প্লাস্টিক বর্জ্যে অবরুদ্ধ ঢাকা
প্রতিনিয়ত দূষণের ফলে পৃথিবীর যখন দম বন্ধ অবস্থা এবং বিষয়টি পুরোদস্তুর সংকটে পরিণত হওয়ার আগে বিশ্বনেতা এবং বিশেষজ্ঞরা বসেছেন জলবায়ু সংকট সামাল দিতে, তখন ঢাকায় প্রতিদিন ৬৪৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয় এমনটি জানতে পারা প্রচণ্ড হতাশার। আরো হতাশাজনক বিষয় হলো, এই পরিমাণটি দেড় দশক আগের চেয়ে ৪৬৮টন বেশি। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে দূষণ হ্রাসে টেকসই পরিকল্পনার কথা বলা হলেও প্লাস্টিক বর্জ্যের এই লাগামহীন উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে।
আমাদের পরিবেশ, বিশেষত আমাদের নদীগুলোকে এই দূষণের জন্য কতটা মুল্য দিতে হচ্ছে তা খুঁজে পেতে খুব একটা কষ্ট হয় না। গেল মার্চে, কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিংয়ের খরচ ৪৯ কোটি টাকা (১৯ শতাংশ) বেড়েছে, কারণ নদীগর্ভ থেকে প্লাস্টিকের বর্জ্যের একটি পুরু স্তর সরাতে হয়েছে শ্রমিকদের। কয়েক মাস আগে, প্রচুর পরিমাণে পলিথিন, প্লাস্টিক এবং অন্যান্য বর্জ্যের কারণে বরিশাল নদী বন্দর থেকে পলি অপসারণের জন্য ড্রেজিংয়ের কাজে অনেক বেশি সময় লেগেছে। বস্তা ভর্তি প্লাস্টিক কীভাবে বুড়িগঙ্গা নদীকে শেষ করে দিচ্ছে তা নিয়ে আমরা বছরের পর বছর ধরে লিখছি। এগুলো শুধু নদীকেই নষ্ট করছে তা নয় সমুদ্রের প্রাণীরাও এজন্য মারা যাচ্ছে।
টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদি আমরা পণ্যের উৎপাদন ও এর ব্যবহারে দায়বদ্ধ না থাকি তাহলে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে আমরা কিছুই করতে পারবো না। সম্প্রতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্লাস্টিক সার্কুলারিটি ইনোভেশন চ্যালেঞ্জে অংশ নিয়ে প্লাস্টিক সংগ্রহ, বাছাই, পুনর্ব্যবহার এবং প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে সরকারকে এ জাতীয় উদ্ভাবনের জন্য আরও প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে, তরুণ প্রজন্মের ভাবনাকে বিবেচনায় নিতে হবে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দূষণ রোধের একটি বড় উপায় হলেও দূষণকারী শিল্প ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষ দূষণ কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে না।
Comments