২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেকর্ড সংখ্যক ৫১,৯৪২ যানবাহন পারাপার
ঈদে ঘরমূখো যাত্রী নিয়ে চলা যানবাহনের চাপে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পার থেকে নাটিয়াপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজট তৈরি হয়েছে। এতে ধীর গতিতে চলছে গাড়ি।
এদিকে করোনা সংক্রমণ কমাতে সরকার মানুষকে ঈদে বাড়ি ফিরতে নিরুৎসাহিত করলেও এবং দুরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রাখলেও গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ডসংখ্যক যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়েছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত ২৪ ঘন্টায় (মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত) সেতু পারাপার হয়েছে ৫১ হাজার ৯৪২টি যানবাহন। এর আগে গত ঈদ-উল-আজহায় সর্বোচ্চ ৪৯ হাজার গাড়ি পারাপারের রেকর্ড ছিল।
তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭৩ লাখ ৮ হাজার ৭৩০ টাকা। তবে গত ঈদ-উল-আজহায় টোল আদায় হয়েছিল রেকর্ড ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
এদিকে দুরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি এবং ঝুঁকি দুটোই বেড়েছে। নারী ও শিশুদের নিয়ে মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেল, খোলা ট্রাক, মিনি ট্রাক বা মালবাহী ট্রাকের উপর গাদাগাদি করে বসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রিয়জনের সাথে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে বাড়ি ছুটছে মানুষ।
টাঙ্গাইলের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জানে আলম দুপুরে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান অতিরিক্ত চাপের কারণে যানবাহন ধীর গতিতে চলছে। কোথাও থেমে নেই। তবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চার লেনের গাড়ি একযোগে এলেঙ্গা গিয়ে দুই লেনের বঙ্গবন্ধু সেতু সংযোগ সড়কে ঢোকার পর গতি মন্থর হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার রাত থেকেই যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয় এই মহাসড়কে। রাতে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায় কয়েকবার স্থগিত রাখায় বুধবার ভোরের দিকে সেতুর উভয় প্রান্তে যানজটের সৃষ্টি হয়।
এক পিকআপে গাদাগাদি করে ঢাকা থেকে রংপুর যাচ্ছেন ছয় জন নারীসহ ২৯ জন শ্রমজীবি মানুষ। তাদের একজন সাইফুল ইসলাম জানান, রাতে সেহেরি খেয়ে ঢাকার উত্তরা থেকে রওনা হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় টাঙ্গাইল বাইপাস পর্যন্ত এসেছেন। চন্দ্রা থেকে গোরাই পর্যন্ত এলাকায় যানজটে আটকা ছিলেন দীর্ঘসময়। জানেন না কখন বঙ্গবন্ধু সেতু পাড় হতে পারবেন আর কখন বাড়ি ফিরবেন।
গোরাই হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাফ্ফর হোসেন দুপুর দুইটায় দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, কালিয়াকৈরের স্কয়ার এলাকা থেকে গোরাই পর্যন্ত এলাকায় যানবাহনের ধীরগতি রয়েছে। তবে অধিকাংশ মানুষ ইতোমধ্যে ঘরে ফিরে যাওয়ায় যানবাহনের চাপ কমে আসছে বলে জানান এই হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তা।
যানবাহনের এই চাপ মঙ্গলবার রাতে কিছু্টা কমে গেলেও বুধবার ভোর থেকে বেড়ে যায় কয়েক গুণ।করটিয়া বাইপাস, টাঙ্গাইলের আশিকপুর বাইপাস, রাবনা বাইপাস ও এলেঙ্গাতে শত শত মানুষকে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। যানবাহন না পেয়ে অনেকেই হেঁটে রওনা দিয়েছেন।
গাইবান্ধাগামী যাত্রী মোশারফ হোসেন বলেন, ‘মালিবাগ থেকে মাইক্রোবাসে রওনা দিয়েছিলাম রাত ৯টায়। সকাল ৯টায় টাঙ্গাইল বাইপাসে পৌঁছালাম। রাস্তায় প্রচুর যানজট। জানি না কখন বাড়ি পৌঁছাব।
ঢাকা থেকে ঈদ করতে স্ত্রী ও দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে মোটর সাইকেলে গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ যাচ্ছেন এনজিও কর্মী কায়সার আহম্মেদ।
‘বাস না চলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেলে বাড়ি যাচ্ছি। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা আছেন। সরকার করোনার জন্য বাস বন্ধ রাখায় কোনো লাভ হয়নি যারা বাড়ি যাওয়ার তারা ঠিকই যাচ্ছে। ভোগান্তিটা কেবল বেড়ে গেছে,’ বলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান মঙ্গলবার সন্ধা থেকে মহাসড়কে গাড়ির চাপ বাড়তে শুরু করে ভোররাত থেকে গাড়ির চাপ প্রচণ্ডভাবে বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও চলাচল স্বাভাবিক আছে।
আরও পড়ুন-
ফেরিতে ঠাসাঠাসি: ৫ জনের মৃত্যু, অসুস্থ আরও ৮
ঢাকা-সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে যানবাহন বেড়েছে দ্বিগুণ, চলছে দূরপাল্লার বাসও
Comments