সমালোচনাকারীদের পরিসংখ্যান দেখতে বলব: তামিম
সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজের পারফরম্যান্স, নিজের ব্যাটিং, খেলার ধরণ এবং দলের অবস্থা নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সীমিত সংস্করণে তার স্ট্রাইকরেট নিয়ে প্রশ্ন তোলা সমালোচনাকারীদেরও জবাব দিয়েছেন তিনি।
শট খেলার প্রবণতা কি শুধু টেস্টের জন্যই নাকি অন্য ফরম্যাটেও সেটা দেখা যাবে?
তামিম ইকবাল: কোন ফরম্যাট সেটা বিষয় না আমি সব সময় শট খেলতে পছন্দ করি। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে আপনি যখন শট খেলবেন সেটা একটা ভেল্যু তৈরি করে কারণ ফিল্ডিং পজিশনের কারণে অনেক গ্যাপ থাকে। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে বৃত্তের মধ্যে অনেক খেলোয়াড় থাকে। সাধারণত আমার মনোভাব একই থাকে কিন্তু একই সঙ্গে বুঝতে হয় কোন ফরম্যাট আপনি খেলছেন।
সাধারণত আমি এটা বিচার করে পিচের আচরণ কেমন তার উপর। যখন দেখি উইকেটে ঘাস বা মুভমেন্ট আছে আমি আক্রমণ করার চেষ্টা করি। আমি জানি একটা ভাল বল ব্যাটসম্যান আউট হতে পারে। কাজেই আমি যদি কিছু বাউন্ডারি আনতে পারি, প্রতিপক্ষে তখন পেছনে যেতে বাধ্য হয়। সিরিজের আগে কোচের সঙ্গে বসি এবং বলি আমি ইতিবাচক থাকব কারণ আমি বুঝতে পারছি কি ধরণের উইকেট আসছে।
কিন্তু এটা কারণে কখনো আবার আমি আগে আউট হয়ে যায় আবার যখন এটা কাজ করে আমার দলের সাহায্য হয়। আমার মনে হয় আমার আরও বেশি রান করা উচিত। কিন্তু যেটাই হোক আমি আমার ব্যাটিং উপভোগ করি।
শ্রীলঙ্কায় দুইবার নব্বুইর ঘরে আউট হলেন, নিশ্চয়ই খুব হতাশাজনক ছিল...
তামিম: প্রথম টেস্টেরটাতে বেশি হতাশার ছিল। যেটা আসলে অনেক ভাল উইকেট ছিল। আমি প্রথম ঘণ্টায় অনেক পরিশ্রম করে সব কাজ করে ফেলেছিলাম। পরে বোলারদের জন্য তেমন কিছুই ছিল না। কেবল সেঞ্চুরি হাতছাড়া করা না, আমি যদি ব্যাটিং চালিয়ে যেতে পারতাম দলের রান অনেক বড় হত। দ্বিতীয় টেস্টের ৯০ একটু ভিন্ন। আমি যখন উইকেটে গেলাম তখন পিচে বল ঘুরতে শুরু করেছে।
যেটা আমার মাথায় সব সময় কাজ করছে সেটা হলো, প্রতিপক্ষের সেরা ব্যাটসম্যান ৪৩০ রানের মতন করেছে। আর বাংলাদেশের এই সিরিজের যে সেরা ব্যাটসম্যান ছিল সে ২৮০ রান করেছে। আমার মতে দুই ব্যাটসম্যানের এই ১৫০ রানের তফাৎ কিন্তু অনেক বড় হয়ে গেছে।
গত ১৪ টেস্টে ৬ বার ফিফটি পেরিয়েও সেঞ্চুরি পাননি। ওয়ানডেতে গত ছয় ইনিংসে তিন ফিফটি করেও সেঞ্চুরি পাননি। আপনার সেঞ্চুরি সংখ্যা ১৫ ছাড়িয়ে যেতে পারত, এটা ভেবে আক্ষেপ হয় না?
তামিম: হয়ত বেশি (সেঞ্চুরির সংখ্যা ছাড়িয়ে যেত)। টেস্ট আর ওয়ানডে মিলিয়ে যদি বলেন তাহলে আমি অনেক সুযোগ হারিয়েছে। বেশিরভাগ সময় আমার ভুল, কখনো হয়তবা ভাল বল ছিল। যেটা বলালাম আক্ষেপ করা ছাড়া কিছু করার নাই। কিন্তু এটা নিয়ে সারাদিন চিন্তা করলে ভাল হবে না। আমি এই সেঞ্চুরিগুলো হাতছাড়া করার আক্ষেপ করছি একই সঙ্গে ভাল ব্যাপার হচ্ছে আমি এখনো খেলছি। আবার যদি সুযোগ আসে আমি চেষ্টা করব এটা করতে। সেঞ্চুরি হাতছাড়ার রেকর্ড নিয়ে তো গর্ব করা যায় না
সৌম্য সরকার, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্তরা ধারাবাহিকতার সমস্যায়। সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে আপনার কাছে তারা শিখতে আসে?
