‘লঞ্চই মোগো ঘর’

করোনা পরিস্থিতির কারণে বাড়ি যেতে না পারা সহকর্মীদের জন্যে ঈদের দিন লঞ্চে রান্না করছেন বাবুর্চি। ছবি: টিটু দাস/স্টার

নৌ চলাচল স্বাভাবিক হলে যাত্রী নিয়ে পাড়ি দিতে পারলেই তারা বেশি খুশি হন বলে জানিয়েছেন লঞ্চ শ্রমিকরা। তাই ঈদের ছুটিতে বাড়ি না গিয়ে তারা লঞ্চেই কাটিয়েছেন।

ঈদের দিন বরিশাল নদী বন্দরে গিয়ে দেখা গেছে কীর্তনখোলার তীরে সারি বেঁধে নোঙর করে আছে অন্তত ২০টি লঞ্চ। সেসব লঞ্চের প্রায় অর্ধেক শ্রমিক এবার লঞ্চেই ঈদ কাটিয়েছেন।

লঞ্চ কর্মচারীরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় এক মাসের বেশি সময় ধরে তারা লঞ্চেই বসে আছেন। এখন লঞ্চই তাদের ঘর-বাড়ি। তাদের কেউ লঞ্চের খালাসি, কেউ কলম্যান, গ্রিজারম্যান, মেশিন ম্যান, মাস্টার, সুকানী বা বাবুর্চি।

ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুল লঞ্চ ‘মানামী’র খালাসি কাওসার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে লঞ্চটিতে অন্তত ৮০ জন শ্রমিক কাজ করেন। লকডাউন শুরু হলে মালিক প্রায় ৪০ জনকে ছুটি দিয়েছেন। এ ছাড়া, বাকি ৪০ জন লঞ্চেই আছেন।’

কাওসারের বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাটে। তিনি আরও বলেন, ‘বাড়িতে স্ত্রী ও পাঁচ বছর বয়সী ছেলে আছে। ঈদের সময়ে বাড়ি যাইতেও মন চাইছিল, কিন্তু কেমনে যামু? সবাই লঞ্চ থুইয়া গেলেও মোরা কেমনে যামু? লঞ্চই মোগো ঘর— তাই ঈদের দিনও লঞ্চেই আছি।’

একই লঞ্চের বাবুর্চি হাবিবুর রহমানের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অতদূরে যাওয়ায়-আসার মেলা খরচ, তাই লঞ্চেই ঈদ কাটাইতেছি।’

তিনি জানান, লঞ্চের সবাই মিলে এক বেলা ভাত-মাংস খাওয়ার আয়োজন করে ঈদ উদযাপন করেছেন।

‘একতা’ লঞ্চের কর্মচারী নিজাম মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘লঞ্চ চললে প্রতিদিন সাড়ে ৩০০ টাকা করে পাই। না চললে শুধু খোরাকি পাই। এভাবে আর কতদিন চলবে আল্লাহই জানেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘একবার বাড়ি গেলে ফিরে এসে আবার কাম পাওয়া শক্ত আছে। তাই বাড়ি যাইতে মন চাইলেও যাওয়ার উপায় নাই।’

নৌযান শ্রমিকরা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, ঢাকা-বরিশাল রুটের ১৪ থেকে ১৫টা লঞ্চ ছাড়াও ভোলা, মেহেন্দীগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ ও বরগুনা রুটের ২৫ থেকে ৩০টি লঞ্চের প্রায় হাজার খানেক শ্রমিক এবার লঞ্চেই ঈদ কাটিয়েছেন।

আরও জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন কাজ না থাকায় তাদের আর্থিক সংকটে দিন কাটছে। তবে এখনো পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থা থেকে তারা সাহায্যও পাননি।

Comments

The Daily Star  | English

Leather legacy fades

As the sun dipped below the horizon on Eid-ul-Azha, the narrow rural roads of Kalidasgati stirred with life. Mini-trucks and auto-vans rolled into the village, laden with the pungent, freshly flayed cowhides of the day’s ritual sacrifices.

18h ago