গাজায় স্থল পথে হামলার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল
ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়ে গাজায় ১৭ শিশুসহ ৬৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যার পর এখন সেখানে স্থল পথে হামলার পরিকল্পনা করছে।
আজ বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট এ তথ্য জানিয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী আইডিএফের মুখপাত্র বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হিদাই জিলবারমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইসরায়েল যেহেতু গাজায় হামলা জোরদার করেছে, তাই সেখানে স্থলপথে সম্ভাব্য আক্রমণের পরিকল্পনাটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
গাজায় স্থলপথে হামলা বিষয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গাজা ডিভিশন ও সাউদার্ন কমান্ডের পাশাপাশি দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও সম্মতি প্রয়োজন বলে তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
প্রতিবেদন মতে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল বুধবার রাতে নিরাপত্তা কেবিনেটকে জানিয়েছেন তার দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনি মুক্তি সংগ্রামী সংগঠন হামাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
তিনি আরও বলেছেন, ‘আজ রাতে গাজার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ভবনসহ সেখানকার সরকারি স্থাপনাগুলো ধ্বংস করতে হামলা চালানো হবে।’
কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, আজ মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের সকালে গাজাবাসীর ঘুম ভাঙে ইসরায়েলের ক্রমাগত গোলাবর্ষণের শব্দে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বর্বরোচিত হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ১৭ শিশু ও আট নারীসহ ৬৯ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৩৯০ জন।
হামাস গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিমান হামলায় সংগঠনটির গাজা সিটি কমান্ডার বাসেম ইসাসহ আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা নিহত হয়েছেন।
আজ ভোরে ইসরায়েল হামাসের জাতীয় নিরাপত্তা কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে বলেও সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় হামাসের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা নিহত হওয়ার পর গাজা থেকে কয়েক ডজন রকেট ইসরায়েলে ছোড়া হয়েছে।
গত সোমবার এই হামলা শুরুর পর ইসরায়েলের কয়েকটি স্থানে ইসরায়েলি ইহুদি ও ইসরায়েলি আরবদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুবিধা নেওয়া চেষ্টায় নেতানিয়াহু
ওয়াশিংটন ডিসি-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-মনিটর গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজায় বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অল্প সময়ের মধ্যে চার চারবার নির্বাচনের পরও এককভাবে সরকার গঠনে সক্ষম হননি নেতানিয়াহু। এ ছাড়াও, তার বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি মামলা। তাই, ক্ষমতা ছাড়ার শেষ মুহূর্তে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালিয়ে নিজের ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করছেন তিনি।
গত ২৩ মার্চ সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের পর নেতানিয়াহুর ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির বিরোধী মধ্য-বামপন্থি জোট ‘ইয়েশ আতিদ’ সরকার গঠনের চেষ্টা করছে। এমন পরিস্থিতিতে জোটের নেতা ইয়ার লাপিদ ফোন করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে।
এই সংকটময় মুহূর্তে আব্বাস বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছেন।
সংবাদ বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, গাজায় হামলার ফলে ইসরায়েলে নতুন করে রাজনৈতিক মেরুকরণ হচ্ছে। উগ্রপন্থি দলগুলো নেতানিয়াহুকে গাজায় আরও হামলা চালানোর আহ্বান জানাচ্ছে।
অন্যদিকে, বিরোধীরা বলছে, নেতানিয়াহু ইসরায়েলকে শুধু ভুল পথেই পরিচালিত করছেন না, তিনি দেশটিকে ধ্বংসের পথে পরিচালিত করছেন।
এমন পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহু উগ্রবাদী দলগুলোর সমর্থন নিয়ে নিজের সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন:
ইসরায়েলকে ‘শিক্ষা দিতে’ পুতিনকে এরদোয়ানের ফোন
আবারও ইসরায়েলি হামলায় রক্তাক্ত গাজা উপত্যকা
গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় ২০ ফিলিস্তিনি নিহত
ইসরায়েলি বোমার আঘাতে গাজায় ভবনধস, তেল আবিবে হামাসের রকেট হামলা
Comments