‘অ্যাকনা গোশত হামারগুলার কপালোত জোটে না’

Kurigram_15May21.jpg
নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার যাত্রাপুরে পাউবোর বাঁধে আশ্রয় নেওয়া আফিয়া বেওয়া ও আছিয়া বেওয়া বিষণ্নতা মুখে বসে আছেন। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

‘ম্যালা দিন হইলো গোশত দিয়া ভাত খাং না। ঈদের দিনোতও অ্যাকনা গোশতের টুকরা মোর কপালোত জুটিল না’— এভাবে বলছিলেন ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে নিঃস্ব আফিয়া বেওয়া। নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।

আজ শনিবার আফিয়া বেওয়া বলেন, ‘মনে হছিলো ঈদের দিনোত কাইও অ্যাকনা গোশত দিবে। কাইও দ্যায় নাই। হামার তো টেকাও নাই যে হামরা গোশত কিনি আনি খামো। ঈদের দিন সকাল, দুপুর, রাতে শাক আর ডাইল দিয়া ভাত খাইছোং। এইল্যা দিয়াই হামরা প্রত্যেক দিন ভাত খাই।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আফিয়া বেওয়ার সঙ্গে দ্য ডেইলি স্টার’র কথা হয়। তিনি আরও বলেন, তার দুই ছেলে দিনমজুর। স্ত্রী সন্তার নিয়ে আলাদা থাকেন। আফিয়া নিজেও দিনমজুর হিসেবে কাজ করে জীবিকা চালাচ্ছেন। ব্রহ্মপুত্র নদে জমি-বসতভিটা সব কিছু হারিয়ে গেছে। বাঁধের ওপর একচালা টিনের ঘরে বসবাস করছেন।

‘আগোত ঈদের দিনোত হামাকগুলা দাওয়া দিয়া খাওয়াইছলো। এইবারকা ঈদোত কাইও দাওয়াত দিলো না। কাইও খাবার জইন্যে ডাকাইলও না’, বলেন তিনি।

আফিয়ার প্রতিবেশী আছিয়া বেওয়া। তিনি বলেন, ‘গোশত মাছ তো কপালোত জোটে না। ঈদের দিনোত অ্যাকনা জুটতো কিন্তু এই বারকা ঈদোত সেই কনাও জুটিল না। কাইও দাওয়াত তো দিলো না আর গোশত খাওয়াও হইলো না। গোশত তো খাওয়ার মোনায়। আগোত তো গোশত খাছিলোং। অ্যালা হামরা যোগবার পাং না, হাতোত টেকা নাই গোশত কিনোং ক্যাং করি।’

আছিয়া জানান, তার এক ছেলে। আলাদা সংসারে থাকেন। চায়ের দোকানে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান। তিনি একাই বাঁধের ওপর একচালা টিনের ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। নিজের খরচ চালান দিনমজুরের কাজ করে। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে সব কিছু হারিয়ে গেছে তার।

তাদরে প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, বাঁধের ওপর, নদ-নদী পাড়ে আর চরে যারা বসবাস করেন তাদের প্রায় সবাই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন। করোনা পরিস্থিতির আগের ঈদগুলোতে তাদের হাতের অবস্থা ভালো ছিল। মাংস কিনে আনতেন, প্রতিবেশীদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতেন। কিন্তু লকডাউনে ঈদ উদযাপন তাদের বিষণ্নতায় ফেলেছে।

তিনি বলেন, ‘চারটা ছওয়ার কান্নাকাটিত মুই বাধ্য হয়া একপোয়া গরুর গোশত কিনি আনছোং ১২৫ টাকা দিয়া। ছওয়াগুলাই খাইছে। মোর আর মোর বউয়ের মুখোত একটুরাও উঠে নাই। মুই আনছোং এক পোয়া গোশত অ্যালা অ্যাইকনা গোশত ছওয়াগুলাক খাওয়াং না মুই কাকো দাওয়াত দিয়া খাওয়াং। এইবার ঈদোত মুই কাকো দাওয়াত দ্যাং নাই। মোকও কাইও দাওয়াত দ্যায় নাই।’

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

10h ago