করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এভিয়েশন সেক্টরে ‘কফিনের শেষ পেরেক’: শীর্ষ এয়ারলাইনস কর্মকর্তা

করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ে যে লোকসান হয়েছে সেটি সামাল দিয়ে ওঠার আগেই বিমান পরিবহন খাতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউকে ‘কফিনের শেষ পেরেক’ বলে মন্তব্য করেছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞ ও দেশের তিনটি এয়ারলাইনসের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
আজ শনিবার এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্টস ফোরাম আয়োজিত ‘বাংলাদেশ এভিয়েশন সেক্টর অ্যামিড প্যান্ডেমিক: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে আউট’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তারা এই কথা বলেন।
তারা জানান, এ পর্যন্ত ১০টি বেসরকারি এয়ারলাইনস বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মাত্র দুটি বেসরকারি এয়ারলাইনস ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউকে এভিয়েশন সেক্টরের ‘কফিনের শেষ পেরেক’ উল্লেখ করে নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান জানান, সরকারের উচিত কিছু সময়ের জন্য হলেও বিভিন্ন অ্যারোনটিকাল, নন-অ্যারোনটিকাল ও অন্যান্য চার্জ মওকুফ করা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের আরোপ করা বিভিন্ন অ্যারোনটিকাল, নন-অ্যারোনটিকাল বা এর বাইরের অন্যান্য চার্জ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। এয়ারলাইন্সের করুণ অবস্থার পেছনে বিমানের জন্য প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে দেরি ও শুল্ক সংক্রান্ত সমস্যাসহ আরও বেশ কয়েকটি বাধা দায়ী।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট এক বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থগিত থাকলেও তারা বিভিন্ন চার্জ হিসেবে সিএএবির কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করে যাচ্ছে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস আন্তর্জাতিক রুটে ৭০ শতাংশের বেশি ও অভ্যন্তরীণ রুটে ৫৪ শতাংশ সক্ষমতা হারিয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় বিমান সংস্থাগুলো খুবই করুণ অবস্থায় আছে। কোভিড -১৯ এর আগে আমাদের প্রতিদিন ৩৬টি ফ্লাইট চলত। কোভিড-১৯ এর কারণে এখন সংখ্যাটি ১৮ তে নেমে এসেছে। অ্যারোনটিক্যাল চার্জ হিসেবে সাত থেকে আট কোটি টাকা দিতে হবে, যা একটি বড় বোঝা।’
এ খাতের বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘সরকারের নীতি সহায়তা ছাড়া দেশের এয়ারলাইনসগুলোর টিকে থাকা কঠিন হবে।’
করোনার প্রভাবে অনেক বড় বড় এয়ারলাইনস দেউলিয়া হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদি সরকার জ্বালানির দাম, অ্যারোনটিকাল ও এর বাইরের চার্জের সামঞ্জস্য না করে, তবে আমাদের বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোও টিকতে পারবে না।’
বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোস্তফা কামাল জানান, বিমান ৪৩ শতাংশ সক্ষমতা হারিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা তিনটি নতুন উড়োজাহাজ কিনেছি। অথচ পাঁচটি উড়োজাহাজ অলস পড়ে রয়েছে। এদিকে, এগুলোর জন্য ঠিকই ঋণের পাশাপাশি প্রতি ঘণ্টায় রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।’
কোভিড-১৯ এর কারণে বর্তমানে উড়োজাহাজ চলাচল খাত খুব খারাপ সময় পার করছে বলে জানিয়েছেন সামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।
তিনি বলেন, ‘সরকারকে অবশ্যই বিমান সংস্থাগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের টিকে থাকার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তা করতে হবে।’
সামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন বলেন, এমন পরিস্থিতিতে এভিয়েশন খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে সরকার প্রণোদনাসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানান, বিভিন্ন চার্জ কমাতে তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
Comments