ডেঙ্গু ঝুঁকিতে ঢাকার ৪ এলাকা

ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতির কারণে রাজধানীর চার এলাকায় ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ চারটি এলাকা হলো- ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) লালমাটিয়া ও ইকবাল রোড এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সায়েদাবাদ ও উত্তর যাত্রাবাড়ী।

গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) এক জরিপের ফলাফলে এ তথ্য উঠে এসেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় জরিপটি পরিচালিত হয়। গত ২৯ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত দুই সিটি করপোরেশনের ৬৯টি ওয়ার্ডের ৭০টি স্থানে এ জরিপ চালানো হয়।

জরিপে সবচেয়ে বেশি এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে নির্মাণাধীন ভবনের মেঝেতে জমে থাকা পানিতে। লার্ভার ২০ দশমিক ২২ শতাংশের উপস্থিতিই এখানে। এ ছাড়া, প্লাস্টিকের ড্রামে ১৯ দশমিক ১০ শতাংশ, বালতিতে ১১ দশমিক ২৪ শতাংশ, পানির ট্যাংকে সাত দশমিক ৮৭ শতাংশ, পানির মিটারের গর্তে ছয় দশমিক ৭৪ শতাংশ, ফুলের টব ও ট্রেতে দুই দশমিক ২৫ শতাংশ, প্লাস্টিকের বোতলে চার দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং লিফটের গর্তে তিন দশমিক ৩৭ শতাংশ লার্ভা পাওয়া গেছে।

জরিপে বহুতল ভবনগুলোতে সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ৮২ শতাংশ লার্ভা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে ৩৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ, একক বাড়িতে ১৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং বস্তি এলাকায় পাঁচ দশমিক ৬২ শতাংশ লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

কীট বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি মঞ্জুর চৌধুরী জানান, এপ্রিল ও মে’র প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় পাঁচ থেকে ছয় বার বৃষ্টি হয়েছে। এ বৃষ্টির কারণে এডিস মশার প্রজননের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে।  

তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান বিধি-নিষেধের কারণে ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রেও বাধা তৈরি হচ্ছে। স্কুল ও কলেজ থেকে ডেঙ্গু বেশি ছড়ায় এবং তরুণ প্রজন্ম এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া, দেশজুড়ে মানুষের চলাচলের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

এরপরও ডেঙ্গুর ঝুঁকি রয়েছে এবং এর বিস্তার রোধে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানান মঞ্জুর চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যে ডেঙ্গু ছড়াতে শুরু করলে তা আমাদের জন্য অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। কর্তৃপক্ষকে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিত্যক্ত পাত্র, ট্রের মতো মশার প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট করা এবং সপ্তাহে একদিন ফুলের টব, ট্যাংক ও ড্রাম পরিষ্কার করতে হবে।’

এ ছাড়া, মশা নিধন অভিযানের অংশ হিসেবে বাস স্টপ, হাসপাতাল ও পুলিশের জব্দ করা যানবাহনগুলো পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে মনোযোগ দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন মঞ্জুর চৌধুরী। মহামারির কারণে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানোরও পরামর্শ দেন তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীট বিশেষজ্ঞ কবিরুল বাশার জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু পাওয়া যায়নি। এরপরও, ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। যদি দুই সিটি করপোরেশন এবং জনসাধারণ সচেতন হয়ে মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করে, তবে বৃষ্টি হলেও মশা বাড়বে না।

তবে, এখন থেকেই সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এডিস মশা বেড়ে যাবে বলে সতর্ক করে দেন কবিরুল বাশার। 

তিনি বলেন, ‘এখন থেকেই সচেতনতা তৈরির কাজ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পাবলিক প্লেসের প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করার এবং বাড়ির মালিককে বাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম জানান, এডিস মশার লার্ভার খোঁজে তারা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘গত বছরের অভিযানে যেসব বাড়ি শনাক্ত করা হয়েছিল, সেগুলোর মালিকদের মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠিয়ে এডিস মশার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলছি আমরা।’

মেয়র জানান, তারা এডিস মশার হটস্পট খুঁজে বের করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। ডিএনসিসিতে মশা নিয়ন্ত্রণ পরিদর্শকের সংকট ছিল। তবে ইতোমধ্যেই ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডের জন্য ৫৪ জন পরিদর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং তারা এখন মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন।

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডিএনসিসিতে দুজন কীট বিশেষজ্ঞ আছেন। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কীট বিশেষজ্ঞরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ জন্য আমরা আরও ১০ জন কীট বিশেষজ্ঞ চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি।’

এ ক্ষেত্রে সচেতনতা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এ বছর মহামারির কারণে তারা সচেতনতা বিষয়ক প্রচারাভিযান চালাতে পারছেন না। তবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মীর মুস্তাফিজুর রহমান জানান, তারা বর্তমানে তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এডিস মশা নিধন অভিযান চালাচ্ছেন। ‘লকডাউনের’ মধ্যেও জোন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কাজ অব্যাহত রেখেছেন তারা।

মুস্তাফিজুর রহমান আরও জানান, গত সোমবার ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

3h ago