কলেজশিক্ষার্থীর মৃত্যু: তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে পরিবারের অসন্তোষ

‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’ মামলার তদন্তে অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাজধানীর গুলশানে মৃত কলেজশিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা। তারা বলছেন, মামলায় অভিযুক্ত বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েব সোবহান আনভীরকে পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার এমনকি জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত না করায় তারা হতাশ।
সায়েম সোবহান আনভীর। ছবি: সংগৃহীত

‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’ মামলার তদন্তে অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাজধানীর গুলশানে মৃত কলেজশিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা। তারা বলছেন, মামলায় অভিযুক্ত বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েব সোবহান আনভীরকে পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার এমনকি জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত না করায় তারা হতাশ।

বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীর বড় বোন গতকাল সোমবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার বোন আনভীরের সঙ্গে একটা সম্পর্কের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল। আনভীর তাকে বিয়ে করে দেশের বাইরে স্থায়ী হওয়ার কথা দিয়েছিল। ২৬ এপ্রিল সকালে সে (কলেজশিক্ষার্থী) আমাকে ফোন করে বলে যে, আনভীর তাকে বিয়ে করবে না এবং সে তাকে বকাঝকাও করেছে। আমার বোন এ কথাও জানায় যে, সে একটা সমস্যার মধ্যে আছে। যেকোনো মুহূর্তে একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

‘আমার বোনের মরদেহ উদ্ধারের পর ‍দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। কিন্তু, পুলিশ এখনো আনভীরের মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড সংগ্রহ করেনি’, বলেন আনভীরের বিরুদ্ধে করা মামলার এই বাদী।

মামলার বিবৃতিতে বাদী উল্লেখ করেন, ২৬ এপ্রিল পুলিশ শোবার ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় কলেজশিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে। সে সময় তার পা বিছানা ছুঁয়ে ছিল। হাঁটুগুলো ছিল সামান্য বাঁকানো।

নিহতের বোন জানান, পুলিশ তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাওয়ায় গত বুধবার তিনি ও তার স্বামী ঢাকায় গিয়েছিলেন।

সেখানে তারা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি), একজন অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ও গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে কথা বলেন।

গুলশান থানার ওসি এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এখানেই গত ২৭ এপ্রিল মামলাটি দায়ের করা হয়।

শিক্ষার্থীর বোন বলেন, ‘আমার বোনের আত্মহত্যার পেছনে যে আনভীরের প্ররোচনা আছে, সেই প্রমাণ খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে পুলিশ আমাদের নিশ্চিত করেছিল।’

বুধবারের সাক্ষাতে উপস্থিত এডিসি তদন্ত শেষে আনভীরের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার বিষয়ে তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘সাক্ষাৎকালে ওই কর্মকর্তা বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে কিছু সমস্যা আছে বলে আমাদের জানান। তিনি (এডিসি) জানান, উপর মহলের অনুমতি ছাড়া তারা আনভীরকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। যেহেতু ৩০৬ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।’

কলেজশিক্ষার্থীর বোনের ভাষ্য, বোনের মৃত্যুর পর তিনি একটা ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। যে কারণে মামলার এজাহারে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় উল্লেখ করতে পারেননি তিনি।

তিনি বলেন, ‘ফুল ফার্নিশড ফ্ল্যাটটি আনভীরই পছন্দ করেছিলেন। তার মানে ফ্ল্যাট বা ভবন কর্তৃপক্ষ তার পরিচিত। ফ্ল্যাটটির ডাইনিং রুম সংলগ্ন বারান্দায় কোনো গ্রিল নেই। এক্ষেত্রে সিসি ক্যামেরা এড়িয়ে পেছন থেকে ওই বারান্দা দিয়ে কিংবা পাশের ভবন অথবা ফ্ল্যাট থেকে যেকেউ এখানে ঢুকতে পারবে।’

‘আমরা পুলিশকে এই বিষয়টি তদন্ত করতে বলেছিলাম। কিন্তু, তারা স্পষ্টতই সেটা গ্রাহ্য করেনি’, যোগ করেন তিনি।

বাদীর অভিযোগ, বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিই তার বোনকে হত্যা করেছেন। ‘আনভীর যদি নির্দোষই হবে, তাহলে তার পরিবারের কিছু সদস্য দেশ ছাড়ল কেন?’, বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ প্রভাব খাটিয়ে গণমাধ্যমের একটা অংশকে আমার বোনের চরিত্র হননের কাজে লাগাচ্ছে। এমনকি সম্ভবত আনভীরের দিক থেকে মনোযোগ সরানোর জন্য শারুনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করতে বসুন্ধরা গ্রুপ আমার একমাত্র ভাইকে প্ররোচিত করেছে।’

গত ১ মে এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন কলেজশিক্ষার্থীর ভাই। তবে, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে গত দুই বছর ধরে ভাইয়ের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না বলে দাবি করেন তার বড় বোন।

এক্ষেত্রে বাদীর বক্তব্য শোনার পর আদালত কলেজশিক্ষার্থীর আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত হত্যা মামলার সব কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন।

কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, ‘ওই কলেজশিক্ষার্থী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে। আমরা চাই এর সঠিক তদন্ত হোক। দ্রুত বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিকে গ্রেপ্তার করা হোক।’

এই কলেজশিক্ষার্থীর মৃত্যুতে দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়। প্রতিবাদ হয় কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন জায়গায়।

দ্য ডেইলি স্টারের নীতিমালা অনুযায়ী এই প্রতিবেদনে ভুক্তভোগীর পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি

আরও পড়ুন:

গুলশানে মৃত কলেজশিক্ষার্থী: প্রাথমিক ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত, পুলিশ এখনো পায়নি

অভিযুক্ত গ্রেপ্তার না হওয়ায় হতাশ কলেজশিক্ষার্থীর পরিবার

‘গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ আছে কলেজশিক্ষার্থীর ডায়েরিতে’

বসুন্ধরা এমডির আগাম জামিন শুনানি হচ্ছে না

আগাম জামিন আবেদন করলেন সায়েম সোবহান আনভীর

বসুন্ধরার এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

গুলশানে ফ্ল্যাট থেকে কলেজ শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago