছেন, কিন্তু খুব একটা সাফল্য না পাওয়ার কারণ কি?

গিবসন: ইবাদত সম্ভবত সবচেয়ে গতিময় পেসার আমাদের দলে। কিন্তু ধারাহিকভাবে সে ভালো জায়গায় বল ফেলতে পারে না, যেটা তাসকিন করেছে। সে যদি গতির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণটা আনতে পারে, বল মুভ করাতে পারে তাহলে দারুণ বোলার হতে পারবে। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, আমার মনে হয় সে শিখতে চায় এবং ঠিকপথেই আছে।

শরিফুলকে কেমন দেখলেন?
গিবসন: আমি শরিফুলকে নিয়ে খুব আশাবাদী, তার পারফরম্যান্সে অনুপ্রাণিত। সে নিউজিল্যান্ড সফরে প্রথম দলে এলে। এবং বলতে হবে দ্রুতই টেস্ট খেলে ফেলেছে। দারুণ প্রতিভা,সে উজ্জ্বল এক আগামী হতে পারে। সময়ের সঙ্গে সে উন্নতি করবে। তার গতি আছে, আগ্রাসন আছে। বাঁহাতি হওয়ার একটা ন্যাচারাল সুবিধাও আছে।

আইপিএলে মোস্তাফিজ বোলিং দেখেছেন?

গিবসন:আমি আইপিএল দেখতে পারিনি আসলে।

মোস্তাফিজকে তো আপনারা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে বিবেচনা করলেন না, টেস্টে তার সম্ভাবনা কতটুকু?
গিবসন:মোস্তাফিজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেছে। আমরা ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বেলায় তার বল ভেতরে আনা নিয়ে কাজ করেছি। কিছুটা সাফল্যও পেয়েছি। তবে টেস্ট ম্যাচ আসলে দিনে ৯০ ওভারের খেলা। কাজেই আমাদের সেভাবে চিন্তা করতে হবে।

আমাদের মোস্তাফিজ আছে, ইবাদত আছে, রাহি, তাসকিন, হাসান মাহমুদ আছে। কাজেই ৪/৫ জন পেসার আছে টেস্ট খেলার মত। মোস্তাফিজ যখন সব দিক থেকে টেস্ট খেলার জন্য উপযুক্ত হবে, আরও উন্নতি যখন করবে তখন দারুণ হবে। কারণ এমনিতেই সে দুর্দান্ত পেসার।

শেষে অন্য একটা প্রসঙ্গ, বিসিবি আপনাকে আরও বড় দায়িত্ব দিলে নিবেন?

গিবসন: আমি জানি না আপনি কি বলতে চাইছেন। তবে আমি পেস বোলিং কোচ হিসেবে খুশি আছি। এই কাজ উপভোগ করছি। আমি বাংলাদেশের সব পেসার বোলার নিয়ে কাজ করতে চাই। এই দায়িত্বের কথা বোঝাতে চাইলে বলব এটাই আমার কাজ। এই কাজেই আমি খুশি আছি।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তো আপনাকে দল মিস করবে…

গিবসন: আমি হয়ত ব্যক্তিগতভাবে এখানে থাকতে পারছি না। কিন্তু আমি প্রতিটি পেস বোলারের সঙ্গে থাকব। দূরে থাকলেও আমি দলের সঙ্গেই থাকব। প্রতিটা ম্যাচ দেখব, প্রতিটা বল পর্যবেক্ষণ করব। আমি তাদের সঙ্গে ওখান থেকেই কথা বলব। অন্য কোচ ও স্টাফদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকবে। দেখেন, এটা কেবল তিন ম্যাচেরই তো ব্যাপার। আশা করি, সমস্যা হবে না।'

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago