স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর বিক্রি বেড়েছে

মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে পালস অক্সিমিটার, ফেসমাস্ক, গ্লাভস ও স্যানিটাইজারের মতো স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর বিক্রি বেড়েছে কয়েক গুণ। এই সুযোগে অনেক ব্যবসায়ী এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

দেশের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা সামগ্রীর বাজার রাজধানীর মিটফোর্ড ও তোপখানা রোডের বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবন মার্কেটসহ আরও কিছু এলাকা ঘুরে দ্য ডেইলি স্টার প্রতিনিধি এই চিত্র দেখেছেন।

আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতারা জানান, পালস অক্সিমিটার, ফেসমাস্ক, গ্লাভস ও স্যানিটাইজারের বিক্রি আগের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেড়ে গেছে। গত মার্চে পোর্টেবল অক্সিজেন ক্যান ও পোর্টেবল ভেন্টিলেটরের বিক্রি কিছুটা বাড়ে। তবে, এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর থেকে এগুলোর বিক্রি আবারও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।

পালস অক্সিমিটার বিক্রির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দামের পার্থক্য দেখা গেছে। মূলত ব্র্যান্ড ও পরিমাণের ওপর নির্ভর করে বাজারে বিভিন্ন দামের পালস অক্সিমিটার পাওয়া যায়। পাইকারি দামে ৩০০ টাকা থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা এবং খুচরা এক হাজার ৮৫০ টাকা থেকে চার হাজার ৪০০ টাকা দামে অক্সিমিটার বিক্রি হচ্ছে।

মিটফোর্ড রোডের সাদ গোল্ডেন টাওয়ারের চিকিৎসা সামগ্রীর পাইকারি বিক্রয় প্রতিষ্ঠান হেলথ ওয়ের ব্যবস্থাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মার্চ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে করোনা সম্পর্কিত অনেক পণ্যের বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গিয়েছিল। তবে, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এরই মধ্যে কিছু পণ্যের বিক্রি কমেও গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু পণ্যের বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে এবং দিনদিন বাড়ছেই। বর্তমানে বাজারে স্বাস্থ্যসেবা উপকরণের কোনো সংকট নেই। তবে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে সংকট তৈরি হতে পারে।’

গত বছর যেভাবে দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছিল তাতে জুন-জুলাইয়ের দিকে গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি হয়। চলতি বছরের মার্চে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, তবে এবারের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।

ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই), অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর, স্টিমার, জুতার কাভার, ফেস শিল্ড, মপ ক্যাপ, হ্যান্ড গ্লাভস, গগলস ও ইয়ার প্লাগের বিক্রি ১০ শতাংশ কমে গেছে।

মিটফোর্ডের ডায়মন্ড সার্জিক্যালের সত্ত্বাধিকারী সাঈদুর রহমান বলেন, ‘বাজারে পালস অক্সিমিটার, ফেসমাস্ক, গ্লাভস ও স্যানিটাইজারের চাহিদা থাকলেও অন্যান্য পণ্যের চাহিদা খুব কম। কিছু পণ্যের দামও আগের তুলনায় কমে গেছে। ওইসব পণ্যে আমি লাভ না থাকলেও বিক্রি করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নেবুলাইজার তেমন বিক্রি হচ্ছে না। স্টিমারের চাহিদা মার্চে বেড়ে গেলেও, এখন তা খুব কম।’

বিএমএ ভবনে চিকিৎসা উপকরণ পাইকারি ও খুচরা—দুভাবেই বিক্রি করা হয়। এখানকার আমদানিকারক ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান মেডিটেক-এর মালিক আশরাফ হোসেন বলেন, ‘বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের করোনা সুরক্ষা পণ্য আছে। ভারতের কোভিড সংকট দেখে মানুষ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সতর্ক।’

আবার অনেক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, অনেকের মধ্যে করোনাভীতি কমে যাওয়ার কারণেও কিছু পণ্যের বিক্রি কমে গেছে। তবে, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের ওষুধ ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে পালস অক্সিমিটার, মাস্ক ও জীবাণুনাশকের বিক্রি বাড়লেও অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকরণের বিক্রি কমেছে।

লাজ ফার্মার অনলাইন-ইনচার্জ হাসান রাজু বলেন, ‘কিছু পণ্যের দাম একটু বেড়ে গিয়েছিল। তবে এখন করোনা সম্পর্কিত অনেক পণ্যের বিক্রিই কম।’

দেশে যখন প্রথম করোনা সংক্রমণ শুরু হয়, তখন মানুষ আতঙ্কিত হয়ে অস্বাভাবিক রকম বেশি স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণ কিনতে শুরু করেছিল। ফলে ওই সময় এসব পণ্যের দাম লাগামছাড়া হয়ে যায়।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপমেন্ট ডিলারস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা জেলার সভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, ‘কোভিড স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্যের ব্যবসা আগের চেয়ে ৭৫ শতাংশ কমেছে। চলতি বছরের মার্চ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ ব্যবসা ভালো চলেছে। এরপর থেকে কমতে শুরু করে। তবে, গ্লাভস, মাস্ক, পালস অক্সিমিটার ও স্যানিটাইজারের বিক্রি যথেষ্ট ভালো।’

তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল অক্সিজেন সিলিন্ডারের। আমরা ছয় হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৬ হাজার টাকায়ও অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করেছি। আর এখন পুরো সেট (একটি সিলিন্ডার ও আনুষঙ্গিক উপকরণ) ১০ হাজার টাকাতেই পাওয়া যায়।’

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

BGMEA wants 3-month window from India to clear pending shipments

The association urges the interim government to send a letter to India seeking the opportunity

3h ago