বার্সেলোনা-অ্যাতলেতিকো ম্যাচ ড্র, সুবিধা রিয়ালের
ম্যাচের ৮৫তম মিনিটে যে সুযোগটা নষ্ট করলেন উসমান দেম্বেলে, তাতে যেন বার্সেলোনার শিরোপা স্বপ্নটাই শেষ করে দিলেন এ ফরাসি তরুণ। অন্যদিকে প্রথমার্ধে প্রায় একচ্ছত্র ফুটবল খেলেও গোল করতে ব্যর্থ হয় অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদও। তাতে লিগ নির্ধারণী এ গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে জিতেনি কেউই। দুই দলের মহারণ ড্র হওয়ায় সুবিধাটা অবশ্য পেল দুই দলেরই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ।
শনিবার ক্যাম্প ন্যুয়ে অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের সঙ্গে বার্সেলোনার ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়।
মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি জিতলে লা লিগা শিরোপা জয়ের অনেক কাছে চলে যেত অ্যাতলেতিকো। অন্যদিকে বার্সা জিতলে লড়াইয়ে টিকে থাকতো দারুণভাবে। রিয়াল মাদ্রিদের প্রত্যাশা ছিল ম্যাচটি যেন ড্র হয়। সেক্ষেত্রে লিগ শিরোপা ধরে রাখার সুযোগটা বাড়বে তাদের। ব্যবধানে অ্যাতলেতিকোর চেয়ে ৩ পয়েন্ট কম থাকলেও সেভিয়ার বিপক্ষে জয় পেলেই তাদের ছুঁয়ে ফেলবে তারা। আর হেড টু হেডে এগিয়ে থাকায় এগিয়ে থাকবে তারাই।
অন্যদিকে এ ড্রয়ে বড় ক্ষতি হয়ে গেল বার্সেলোনার। পয়েন্টের ব্যবধান বাড়ার পাশাপাশি রিয়াল ও অ্যাতলেতিকো দুই দলের সঙ্গে হেড টু হেডে পিছিয়ে পড়ল দলটি।
অথচ চলতি মৌসুমের আগে অ্যাতলেতিকোর বিপক্ষে বার্সেলোনার রেকর্ডটা ছিল খুবই ভালো। মৌসুমের আগে খেলা শেষ ২০ ম্যাচে একটিও হারেনি তারা। অন্যদিকে এ মৌসুমের প্রথম লেগের ম্যাচ হারের পর এবার ড্র করে দলটি।
প্রথমার্ধে তো এদিন খুজেও পাওয়া জানি বার্সেলোনাকে। এ অর্ধে মাত্র দুটি শট করতে পারে তারা। তাও একটি ছিল হাঁফচান্স। অপরটি মেসির একক নৈপুণ্য। বার্সা গোলরক্ষক মার্ক-আন্ড্রেস টের স্টেগেন বাঁধা হয়ে না দাঁড়ালে কিংবা অ্যাতলেতিকোর ফরোয়ার্ড আরেকটু কুশলী হলে একাধিক গোলই পেতে পারতো অথিতিরা।
এদিন ম্যাচের ১৩তম মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন অ্যাতলেতিকোর থমাস লেমার। তার বদলী হিসেবে মাঠে নামেন সাউল। ছয় মিনিট পর গোল করার মতো একটি নিশ্চিত সুযোগও তৈরি করেছিলেন এ মিডফিল্ডার। বাঁ প্রান্ত থেকে তার কাটব্যাক থেকে ভালো শট নিয়েছিলেন দানি কোরেয়াও। ছোট ডি-বক্সে দারুণ এক ট্যাকেল কর্নারের বিনিময়ে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন ক্লেমো লংলে।
২৯তম মিনিটে অ্যাতলেতিকো প্রথম কোনো শট নিতে পারে বার্সা। তাও দূর থেকে শট নিয়ে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন আতোঁয়ান গ্রিজমান। দুই মিনিট পর বড় ধাক্কা খায় বার্সেলোনা। চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার সের্জিও বুসকেতস। আর তাতেই যেন মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ হারায় দলটি। একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে অতিথিরা। পরের ১০ মিনিটে গোল করার মতো ৫টি সহজ হাতছাড়া করে দলটি।
৩৩তম কোরেস্কার ক্রস থেকে দারুণ শট নিয়েছিলেন লোরেন্তো। দারুণ দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে সে প্রচেষ্টা রুখে দেন বার্সা গোলরক্ষক টের স্টেগেন। পরের মিনিটে দুরূহ কোণ থেকে দারুণ এক শট নেন সুয়ারেজ। এবারও অতিথিদের হতাশ করেন বার্সা গোলরক্ষক। ৩৭তম মিনিটে আবারও দুর্দান্ত স্টেগেন। এবার কোরেস্কার শট রুখে দেন তিনি।
চার মিনিট পর প্রথমার্ধের একমাত্র সুযোগটি পায় বার্সা। তাও মেসির অসাধারণ নৈপুণ্যে। মাঝ মাঠ থেকে ছয় খেলোয়াড়কে কাটিয়ে দারুণ এক শট নিয়েছিলেন বার্সা অধিনায়ক। তবে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ দক্ষতায় তা কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান গোলরক্ষক জন ওবলাক। ৪২তম মিনিটে ভালো সুযোগ পেয়েছিল সফরকারীরা। দারুণ দক্ষতায় চার বার্সা খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিলেন কোরেস্কা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণ হারান তিনি। দুই মিনিট পর দিনের সেরা সুযোগটি হাতছাড়া করে তারা। একেবারে ফাঁকায় বল পেয়েও লক্ষ্যে শট নিতে পারেননি ফিলিপি।
প্রথমার্ধে খোলসে থাকলে বিরতির পর যেন বদলে যায় বার্সা। বেশ গোছানো ফুটবল উপহার দিয়ে শুরুতেই গোলের দারুণ সুযোগ তৈরি করে তারা। ৪৭তম মিনিটে মেসির নেওয়া ফ্রিকিক থেকে ফাঁকায় হেড দেওয়ার সুযোগ ছিল লংলের। তবে লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। পরের মিনিটে মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার ভালো শট নিয়েছিলেন সুয়ারেজ। তবে অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি।
৬২তম মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল বার্সা। আলবার কাটব্যাক থেকে বদলী খেলোয়াড় ইলাইশ মোরিবার শট এক অ্যাতলেতিকোর খেলোয়াড়ের গায়ে লাগে কর্নার হলে সে যাত্রা বেঁচে যায় অতিথিরা। পরের মিনিটেও সুযোগ ছিল স্বাগতিকদের। মেসির ক্রস থেকে ভালো হেড নিয়েছিলেন পিকে। তবে তারচেয়ে দারুণ দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে তা ঠেকিয়ে দেন অ্যাটলেটিকো গোলরক্ষক ওবলাক। ৬৭তম মিনিটে মেসির নেওয়া ফ্রিকিকও ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান এ গোলরক্ষক।
ম্যাচের ৮৫তম মিনিটে বার্সার হয়ে দিনের সুযোগটা নষ্ট করেন উসমান দেম্বেলে। বাঁ প্রান্ত থেকে আলবার ক্রসে একেবারে ফাঁকায় থেকে হেড নেওয়ার সুযোগ পান তিনি। সময়ও পেয়েছিলেন। কিন্তু লক্ষ্যেই রাখতে পারেননি এ ফরাসি তরুণ। ৯০তম মিনিটে মেসির ফ্রিকিক প্রায় বারপোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে হতাশ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় স্বাগতিকদের।
Comments