রোজিনাকে অবিলম্বে-নিঃশর্ত মুক্তির দাবি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের

আদালতে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। ছবি: ফাইল ফটো

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেওয়াসহ চার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

আজ বুধবার দেওয়া বিবৃতিতে সংগঠনটি এই দাবি জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সচিবালয়ে কর্তব্যরত অবস্থায় প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয় গত সোমবার। অবরুদ্ধ তিনি সেখানে অসুস্থ হয়ে গেলেও, চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ পরদিন সকালে তাকে আদালতে নেয় এবং আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। এই পুরো ঘটনায় আমরা যারপরনাই ক্ষুব্ধ হয়েছি। রোজিনা ইসলামের ‘অপরাধ’, তিনি ব্রিটিশ আমলের দাপ্তরিক গোপনীয়তা আইন ১৯২৩ ভঙ্গ করে, অনুমতি ছাড়া, দাপ্তরিক তথ্য সংগ্রহ করেছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশে রয়েছে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯। এই আইন অনুসারে এসব দাপ্তরিক তথ্য পাওয়ার অধিকার কেবল সাংবাদিকের কেন, যেকোনো নাগরিকেরই রয়েছে। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, মন্ত্রণালয় অধুনা আইনের পরিবর্তে ঔপনিবেশিক আইনকে প্রণিধানযোগ্য ভাবছে। এই আইনকে সাক্ষী মেনে কুখ্যাত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা লিখিত হয়েছে। সরকার ও তার আমলাতন্ত্র গণতান্ত্রিক মানসকিতা ছুঁড়ে ফেলে ঔপনিবেশিক মানসিকতাকে শিরোধার্য করেছে।

সেখানে আরও বলা হয়েছে, আমরা জানি ও বুঝি রোজিনা ইসলামের মূল ‘অপরাধ’ ভিন্ন। তিনি চলমান অতিমারির মধ্যে ধারাবাহিকভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন রচনা করেছেন। তাই তাকে ‘বাগে পেয়ে’ ‘শাস্তি’ দিচ্ছে উন্মোচিত মুখের ঐক্যবদ্ধ দল। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নির্বাহী ও আমলাতন্ত্রের মধ্যে ঐক্য দেখা যাচ্ছে। কারণ স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের মধ্যে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত দুর্নীতিতেও উভয় পক্ষের যোগসাজশ রয়েছে। রোজিনার প্রতিবেদনে তাই উঠে এসেছে।

সবশেষে বিবৃতিদাতারা বলেন, আমরা মনে করি, রোজিনা কোনো অপরাধ করেননি। অপরাধ কারা করেছে, রোজিনা তা চিহ্নিত করেছেন তার প্রতিবেদনে। উপরন্তু সোমবারের ঘটনায় অপরাধ করেছে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা— রোজিনাকে অবৈধভাবে আটকে রেখে, শারীরিকভাবে নির্যাতন করে, অসুস্থতায় ঠেলে দিয়ে, চিকিৎসাবঞ্চিত রেখে এবং সর্বোপরি তার পেশাগত কাজে কাজে বাধা দিয়ে। রোজিনা ইসলামকে অপরাধী সাজানোর পুরো আয়োজনটিও ভয়াবহ ও প্রতিহিংসার দলিল। তাকে জোরপূর্বক আটকে রাখার বিষয়টিও ফৌজদারি অপরাধ। তার গ্রেপ্তার হওয়ার সচিত্র প্রতিবেদন থেকে সারাদেশের মানুষজন যা বোঝার, তাই বুঝেছে। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করতে থাকা এক জনসৈনিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবাজদের আস্ফালন হিসেবেই জনগণ একে পাঠ করেছে। সরকার তার একটা মন্ত্রণালয়ের জনবিরোধী তৎপরতা প্রকাশ্যে বিচার করে প্রমাণ দিক যে তারা গণতান্ত্রিক ও সুশাসনের পক্ষে আছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের চার দাবি হলো—

১। রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে

২। রোজিনা ইসলামকে যারা অন্যায়ভাবে আটকে রেখে নির্যাতন করেছেন ও পেশাগত কাজে বাধা দিয়েছেন, তাদের বিচার করতে হবে।

৩। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও সার্বিকভাবে সবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বাধাস্বরূপ দাপ্তরিক গোপনীয়তা আইন ১৯২৩ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ বাতিল করতে হবে।

৪। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।

আরও পড়ুন:

সাংবাদিক রোজিনার মামলা ডিবিতে

রোজিনাকে নিপীড়ন ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের মানববন্ধন

সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের মানসিকতা থেকে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা: সম্পাদক পরিষদ

সাংবাদিক রোজিনাকে হেনস্থাকারীদের বিচার ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ৫৭ নাগরিকের বিবৃতি

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা নয়, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে দেশের উপকার হবে: হানিফ

চুরি-দুর্নীতি সমস্যা নয়, প্রকাশ করলে সমস্যা

রোজিনা ইসলামের প্রতি আচরণ স্বাধীন সাংবাদিকতার টুঁটি চেপে ধরার নামান্তর: টিআইবি

রোজিনাকে হেনস্তাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করবে পরিবার

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে রিপোর্ট করায় আমার সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে: রোজিনা

কারাগারে নেওয়া হচ্ছে সাংবাদিক রোজিনাকে

সাংবাদিক রোজিনার রিমান্ড নামঞ্জুর, কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

সাংবাদিক রোজিনা আদালতে, ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন

সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা

সাংবাদিক রোজিনাকে হেনস্তা: শাহবাগ থানার সামনে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে থানায় নেওয়া হয়েছে

Comments

The Daily Star  | English

Russia warns strike on Iran's Bushehr nuclear plant could cause 'Chernobyl-style catastrophe'

Iran and Israel traded further air attacks on Thursday as Trump kept the world guessing about whether the US would join Israel's bombardment of Iranian nuclear facilities.

17h ago