তামিম: সত্যিকথা বলতে লিটন, শান্ত এবং অন্যদের থেকে অনেক ইতিবাচক দিক দেখি। তারা ভাল করতে চেষ্টা করে। আমি এবং অন্য সিনিয়রদের কাছে আসে, শিখতে চায়। প্রথম টেস্টে শান্ত দুর্দান্ত ব্যাট করল যেটাতে ১৬০ (১৬৩) করেছে। যেটা ভাল দিক। হ্যাঁ পরে সে পারেনি হয়তবা। কিন্তু খালি সমালোচনা না করে এসব জিনসের জন্যও মাঝেমাঝে বাহবা দেওয়া উচিত। তারা উৎসাহ পেলে আত্মবিশ্বাস পাবে। আমি নিশ্চিত আপনি যদি তাদের জিজ্ঞেস করেন তাদের অনেক বড় আশা আছে নিজেদের ভেতর।
ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে শ্রীলঙ্কা সফরে পরিকল্পনা কি?
তামিম: বিশ্বকাপের আগে ওয়ানডে সুপার লিগে আমরা খুব বেশি ওয়ানডে খেলব না ঘরের মাঠে। আমরা সম্ভবত দুইটা হোম সিরিজ (ওয়ানডে সুপার লিগের) পাচ্ছি । অবশ্যই ঘরের মাঠের সুবিধা নিতে হবে, এবং যত বেশি পয়েন্ট নেওয়া যায় কারণ সব সময়ই ঘরের বাইরে কাজটা কঠিন। আমরা বিশ্বাস করি ওয়ানডেতে আমরা শক্ত দল। বিশেষ করে ঘরের মাঠে। কাজেই আত্মবিশ্বাস চাঙ্গা করার সেরা সুযোগ এখানে।
ওয়ানডে ফরম্যাটে আপনার অ্যাপ্রোচ বদল করবেন?
তামিম: আলহামদুল্লিল্লাহ আমি ওয়ানডেতে যেভাবে ব্যাট করছি তাতে আমি সফল। কেবল গত বছর না, গত পাঁচ ছয় বছর থেকে। ওয়ানডের ব্যাটিং নিয়ে আমি খুবই খুশি, আমার মনে হয় না আমার কিছু বদল করা দরকার। হ্যাঁ অবশ্যই উন্নতির জায়গা আছে এবং আপনাকে উন্নতি করতে হবে। যখন আপনি বড় রান করবেন অবশ্যই সেটা দলকে জেতাতে সাহায্য করবে। আমি পরিকল্পনা অনুযায়ী এভাবেই খেলা চালিয়ে যাব।
মানুষ যখন স্ট্রাইকরেট নিয়ে প্রশ্ন করে
তামিম: আমি সবাইকে খুশি করতে পারব না। আমার দল, খেলোয়াড় এবং কোচ জানেন কী ভেল্যু আমি যোগ করছি। কিন্তু যারা গবেষণা করছেন এবং সমালোচনা করছে। আমি কেবল তাদের বলব যান এবং পরিসংখ্যান দেখে আসেন। আমি কোন উত্তর দিতে চাই না।
[গত পাঁচ বছরে ওয়ানডেতে বিশ্বের ওপেনারদের মধ্যে রান সংগ্রাহকদের মধ্যে সেরা দশে আছেন তামিম, ৫১.৬৭ গড়ে করেছেন ২৭৩৯ রান। তবে এদের মধ্যে তামিমের স্ট্রাইকরেটই (৭৮.৬৮) সবচেয়ে কম]
টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুলের আরও সময় দরকার মনে করেন?
তামিম: আমি মনে করে সামনের দুই টেস্ট না, সামনের পাঁচ বছর তার অধিনায়ক থাকা উচিত। কারণ সে দলের প্রতি সবচেয়ে যত্নবান। টেস্ট ক্রিকেটকে সবার চেয়ে বেশি ভেল্যু করে, দল নিয়ে চিন্তা করে। কাজেই এটা তার প্রাপ্য।
কোচ রাসেল ডমিঙ্গোকে নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। আপনি কি মনে করেন দলের ফলাফলে কোচের ভূমিকা আসলে কতটা?
তামিম: আমরা যখন খেলি সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করি। সে (ডমিঙ্গো) সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করছে। সে চায় দল ভাল করুন, সে চেষ্টা করছে ভাল করার। দেখেন, আমি মনে করি এসব কথা হচ্ছে কারণ দল হিসেবে আমরা ভাল খেলছি না এই জন্য। তবে কি হবে না হবে, এইগুলা বলার আমি কেউ না। এইগুলা ক্রিকেট বোর্ড দেখবে। তবে আমি যেটা বলতে পারি সে চেষ্টা করছে।
Comments