জিদান, গার্দিওলা, মরিনহো... কারও নিস্তার নেই টুখেলের থেকে

গত জানুয়ারিতে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে সরিয়ে চেলসির কোচ করা হয় টমাস টুখেলকে। আগের মৌসুমে ফরাসি ক্লাব পিএসজিকে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তুললেও তাকে নিয়ে এতটা উচ্চাশা খোদ চেলসি ভক্তদেরও ছিল না! এখনও অনেকের নেই। নইলে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে সেমিফাইনালের ফিরতি লেগ শুরুর আগে স্টেডিয়ামের বাইরে ল্যাম্পার্ডের নামে স্লোগান কেন দেবেন তারা?
যে যা-ই বলুক কিংবা ভাবুক না কেন, নিন্দুকদের ভুল প্রমাণিত করেছেন ৪৭ বছর বয়সী জার্মান কোচ টুখেল। তার অধীনে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ চারে ফিরেছে ব্লুজরা। তারা জায়গা করে নিয়েছে এফএ কাপের ফাইনালে। মাত্র তিন মাসের কিছু বেশি সময়ের চেলসি ক্যারিয়ারে টুখেলের অর্জনের তালিকায় সবশেষ সংযোজন- রিয়ালকে বিদায় করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের টিকিট পাওয়া।
এই দুরন্ত পথচলায় টুখেলের কাছ থেকে নিস্তার পাননি বর্তমান সময় ও ইতিহাসের সেরা কোচরা। ম্যানচেস্টার সিটির পেপ গার্দিওলা, টটেনহ্যাম হটস্পারের জোসে মরিনহো, এভারটনের কার্লো অ্যানচেলত্তি, লিভারপুলের ইয়ুর্গেন ক্লপ, অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের দিয়েগো সিমিওনে- সবাইকেই মুখোমুখি দেখায় হারিয়েছেন তিনি। বাকি ছিলেন জিনেদিন জিদান। বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে তাকেও হারের তিক্ত স্বাদ উপহার (!) দিয়েছেন টুখেল।
একচ্ছত্র আধিপত্য দেখিয়ে ঘরের মাঠ স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে দ্বিতীয় লেগে ২-০ গোলে জিতেছে চেলসি। আগের দেখায় রিয়ালের মাঠে ১-১ ড্র করেছিল তারা। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে ফাইনালে উঠেছে ইংলিশ ক্লাবটি। প্রথমার্ধে জার্মান ফরোয়ার্ড টিমো ভার্নারের গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। দ্বিতীয়ার্ধের শেষদিকে ব্যবধান বাড়ান ইংলিশ উইঙ্গার ম্যাসন মাউন্ট।
টুখেলের ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া চেলসি তার অধীনে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে খেলেছে ২৪ ম্যাচ। ১৬ জয়ের সঙ্গে তারা হেরেছে মাত্র দুটিতে। ড্র করেছে বাকি ছয়টি। এসময়ে ৩২ গোল করলেও দলটি হজম করেছে মোটে ১০ গোল। রক্ষণ জমাট রাখার পাশাপাশি পাল্টা আক্রমণ নির্ভর কৌশল বেছে নিয়ে সাফল্য পাচ্ছে তারা।
চেলসির দায়িত্ব যখন টুখেল নেন, তখন প্রিমিয়ার লিগে নয় নম্বরে ছিল চেলসি। চলতি মৌসুমে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে যোগ দেওয়া কাই হাভার্টজ, টিমো ভার্নাররা নিজেদের হারিয়ে খুঁজছিলেন। এই কয়েক মাসে তারা যেমন ছন্দে ফিরে এসেছেন, তেমনি এনগোলো কান্তে-জর্জিনহোর মতো পরীক্ষিত সৈনিকরা নিংড়ে দিচ্ছেন নিজের সেরাটা। টুখেলের ৩-৪-৩ কিংবা ৩-৪-২-১ ফরমেশনের সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছেন তারা।
নিজের কৌশলে আস্থা রাখার পাশাপাশি শিষ্যদের কৃতিত্ব দিয়ে টুখেল ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমি মনে করি না যে, কেবল আমিই (সবকিছু করেছি)। আমি আমার ভূমিকা পালন করেছি। তবে আমরা এখন যা দেখছি, তা খেলোয়াড়রা করেছে। আমাদের নিয়ে অনেকের অনেক প্রশ্ন ছিল। আমরা সেসবের জবাব দিয়েছি।’
মধুর সময় পার করতে থাকা টুখেল অনন্য এক কীর্তিও গড়েছেন। ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব আসরের ইতিহাসে প্রথম কোচ হিসেবে পরপর দুই মৌসুমে দুটি ভিন্ন ক্লাবকে শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে তুলেছেন তিনি। গতবার তার অধীনে ফরাসি ক্লাব পিএসজি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠলেও বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরেছিল ১-০ গোলে। এবার তাকে অতিক্রম করতে হবে ম্যানচেস্টার সিটি নামক বাধা।
২০১১-১২ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছিল চেলসি। নয় বছর পর ফের তাদেরকে সেরার মুকুট পাইয়ে দেবেন টুখেল? উত্তর জানতে অপেক্ষায় থাকতে হবে আগামী ২৯ মে পর্যন্ত। সেদিন তুরস্কের ইস্তানবুলে হবে ফাইনাল।
Comments