কমতে পারে বোরো ধানের উৎপাদন

মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) মতে, সাম্প্রতিক তাপদাহ ও কীটপতঙ্গের আক্রমণের কারণে বর্তমান ধান কাঁটার মৌসুমে বোরো ধানের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় এক দশমিক পাঁচ শতাংশ কমে এক দশমিক ৯০ কোটি টনে নেমে আসতে পারে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় বোরো ধান কাটছেন কৃষক। সম্প্রতি তোলা ছবি। ছবি: স্টার

মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) মতে, সাম্প্রতিক তাপদাহ ও কীটপতঙ্গের আক্রমণের কারণে বর্তমান ধান কাঁটার মৌসুমে বোরো ধানের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় এক দশমিক পাঁচ শতাংশ কমে এক দশমিক ৯০ কোটি টনে নেমে আসতে পারে।

কৃষি শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা মনে করছেন, তাপদাহের কারণে এ বছর দুই দশমিক পাঁচ কোটি টন শস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে বাংলাদেশকে বেশ বেগ পেতে হবে।

ইউএসডিএ’র ফরেন এগ্রিকালচার সার্ভিস (এফএএস) গত সপ্তাহে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

তবে বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয় আশা করছে যে শস্য কাঁটার মৌসুমে এ বছরের উৎপাদন গত বছরের উৎপাদনকে ছাড়িয়ে দুই কোটি টনেরও বেশি হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, গত বছরের উৎপাদন ছিল প্রায় এক দশমিক ৯৬ টন।

ইউএসডিএ’র মতে গত মৌসুমের উৎপাদন ছিল এক দশমিক ৯৩ কোটি টন।

দেশে বাৎসরিক ধান উৎপাদনের প্রায় ৫৫ শতাংশই আসে বোরো থেকে, আর কৃষকরা এপ্রিলের শেষের দিক থেকে এই ধান কাঁটা শুরু করেন।

এফএএস ঢাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশ থেকে বোরো ধান চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছে যে তারা এ বছর শস্যটির বাম্পার ফলন আশা করছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কিছু চাষি জানিয়েছেন যে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের স্বল্পকালীন তাপদাহের কারণে শস্যের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কৃষি মন্ত্রণালয় বর্তমানে তাপদাহের কারণে উৎপাদনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বের করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাপদাহের কারণে প্রায় এক লাখ টন বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে।

ইউএসডিএ’র দেওয়া ক্ষতির পরিমাণ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) অনুমিত পরিমাণের চেয়ে কম।

মার্কিন এজেন্সিটি জানিয়েছে, কৃষকরা এবারের মৌসুমে ৪৭ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছে। ডিএই’র মতে ৪৮ দশমিক ৮৩ লাখ হেক্টর জমিতে এই ধানের চাষ হয়েছে।

ডিএই’র মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ ইউএসডিএ’র দেওয়া উৎপাদন পূর্বাভাষ ও অনুমিত বোরো চাষের জমির পরিমাণের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ‘তাদের (ইউএসডিএ) অনুমানগুলো বাস্তবসম্মত নয়। এ বছরের উৎপাদন অনেক বাড়বে এবং আমরা মনে করি সার্বিক উৎপাদনের পরিমাণ দুই কোটির কম হবে না’।

স্থানীয় বাজারে চালের দাম বেশি হওয়ার কারণে কৃষকদের একটি অংশ এবার তাদের জমিতে গম, ভুট্টা ও সরিষা চাষের পরিবর্তে বোরো ধানের চাষ করেন।

আসাদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা হাইব্রিড ধানের চাষও বাড়তে দেখেছি। সব মিলিয়ে, ধান চাষের জন্য ব্যবহৃত জমির পরিমাণ সম্প্রসারিত হয়েছে।’

ইউএসডিএ’র দেওয়া হিসাব অনুযায়ী ২০২১-২২ বিপণন বর্ষে ধান চাষের জমির পরিমাণ এক দশমিক তিন শতাংশ বেড়ে এক দশমিক ১৬ কোটি হেক্টর হয়েছে।

অনুকূল আবহাওয়া, বীজ ও সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ, সুষ্ঠু সেচ ব্যবস্থা এবং কৃষি মন্ত্রণালয় ও ডিএই’র কাছ থেকে সার্বক্ষণিক সহায়তা প্রাপ্তি সাপেক্ষে উৎপাদনের হারও তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ বেড়ে গিয়ে তিন দশমিক ৫৮ কোটি টনে পৌঁছে যেতে পারে বলে তারা জানিয়েছেন।

ইউএসডিএ প্রাক-বর্ষার শস্য আউশ এবং বর্ষার আমন ধানের উৎপাদনের পরিমাণ তাদের পূর্বাভাষে বাড়িয়ে ধরেছে।

সরকার বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত, যেমন ব্রি ধান-৫০, ব্রি ধান-৫৪ ও ব্রি ধান-৮৪ ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষে কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে গেছে এবং এসব শস্যের ফলন বাড়াতে ও দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হাইব্রিড জাতের বীজ ও সার বিতরণ করেছে।

ইউএসডিএ জানায়, ‘কোভিড-১৯ মহামারি এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লকডাউনের কারণে ভোক্তারা নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য বেশি করে চাল মজুদ করছেন। যে কারণে স্থানীয় বাজারে এর দাম বেড়ে গেছে। বাজারে বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনার কারণেও দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, উচ্চ মূল্যের কারণে কৃষক বেশি দাম পেয়েছেন। কিন্তু শ্রমিকদের পেছনে খরচ বেড়ে যাওয়াতে লাভ অনেকাংশেই কমে গেছে।

‘আগামী কয়েক মাসের আবহাওয়ার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। কৃষক এ বছরের বোরো ধানের বীজ রোপণ করতে দেরী করে ফেলেছে। যে কারণে সামনের বর্ষা মৌসুমে এ বছরের উৎপাদনের ওপর অনেক বড় ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে।’

ইউএসডিএ বলেছে, মে’র দ্বিতীয় সপ্তাহে, বর্ষা মৌসুমের একেবারে শুরুর দিকে প্রায় ৫০ শতাংশ বোরো ধান কাঁটা হতে পারে।

তারা অনুমান করছে, ভালো শস্য কাঁটা এবং আউশ ও আমন ধানের মৌসুমে বর্ধিত উৎপাদনের কারণে এ বছর চালের আমদানি কমে পাঁচ লাখ টনে নেমে আসবে।

 

 

Comments

The Daily Star  | English
Islami Bank's former managing director Abdul Mannan

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

7h ago