স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই, মাইক্রোবাসে গাদাগাদি করেই দূরপাল্লার যাত্রা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে যেখানে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ আছে, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মাইক্রোবাসে গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে।
Narayanganj.jpg
সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পাশে কাউন্টার বসিয়ে মাইক্রোবাসে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। ছবি: স্টার

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে যেখানে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ আছে, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মাইক্রোবাসে গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে।

দুই থেকে তিনগুণ ভাড়ায় মাইক্রোবাসে চড়ে বসা এসব দূরপাল্লার যাত্রীদের অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বালাই ছিল না টিকিট বিক্রেতাদের মধ্যেও। একেকটি মাইক্রোবাসে ১০টি আসনের বিপরীতে অন্তত দুই জন করে অতিরিক্ত যাত্রী চোখে পড়েছে।

ঈদকে সামনে রেখে আজ শুক্রবার ছুটির সকালে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সাইনবোর্ড ও শিমরাইল মোড় এলাকায় ছিল ঘরমুখী যাত্রীদের ভিড়।

সাইনবোর্ড মোড়ে দেখা যায়, শ্যামলী পরিবহন, তিশা পরিবহন ও সেন্টমার্টিন প্লাস পরিবহনের যাত্রী ছাউনিতে টিকিট কাউন্টার বসিয়ে ডেকে ডেকে মাইক্রোবাসে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে মাইক্রোবাসগুলো ছুটে যাচ্ছে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে। তবে, শিমরাইল মোড়ে কোনো টিকিট কাউন্টার চোখে পড়েনি।

করোনা সংক্রমণ রোধে গত বুধবার চলমান বিধিনিষেধ ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে একই জেলার মধ্যে গণপরিবহন চালু করার কথা বলা হলেও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ঈদের ছুটিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবশ্যিকভাবে নিজ নিজ কর্মস্থলে (অধিক্ষেত্র) অবস্থানের নির্দেশনাও আসে।

করোনার বিস্তার ঠেকাতে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পবিত্র ঈদুল ফিতর নিজ নিজ অবস্থানে থেকেই উদযাপন করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।  

সকালে সাইনবোর্ড মোড় এলাকায় কথা হয় চট্টগ্রামের যাত্রী জালাল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জানি সরকারের নিষেধাজ্ঞা আছে। করোনার ভয়ও আছে। তারপরও বাড়ি যেতে হবে। কারণ, গত বছর দুই ঈদে বাড়ি যাওয়া হয়নি।’

জালাল মিয়া জানান, নন-এসি চেয়ারকোচে এখান থেকে চট্টগ্রামের ভাড়া ৪০০ টাকা। তিনি মাইক্রোবাসে যাচ্ছেন এক হাজার টাকার খরচ করে।

এখানেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মাইক্রোবাসে চড়ার অপেক্ষায় ছিলেন আশরাফ উদ্দিন নামের আরেক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘বাবা-মাকে দেখি না ছয় মাস হয়ে গেল। মাকে ছাড়া ঈদ কল্পনাই করা যায় না। বাবাও অসুস্থ। তাই ঝুঁকি নিয়ে হলেও যাচ্ছি।’

এসময় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মাইক্রোবাসের কাউন্টারে টিকিট বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তারা রাজি হননি।

Narayanganj-2.jpg
মাইক্রোবাস কাউন্টারে যাত্রীদের ভিড়। ছবি: স্টার

তবে, যাত্রীদের ডেকে ডেকে টিকিট কাউন্টারে আনতে থাকা মহসিন মিয়া জানান, মাইক্রোবাসগুলো এখান থেকে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের যাত্রীদের কাছ ভাড়া রাখা হচ্ছে এক হাজার টাকা করে। কুমিল্লার ভাড়া ৫০০ টাকা। চাঁদপুরের ভাড়া ৮০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে।

মহসিন মিয়ার কাছ থেকে আরও জানা যায়, মাইক্রোবাসগুলো চালাচ্ছেন কাউন্টারের লোকেরাই। পুলিশ আসলে গাড়ি রেখে সবাই সটকে পড়েন। প্রতি যাত্রী ডেকে আনার জন্য মহসিন মিয়া পান ২০ টাকা করে।

সাইনবোর্ড মোড়ে কর্তব্যরত নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) শাহ আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মাইক্রোবাসে যাত্রী পরিবহন ঠেকাতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১০টি মাইক্রোবাসকে আটক করে মামলা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেককে ৩ হাজার করে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’

কয়েক দফা কাউন্টারের টেবিল উল্টে ফেলে যাত্রী সরিয়ে দিয়েও লাভ হয়নি বলে মন্তব্য করেন শাহ আলম। তিনি বলেন, ‘সাইনবোর্ড একটা গুরুত্বপূর্ণ মোড়। অথচ আমরা এখানে আছি মাত্র পাঁচ জন। যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে অন্যদিকে চলে গেলে আবার কাউন্টারের লোকজন বসে যাচ্ছে। এ ছাড়া, অনেক যাত্রী অনুরোধ করে যে, বাড়িতে মা-বাবা অসুস্থ। সেক্ষেত্রে কিছু গাড়ি আটকও করা যায় না।’

শিমরাইল মোড় এলাকায় দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পরিদর্শক আবদুল করিম বলেন, ‘লকডাউনের শর্ত ভাঙার কারণে সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ১৫টি গাড়ি আটক করে মামলা দেওয়া হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা।’

Comments

The Daily Star  | English

Former lawmakers Asaduzzaman Noor, Mahbub Ali arrested

DB arrested Asaduzzaman Noor at 11:00pm from Nawratan colony on Bailey Road, while, Mahbub Ali was arrested from Segunbagicha area

8h ago