ঈদ ঘনিয়ে আসায় শপিংমলে বিক্রি বেড়েছে

bashundhara.jpg
রাজধানীর এক শপিংমলে কেনাকাটা করে বেড়িয়ে যাচ্ছে একটি পরিবার। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

করোনাভাইরাসের ঝুঁকি উপেক্ষা করে ঈদের কয়েকদিন আগে শপিং সেন্টারগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ায় বেচাকেনাও বেড়েছে। এতে বিক্রেতাদের মুখে হাসি ফিরে এসেছে।

ঈদের আগে কয়েক লাখ ক্রেতা শপিংমল, বাজার এবং রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে পোশাক, জুতা, ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম, ঘরের সরঞ্জাম এবং অন্যান্য ফ্যাশন সামগ্রী কিনতে ভিড় করছেন।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এই সময়টা কেনাকাটার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যা রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয় এবং যেখানে মোট বার্ষিক পাইকারি ও খুচরা বিক্রির প্রায় এক তৃতীয়াংশ এই সময়ে হয়ে থাকে।

গত বছর করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত দীর্ঘ লকডাউনের কারণে ব্যবসায়িক মন্দাবস্থা দেখার পর এ বছরের পয়লা বৈশাখ এবং ঈদে বেচাকেনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাজি ধরেছিলেন ব্যবসায়ীরা।

সংক্রমণের হার মার্চের মাঝামাঝি থেকে বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় দেশে ৫ এপ্রিল সাত দিনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা খুচরা বিক্রেতাদের ভালো বিক্রির আশায় জল ঢেলে দেয়।

এরপর থেকে এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা কয়েকবার বাড়ানো হয়, ঢাকাকে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং এমনকি একটি জেলা অন্য জেলায় ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। যদিও তা বাস্তবায়নে কিছুটা ঢিলেঢালাভাব দেখা যায়।

১২ দিনের কর্মবিরতির পর সরকার ২৫ এপ্রিল থেকে শপিংমল, দোকান এবং বাজারগুলো আবার চালু করার অনুমতি দিলে ব্যবসায়ীদের আশা পুনরুজ্জীবিত হয়। খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা জানান, বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রত্যাবর্তন করেছে, তবুও এটি মহামারির আগের অবস্থার ৫০ শতাংশ নিচে নেমেছে।

আড়ং, যাদের ২১টি আউটলেট আছে, তাদেরও ২০১৯ সালের ঈদের তুলনায় বিক্রি কমে ৬৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

এই লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডের চিফ অপারেটিং অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ‘গত কয়েকদিনে বিক্রি ভালো হয়েছে। তবে আরও কয়েক ঘণ্টার জন্য দোকান খোলা রাখার সুযোগ পেলে আমরা আরও বেশি ক্রেতা পেতাম।’

তিনি জানান, অনেক ক্রেতা ইফতারের পরে শপিংয়ের আসতেন এবং সময় বাড়ানো হলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও সহজ হতো।

আড়ং ব্যবসায়ের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কিছুটা ব্যয় কমানোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

আশরাফুল আলম যোগ করেন, ‘অন্যান্য বছরগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে আমরা ৭০০-৮০০ অতিরিক্ত কর্মী নিযুক্ত করতাম। এ বছর আমরা মাত্র ২০০ জনকে নিয়োগ করেছি।’

বেক্সিমকোর ফ্যাশন লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ইয়োলোর মার্কেটিং প্রধান রায়হান কবির জানান, বিক্রি বেড়েছে, তবে অনেক ক্রেতা ‘ব্রিক অ্যান্ড মর্টার’ স্টোরগুলো এড়িয়ে যাচ্ছেন।

ইয়োলোর অনলাইন বিক্রি গত দুই সপ্তাহে দশগুণ বেড়েছে, ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং গ্রাহকের আস্থার কারণেই এটি হয়েছে বলে মনে করেন কবির।

অঞ্জনস’র মালিক শাহীন আহমেদের মতে, রমজানের প্রথমার্ধে ৪০ শতাংশ বিক্রি হয় এবং দ্বিতীয়ার্ধে বাকিটা।

শাহীন আহমেদ বলেন, ‘যেহেতু রমজানের প্রথমার্ধে দশ দিনের জন্য লকডাউন ছিল, সেই সময়কালে বিক্রি ভালো ছিল না। বিক্রি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং স্বাভাবিক সময়ের ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে।’

বাংলাদেশ ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমিতির সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, ‘আমরা ব্যবসা কমে যাওয়ার যে অনুমান করেছিলাম, তার তুলনায় ব্যবসা সত্যিই ভালো হয়েছে। যেহেতু রমজানের শেষ সপ্তাহে বিক্রি সবসময় বেশি হয়, আশাকরি এবারও এটি ত্বরান্বিত হবে।’

কে ক্রাফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা খালিদ মাহমুদ খান জানান, গত কয়েকদিন ধরে বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে।

