ভ্যাকসিনের প্রযুক্তি শেয়ার করবে যুক্তরাষ্ট্র

‘এই ঘোষণার পেছনে ড. ইউনূসসহ ১৭০ রাষ্ট্রপ্রধান-নোবেলজয়ীর দেওয়া চিঠির ভূমিকা রয়েছে’
Vaccine
ছবি: সংগৃহীত

করোনা মহামারি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করতে যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের প্রযুক্তি শেয়ার করার কথা জানিয়েছে জো বাইডেন প্রশাসন।

গতকাল বুধবার তারা এ ঘোষণা দেন বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি।

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণার শুরু থেকেই এর প্যাটেন্ট সবার জন্যে উন্মুক্ত করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রচারণা শুরু হয়। প্রচারণায় বলা হয়, আলো, বাতাস কিংবা পানির মতো কমন গুডস হিসেবেই যাতে মানুষ ভ্যাকসিন পায়, যেকোনো দেশ চাইলেই যাতে তা উৎপাদন করতে পারে। কারণ, করোনাভাইরাস অল্প দিনেই চলে যাবে না। এর বিরুদ্ধে লড়তে প্রয়োজন ভ্যাকসিন। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় এতদিন আলোর মুখ দেখেনি এই প্রচারণাটি। যারা প্রচারণা চালাচ্ছিলেন, তারা বাইডেন প্রশাসনের ঘোষণার অপেক্ষায় ছিলেন। বাইডেন প্রশাসনের সর্বশেষ ঘোষণাটিতে এই প্রচারণাটি আলোর মুখ দেখল। ফলে মানুষের ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক দ্বার উন্মোচন হলো।

ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের শুরু থেকেই এটির প্যাটেন্টের স্বত্বত্যাগ করার আহ্বান জানাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসও। গত বছরের জুনে দেওয়া এক চিঠিতে প্রথম ভ্যাকসিনের প্যাটেন্টের স্বত্বত্যাগ করার আহ্বান জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিশ্বের ১০০ জন রাষ্ট্রপ্রধান ও নোবেলজয়ী। সর্বশেষ ১০ দিন আগেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিশ্বের ১৭০ জন রাষ্ট্রপ্রধান ও নোবেলজয়ী একই আহ্বান জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে খোলা চিঠি দেন।

ইউনূস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লামিয়া মোরশেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সর্বশেষ বাইডেন প্রশাসনকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তা ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস, নিউইয়র্ক টাইমস, রয়টার্সসহ বিশ্বের অনেক শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এই খোলা চিঠিতে সই করা ১৬ জন নোবেলজয়ী ইউনূস সেন্টারের মাধ্যমে এই আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে ভ্যাকসিনকে প্যাটেন্টমুক্ত করতে একটি পিটিশন আহ্বান করা হয়, যেখানে ২০ লাখ মানুষ সই করেছেন। এর মধ্যে ১৩ লাখ সই-ই এসেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করা পিটিশনের মাধ্যমে। বাইডেন প্রশাসনের সর্বশেষ যে ঘোষণা, এর পেছনে অবশ্যই ওই খোলা চিঠি ও পিটিশনের ভূমিকা রয়েছে।’

‘মহামারিতে পুরো পৃথিবী বিপর্যস্ত। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তারা ভ্যাকসিন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সবমিলিয়ে যে পরিস্থিতি, এতে ভ্যাকসিনের প্যাটেন্ট শেয়ার করার কোনো বিকল্প নেই। এতে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোও সক্ষমতা অনুযায়ী নিজ দেশেই ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারবে’, বলেন তিনি।

এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরও বেশি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে জীবন রক্ষাকারী এই ভ্যাকসিন তৈরির অনুমোদন দিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) তার মেধাসম্পদের সাময়িক স্বত্বত্যাগের ছাড়ের সম্ভাব্য আলোচনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্যাথরিন তাই ভ্যাকসিন প্রযুক্তি শেয়ার করার বিষয়টি জানিয়েছেন।

তাই এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রশাসন মেধাভিত্তিক সম্পত্তি সুরক্ষায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। তবে, এই মহামারিটি শেষ করার লক্ষ্যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের জন্য এই সুরক্ষার স্বত্বত্যাগ ছাড়ের পক্ষে সমর্থন করে।’

তিনি আশঙ্কা করেছিলেন ডব্লিউটিওর বিধি অনুসারে সুরক্ষার স্বত্বত্যাগ করতে প্রয়োজনীয় বৈশ্বিক ‘ঐক্যমতে’পৌঁছাতে সময় লাগবে এবং মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, কোভিড-১৯ টিকা সারাবিশ্বে সরবরাহের ওপর এটি তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলবে না।

তাইয়ের এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক এনগোজি ওকনজো-আইওয়ালা উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে একটি একান্ত বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে বাক-বিতণ্ডা করছেন। তবে, কোভিড-১৯ চিকিৎসার বিস্তৃত প্রবেশাধিকারের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের অক্টোবরে প্রথম প্রস্তাবের পর ডব্লিউটিওর জেনারেল কাউন্সিল কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ও অন্যান্য সরঞ্জামগুলোতে মেধাভিত্তিক সম্পত্তি সুরক্ষার অস্থায়ী স্বত্বত্যাগের বিষয়টি আমলে নেয়। পশ্চিমাদের কিছু প্রগতিশীল আইনপ্রণেতা এই বিষয়টির সমর্থন করেছে।

এই প্রস্তাবটির সমর্থনে ১০০টিরও বেশি দেশে এগিয়ে এসেছে এবং বাইডেনের ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে কংগ্রেসের ১১০ জন সদস্য এই স্বত্বত্যাগের বিষয়টি সমর্থন করতে বাইডেনকে একটি চিঠি দেয়।

শিল্পসহ বিভিন্ন খাত থেকে এই সিদ্ধান্তের বিরোধীরা বলেন, মেধাস্বত্ব মওকুফ কোনো নিরাময়ের উপায় নয়। তারা জোর দিয়েছিলেন যে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের উৎপাদন জটিল কাজ এবং মেধাস্বত্ত্ব সম্পত্তি হ্রাস করে তা বাড়ানো যাবে না। তারা আরও বলেন, মেধাস্বত্বের সুরক্ষা তুলে নিলে ভবিষ্যতের উদ্ভাবনের ক্ষতি করতে পারে।

বাইডেনের ঘোষণায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ফাইজার। দরিদ্র ও গ্রামীণ অঞ্চলে টিকাদান প্রচারকে সহজ করার জন্য এক ডোজের ভ্যাকসিন তৈরি করা প্রতিষ্ঠান জনসন অ্যান্ড জনসনও একই অবস্থানে রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকাও।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের জন্য মেধাস্বত্ব সম্পত্তি সুরক্ষা মওকুফের সমর্থন করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে এটিকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘একটি স্মরণীয় মুহূর্ত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

বুধবার ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস ‘বৈশ্বিক স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেতৃত্ব’র উদাহরণ হিসেবে মেধাভিত্তিক সম্পত্তির অধিকার মওকুফ করার জন্য বাইডেন প্রশাসনের সহায়তার প্রশংসা করেছেন।

আরও পড়ুন:

মানুষের জীবনের বিনিময়ে মুনাফা নয়

করোনা মহামারি: সময় দ্রুত হারিয়ে ফেলছি

Comments

The Daily Star  | English

Police grapple with surge in crime

Data from the Police Headquarters presents a grim picture of violent crimes, including murder, mugging, robbery, extortion, and mob violence, in the first six months of 2025.

17h ago