সাংবাদিক রোজিনাকে হেনস্তা: সাংবাদিকদের বিক্ষোভ, বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা

CTG_Rozina_18May21.jpg
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে আটকে রেখে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন। ছবি: রাজীব রায়হান

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে আটকে রেখে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সাংবাদিকরা। এ ছাড়া, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও সামাজিক সংগঠন এবং বিশিষ্ট জন এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)। মানববন্ধন থেকে মামলা প্রত্যাহার, নিঃশর্ত মুক্তি ও রোজিনা ইসলামকে নির্যাতনকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।

সিইউজে’র সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম বলেন, ‘রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি চিত্র তুলে ধরে জাতির কল্যাণে কাজ করেছেন। সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ নয়।’

সিইউজে সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে। সেই সঙ্গে নির্যাতনে জড়িতদের অনতিবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে। না হলে, সারা দেশে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

এ সময় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ আলী আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

আজ দুপুরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে সিলেট ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (ইমজা)। এতে সভাপতিত্ব করেন ইমজার জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মঈন উদ্দিন মনজুর। বক্তব্য রাখেন সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকরামুল কবির, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ রেনু, ইমজার সাবেক সভাপতি কামকামুর রাজ্জাক রুনু, মইনুল হক বুলবুল ও মাহবুবুর রহমান রিপনসহ অনেকে।

তারা বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে একজন সাংবাদিককে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন ও অপদস্ত করা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

আজ সকালে রাজশাহীর সাহেববাজারের জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন সাংবাদিকরা। রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) আহ্বানে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে।

এতে সভাপতিত্ব করেন আরইউজে’র সভাপতি রফিকুল ইসলাম। সমাবেশ থেকে রোজিনা ইসলামের অবিলম্বে মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার দাবি করেন তারা। পাশাপাশি রোজিনা ইসলামকে নির্যাতনকারীদেরও বিচারের দাবি জানানো হয়।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান খান আলম বলেন, স্বাস্থ্য খাতের এক শ্রেণির গণকর্মকর্তারা দুর্নীতিতে লিপ্ত। তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের কারণে তারা আইনের তোয়াক্কা না করে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর নির্যাতন করেছেন। এ ঘটনার বিচার হওয়া দরকার।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রাশেদ রিপন বলেন, রেজিনা ইসলামের প্রতি সংঘটিত অন্যায়ের বিচার না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জনগণ।

এক বিবৃতিতে আরইউজে সভাপতি রফিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে রোজিনা ইসলামের অবদান স্বীকৃত। তিনি ইতোপূর্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতি নিয়ে অসংখ্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এ কারণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাকে নির্যাতন এবং হয়রানি করছেন। এটি স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে চরম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে।

এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন টাঙ্গাইলের সাংবাদিকরা। আজ দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

এতে বক্তব্য রাখেন টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক কাজী জাকেরুল মওলা, সাবেক সভাপতি ড. কামরুজ্জামান, আতাউর রহমান খান, সহসভাপতি তুহিন খান, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক কামনাশীষ শেখর, একুশে টিভির জেলা প্রতিনিধি কাজী তাজউদ্দিন রিপন, ডিবিসি চ্যানেলের জেলা প্রতিনিধি সোহেল তালুকদার প্রমুখ।

তিনি বলেন, ‘তদন্ত করে নির্যাতনের জড়িত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে সাংবাদিক সমাজ।’

দুপুরে কুড়িগ্রাম শহরে প্রেসক্লাবের সামনে এবং লালমনিরহাট শহরে মিশন মোড় এলাকায় মানববন্ধন করেন সাংবাদিকরা।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার, হামলাকারীদের বিচারের ব্যবস্থা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে জেলা প্রেসক্লাবের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করেন নোয়াখালী জেলার সাংবাদিকরা। এতে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক আলমগীর ইউছুফ, আবু নাছের মঞ্জু, আবুল হাশেম।

এই কর্মসূচিতে সহংতি প্রকাশ করেন বাংলাদেশ সাম্যবাদী আন্দোলন নোয়াখালী শাখার সম্বনয়ক তারকেশ্বর দেবনাথ নান্টু, উন্নয়ন সংগঠন প্রাণ’র প্রধান নির্বাহী নুরুল আলম মাসুদসহ অনেকে।

দুপুরে পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন জেলা সাংবাদিকরা। এতে বক্তব্য রাখেন পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন ব্যানার্জী, সাধারণ সম্পাদক জালাল আহমেদ, একুশে টিভির জেলা প্রতিনিধি ও জেলা টেলিভিশন র্জানালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম প্রিন্স।

নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আরও বিবৃতি দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস), হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি), বরিশাল ডিভিশনাল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-বিডিজেএসহ অনেক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।

Comments

The Daily Star  | English

3 arrested over killing of DU JCD leader near Suhrawardy Udyan

Masud Alam, deputy commissioner of Ramna Division Police, said the arrestees are outsiders

1h ago