ঈদ নেই বস্তিতে

প্রতি বছরেই ঈদের আনন্দ কমবেশি ভাগাভাগি করে নিতে পারলেও এ বছর ঈদের আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে রাজধানীর বস্তিবাসীর।
গতকালও ত্রাণের আশায় মিরপুর-১৪ এলাকায় বসে ছিলেন বস্তিবাসীরা। ছবি: স্টার

প্রতি বছরেই ঈদের আনন্দ কমবেশি ভাগাভাগি করে নিতে পারলেও এ বছর ঈদের আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে রাজধানীর বস্তিবাসীর।

সরকারি বা বেসরকারিভাবে তেমন কোনো ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় ঈদের আনন্দ নেই ঢাকার অধিকাংশ বস্তিবাসীর। গত বছর করোনার মধ্যে ঈদে তাদের অনেকে ত্রাণ ও বিভিন্ন সহযোগিতা পেয়েছেন। তবে, এবারের ঈদে বেশিরভাগই কোনো প্রকার ত্রাণ বা সহযোগিতা পাননি।

ঢাকার মিরপুরের পাঁচটি বড় বস্তি, ভাষানটেক বস্তি, মহাখালীর সাততলা বস্তি, কড়াইল বস্তিসহ আরও কয়েকটি বস্তির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে একই চিত্র পাওয়া গেছে।

মিরপুর ১৪’র আবুলের বস্তিতে প্রায় ২০০ পরিবারের বসবাস। এই বস্তির একজন বাসিন্দা আবুল (৬০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে ৩৫ লাখ নিম্ন আয়ের পরিবারকে আড়াই হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও আমাদের বস্তির ২০০ পরিবারের কেউই এই টাকা পায়নি। অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়া হলেও কারও কাছেই এক পয়সাও আসেনি।’

‘গতরাতে প্রতিবন্ধী, বয়স্ক আছে এমন ৩০টি পরিবারকে একটি বেসরকারি সংগঠন নাম প্রকাশ না করে কিছু সাহায্য দিয়ে গেছে। এ ছাড়া আর কেউ কোনো ধরনের সাহায্য পায়নি’, বলেন তিনি।

ঈদের দিন খাওয়ার জন্যে শাক রান্না করছেন ভাষানটেক বস্তিতে থাকা এক পরিবার। চিত্রটি গতকালের। ছবি: স্টার

ঢাকা শহরে ২০ বছর ধরে রিকশা চালানো আবুলের বস্তির বাসিন্দা মো. আলম (৩৭) বলেন, ‘শারীরিক সমস্যার কারণে ঠিকমতো রিকশা চালাতে পারি না। কোনো উপায় না থাকায় তবুও সপ্তাহে দুদিন রিকশা চালাই। বস্তিতে আগুন লেগে আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। একমাত্র মেয়েকে দাদির বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। নিজে ঈদের দিনে খাওয়ার জন্যে আধা কেজি চাল আর ১০ টাকার চ্যাপা শুঁটকি কিনেছি।’

নয় বছর ধরে আবুলের বস্তিতে থাকেন লক্ষ্মীপুর থেকে আসা শাহিদা বেগম (৪০)। তিনি বলেন, ‘আমার ১৮ বছরের মেয়ে গার্মেন্টসে কাজ করে পাঁচ জনের পরিবার চালায়। ঈদের জন্যে আমরা কিছুই কিনতে পারিনি।’

মিরপুর ১৪-এর বাগানবাড়ি বস্তিতে থাকেন নাজমা বেগম (৩৫)। দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে পাঁচ জনের পরিবার তার। নাজমার স্বামী ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। রমজান মাসে ঝালমুড়ি তেমন বিক্রি না হওয়ায় দিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আয় হয়েছে। যা দিয়ে সংসারই ঠিকমতো চলে না।

নাজমা বেগম বলেন, ‘আমরা তেমন কোনো সহযোগিতা পাইনি। ঈদের জন্যে নতুন পোশাক কিনতে পারিনি।’

প্রতিবন্ধী ছোট বোন ও মারা যাওয়া আরেক বোনের দুই সন্তান নিয়ে ভাষানটেকের বেনারশী পল্লীতে থাকেন রুবিনা বেগম (৪০)। গৃহকর্মীর কাজ করে সংসার চালান তিনি।

রুবিনা বলেন, ‘অন্যের বাসায় কাজ করতে গেলে তারা কিছু দিলে সেটা দিয়েই কোনো রকমে সংসার চলে। করোনার কারণে এখন তেমন কেউ কাজে নেয় না। সপ্তাহে দুদিন কাজ করি। প্রতি বছর ঈদে মাংস খেতে পারলেও এবার সেই ভাগ্য মনে হয় নেই।’

তিনি জানান, ঈদের জন্যে আধা কেজি সেমাই ও আধা কেজি চিনি কিনেছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago