শ্রমিক থেকে বিধায়ক, মাটির ঘর থেকে বিধানসভায়

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে আট দফায় ভোট গ্রহণ শেষে গত ২ মে ফল ঘোষণা করা হয়। ফল ঘোষণার পর থেকেই আলোচনায় আছেন দিনমজুরের স্ত্রী চন্দনা বাউরি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কারণ, খুব সাধারণ ঘরের এই নারী এবারের বিধানসভা নির্বাচনে চমক দেখিয়েছেন। পিছিয়ে পড়া মানুষের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন এক অনুপ্রেরণার নাম।
নির্বাচনী প্রচারণায় চন্দনা বাউরি। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে আট দফায় ভোট গ্রহণ শেষে গত ২ মে ফল ঘোষণা করা হয়। ফল ঘোষণার পর থেকেই আলোচনায় আছেন দিনমজুরের স্ত্রী চন্দনা বাউরি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কারণ, খুব সাধারণ ঘরের এই নারী এবারের বিধানসভা নির্বাচনে চমক দেখিয়েছেন। পিছিয়ে পড়া মানুষের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন এক অনুপ্রেরণার নাম।

নিজের পরিবারের সঙ্গে চন্দনা বেউরি। ছবি: সংগৃহীত

চন্দনা বাউরি পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়ার সালতোরা আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং তিনি নির্বাচিত হন। তবে, তাকে নিয়ে আলোচনার মূল কারণ হলো- নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তার নিজের অ্যাকাউন্টে ছিল ছয় হাজার ৩৩৫ টাকা। তিনি বসবাস করেন মাটির ঘরে এবং তার বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগও নেই।

নির্বাচনে চন্দনা চার হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন তৃণমূলের সন্তোষ কুমার মণ্ডলকে।

ভারতের কেন্দ্র ক্ষমতায় থাকা ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অনেক হাই-প্রোফাইল নেতা পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে হেরেছেন। পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে বিজেপি যে স্বপ্ন দেখেছিল তার যবনিকাপাত হয় এসব প্রার্থীদের পরাজয়ে। তবে, ব্যতিক্রমী ছিলেন চন্দনা বাউরি। খুব সাধারণ পরিবারের এই নারী সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে এক বিজয় অর্জন করেছেন।

নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী, ৩০ বছর বয়সী চন্দনার সব ধরণের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মূল্য ৩১ হাজার ৯৮৫ টাকা। আর, তার স্বামীর সম্পদের মূল্য মাত্র ৩০ হাজার ৩১১ টাকা। তিন সন্তানের জননী চন্দনার পরিবারে তিনটি গরু ও তিনটি ছাগল আছে। তার স্বামী শরবন বাউরির নিয়মিত আয়ের কোনো উৎস নেই। তাদের নিজেদের কোনো কৃষিজমিও নেই।

গত বছরের নভেম্বরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নির্বাচনী প্রচারণার সময় বাঁকুড়ার চতুরডিহি গ্রামে চন্দনার বাড়িতে দুপুরে খেতে আসেন। তখন থেকেই আলোচনায় আসে এই পরিবারটি। চন্দনার বাড়িতে অমিত শাহসহ ও অন্যান্য বিজেপি নেতাদের কলাপাতায় ভাত, রুটি, ডাল, পটল ভাজা, শুক্ত, আলু-পোস্ত ও পাঁপড় দিয়ে দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হয়। এর সঙ্গে আরও ছিল বাংলার বিখ্যাত রসগোল্লা, সন্দেশ ও দই।

কিন্তু, সেদিন দুপুরেও চন্দনা বাউরি জানতেন না তার জন্য কত বড় চমক অপেক্ষা করছিল। বিজেপি যে তাকে বিধানসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেবে তা অজানা ছিল সবার।

আর যখন তিনি মনোনয়ন পেলেন, সেই খবরটাও জেনেছিলেন এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে।

বাঁকুড়া জেলায় একটি নির্বাচনী সভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও চন্দনার নাম উচ্চারণ করে তাকে ভোট দিতে ভোটারদের কাছে অনুরোধ করেছিলেন। সেদিন দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা চন্দনাকে ‘বাংলার আশা’ বলে অভিহিত করেছিলেন মোদি।

বিজেপি যখন তাকে মনোনয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তার নির্বাচনী এলাকার অনেকেই তখনো তার নাম শোনেনি কিংবা জানত না।

চন্দনার বিধানসভা জয়ের গল্পটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পৌঁছে গেছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে। টুইটার, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ভরে গেছে অভিনন্দনবার্তায়। চন্দনার এ বিজয় যেন সাধারণ মানুষের জন্য এক অনুপ্রেরণা।

Comments

The Daily Star  | English
Deadline for tax return filing extended by two months

Deadline for tax return filing extended by two months

The National Board of Revenue (NBR) extended the deadline today for the submission of income tax returns for individual taxpayers by two months to the end of January next year, according to an order issued today.

2h ago