ভালো নেই পাটি শিল্পীরা

দেড়শ বছর ধরে বংশপরম্পরায় এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন পাটিকরপাড়া গ্রামের ৯০টির মতো পরিবার। ছবি: স্টার

পরিশ্রম ও উৎপাদন খরচের তুলনায় মুনাফা কম। বাজারে যন্ত্রে তৈরি প্লাস্টিকের পাটির চাহিদা বেশি। এর ওপর করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাভাবিক বিক্রিটুকুও নেই।

এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন হাতে তৈরি পাটিশিল্পের সঙ্গে জড়িত মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা।

পাটি তৈরি করার কারণে উপজেলার আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের এই গ্রামটি পরিচিতি পাটিকরপাড়া নামে। দেড়শ বছর ধরে বংশপরম্পরায় এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন গ্রামের ৯০টির মতো পরিবার। 

পরিবারের গৃহিণীরাই মূলত পাটি বোনার কাজটি করেন। ছবি: স্টার

পাটিকররা বলছেন, অনেক দিন হলো পাটিশিল্পের সেই সুদিন নেই। তাই এমনিতেই তারা আর্থিক অনটনের ভেতর থাকেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি তাদের অবস্থাকে আরও নাজুক করে তুলেছে।

পাটিকরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাটি তৈরির প্রধান কাঁচামাল মুরতা আনা হয় সিলেট থেকে। যেটাকে পাটি তৈরির  উপযোগী করে তোলেন পুরুষরা। আর পরিবারের গৃহিণীরাই মূলত পাটি বোনার কাজটি করেন। এ ছাড়া উঠান কিংবা খোলা জায়গায় প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়েও বুননের কাজটি করেন কেউ কেউ।

করোনার কারণে এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকার এক আটি মুরতা সংগ্রহ করতে হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়।

পাটিকরপাড়ার বাসিন্দারা বলেন, প্রতি বছর গ্রামের ১৫ থেকে ২০টির মতো পরিবার সিলেটে গিয়ে আলাদা আলাদা মালিকের অধীনে কয়েক মাস পাটি তৈরির কাজ করেন। এতে পরিবারপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার পুঁজি হয়। এই টাকা দিয়ে কাঁচামাল কিনে এনে বছরের বাকি সময় নিজ গ্রামেই পাটি তৈরি ও বিক্রির কাজ করেন তারা।

কথা হয় ৪০ বছর ধরে পাটি তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে যুক্ত কল্পনা রানী দে’র সঙ্গে। ৭০ বছর বয়সী স্বামীহারা কল্পনা বলেন, ‘আমার ছেলে, ছেলের বউ ও মেয়ে সবাই এই পেশার ওপর নির্ভরশীল। লকডাউনের কারণে হাটে গিয়ে পাটি বিক্রি বন্ধ। কেনার মানুষও পাওয়া যাচ্ছে না।’

উঠান কিংবা খোলা জায়গায় প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়েও বুননের কাজটি করেন কেউ কেউ। ছবি: স্টার

পাটিকর শান্ত দে জানান, প্লাস্টিকের ব্যবহার শুরু হওয়ার আগে দৈনিক ১৫ থেকে ২০টি পাটি বিক্রি করতে পারতেন তিনি। এখন প্রতিদিন পাঁচটি করে পাটি নিয়ে বের হন। দিন শেষে এক থেকে দুটি পাটি বিক্রি হয়। আকারভেদে একেকটি পাটির দাম ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে।

পাটিশিল্পী গোপাল চন্দ্র দে’র ভাষ্য, এপ্রিল-মে মাস পাটি বিক্রির উপযুক্ত মৌসুম। কিন্তু লকডাউনের কারণে দোকানপাট বন্ধ থাকায় বিক্রিও বন্ধ।

গোপাল চন্দ্র বলেন, পাটিশিল্পের এমন দুর্দিন চলছে অনেক আগে থেকেই। করোনা সেটাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। আর কেউই এখন তার ছেলে-মেয়েকে এই পেশায় আনতে আগ্রহী হন না।

এ অবস্থায় করোনা পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য পাটিকরপাড়ায় কম দামে মুরতা সরবরাহের দাবি জানান আরেক পাটিকর ঝুনু রানী দে।

বিষয়টি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পাটিকরদের তালিকা করে তাদের শিগগির সহায়তা করার আশ্বাস দেন।

Comments

The Daily Star  | English

Netanyahu says Israel close to meeting its goals in Iran

JD Vance says US at war with Iran's nuclear programme, not Iran

20h ago