‘যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তবে ব্যবসা পুনরুদ্ধার সম্ভব। তবে, বিক্রি ২০১৯ সালের মতো হবে না। আমরা মহামারির আগের বিক্রির ৪০ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হতে পারি’, বলেন তিনি।

রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সমবায় সুপার মার্কেটের ফ্যাশন হাউসগুলো খুব ভালো সময় পার করছে না, কারণ এখানকার গ্রাহকরা অধিকাংশই কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী, যাদের উপস্থিতি খুব কম।

লণ্ঠন ফ্যাশন হাউজের মালিক উজ্জ্বল দাস বলেন, ‘আমরা ক্রেতাদের জন্য অপেক্ষা করে অলসভাবে সময় কাটাচ্ছি। কিন্তু, আমরা কেবল হতাশ হচ্ছি।’

‘আমাদের মূল ক্রেতারা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী। কিন্তু, গত বছরের মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে এই মুহূর্তে তাদের বেশিরভাগই ঢাকার বাইরে’, বলেন তিনি।

দাস পূর্বাভাস দিয়েছেন যে, ২০১৯ সালের তুলনায় বিক্রি ২০ শতাংশ হবে। ফলে দোকান ভাড়া প্রদান এবং অন্যান্য ব্যয় মেটাতে তাকে তার সঞ্চয় খরচ করতে হচ্ছে।

গাউছিয়ার কসমেটিকস দোকানের মালিক জোবায়ের হোসেন এখন প্রতিদিন ১০-১২ হাজার টাকা বিক্রি করেন, যেখানে করোনার আগে ১৮-২০ হাজার টাকা বিক্রি করতেন।

‘মহামারি ব্যবসা ধ্বংস করে দেওয়ার কারণে গত বছর আমি ঋণ নিয়েছিলাম এবং তা পরিশোধ করার জন্য লড়াই করে যাচ্ছি। এর চেয়ে বড় কথা, আমাকে কর্মচারীদের বেতন ও বোনাসও দিতে হবে’, বলেন তিনি।

ব্যবসায়ীদের মতে, সদরঘাটের শরীফ মার্কেট বাংলাদেশের বৃহত্তম পাইকারি পাঞ্জাবি মার্কেট, যা জনপ্রিয় পোশাকের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পূরণ করে।

এই বাজারে সৈয়দ গার্মেন্টসের বিক্রয়কর্মী অতুল চৌধুরী জানান, বিক্রি খুব কম এবং ব্যবসায়ের মাত্র ৪০ শতাংশ পুনরুদ্ধার করা সক্ষম হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘লকডাউনের কারণে অনেক ব্যবসায়ী রমজানের আগে পাঞ্জাবি কিনতে ঢাকায় আসতে পারেননি। তারা আসতে পারলে ব্যবসা আরও ভালো হতো।’

ঢাকার ইসলামপুর মার্কেটের পাইকারি কাপড় ব্যবসায়ী মো. সেলিম চৌধুরীর একই কথার প্রতিধ্বনি করেন।

‘আমরা খারাপ অবস্থায় আছি। এখানে ব্যাংক ঋণ এবং দোকান ও কর্মচারীদের ব্যয় রয়েছে’, বলেন তিনি।

বাটার খুচরা বিক্রেতার প্রধান আরফানুল হক জানান, ২০১৯ সালের তুলনায় এবার ৭০ শতাংশ ব্যবসা হয়েছে।

‘এরকম বিক্রি নিয়ে আমরা ঈদের শেষে কোনো লাভ করতে পারব না। সারাবছর ব্যবসা ভালো হয়নি’, বলেন তিনি।

ট্রান্সকম ইলেক্ট্রনিক্সের বিপণন ব্যবস্থাপক সৈকত আজাদ জানান, ফ্রিজের বিক্রি বাড়লেও এয়ারকন্ডিশনার ও টেলিভিশনের বিক্রি কমেছে।

‘আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে খুব বেশি সাড়া পাচ্ছি না। ঈদের আর তিন থেকে চার দিন বাকি রয়েছে এবং আমি আশাকরি বিক্রি কিছুটা বাড়বে। কিন্তু, নির্ধারিত বিক্রির লক্ষ্য অর্জন করা আমাদের পক্ষে খুব কঠিন হবে’, যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশে স্যামসাং ডিভাইসের অনুমোদিত নির্মাতা ফেয়ার গ্রুপের চিফ মার্কেটিং অফিসার মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন জানান, এপ্রিলের মন্দাবস্থার পর মে মাসে স্মার্টফোন বিক্রি আবারও বেড়েছে।

‘আমরা যদি এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারি, তবে আমরা ২০১৯ সালের ঈদে বিক্রির যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছিলাম, তা ছুঁতে সক্ষম হব’, বলেন তিনি।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সংগঠনের সভাপতি হেলাল উদ্দিন জানান, সংকট-পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় ব্যবসা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সুমন আলী

Comments

The Daily Star  | English

Govt looking to defuse trade tensions with India

Bangladesh does not want any further escalation in tension with India, as the recent retaliatory moves are affecting bilateral trade and both countries’ businesses.

5h ago