রোজিনাকে মুক্তি দিন, দোষীদের বিচার করুন: বিএফইউজে-ডিইউজে

প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন ও কারাগারে পাঠানোয় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) নেতারা।

প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন ও কারাগারে পাঠানোয় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) নেতারা।

আজ বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএফইউজে ও ডিইউজে আয়োজিত মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতারা এসব দাবি জানান। এসময় তারা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানান।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকে রেখে হেনস্তা ও নির্যাতনের ঘটনা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবহিত ছিল অভিযোগ করে বিএফইউজে ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, ‘এ সরকার মুক্ত সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে। এ সরকার দুর্নীতিবাজদের পক্ষে।’

তিনি সুস্থ সাংবাদিকতা পুনরুদ্ধার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এর আগে, সাগর-রুনি হত্যা মামলার বিচারের দাবিতে সাংবাদিকদের আন্দোলন কারও কারও বেইমানির কারণে নস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল।’

রোজিনা ইসলামকে দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বংশীবাদক উল্লেখ করে শওকত মাহমুদ বলেন, ‘রোজিনা ইসলাম সরকারের অনেক দুর্নীতি উন্মোচন করেছেন। এজন্য তার ওপর সরকারের ক্ষোভ ছিল। তার কণ্ঠরোধ করার জন্যই তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে এবং জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

তিনি অবিলম্বে রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দিয়ে তাকে হেনস্থাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান।

ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোজিনা ইসলাম ও সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীসহ কারাবন্দী সব সাংবাদিকের মুক্তি দিন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকরা তথ্য চুরি করে না। তথ্য উদ্ধার করে। তথ্য লুকিয়ে রাখে দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা। মুক্ত সাংবাদিকতা এখন জেলের খাঁচায় বন্দি।’

‘সাংবাদিকতায় এমন খারাপ সময় আর দেখিনি’ উল্লেখ করে সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, ‘মিডনাইট সরকারকে বিদায় না জানালে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ হবে না।’

বিএফইউজে মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন বলেন, ‘রোজিনা ইসলামকে যেভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়ে কারাবন্দী করা হয়েছে, তা অতীতের সব নির্যাতনকে ম্লান করে দিয়েছে। এটা গোটা জাতির জন্য লজ্জার।’

তিনি আরও বলেন, ‘অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিন। বন্ধ গণমাধ্যমগুলো খুলে দিন। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামসহ সকল কারাবন্দী সাংবাদিকের অবিলম্ব মুক্তি দিন।’

ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রোজিনা ইসলামকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে, এ সরকার স্বাধীন সাংবাদিকতাকে হত্যা করতে চায়। যা সাংবাদিক সমাজ কখনোই মেনে নেবে না।’

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, ‘এ সরকার বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন ও সংসদ ধ্বংস করেছে। গণমাধ্যম ভরসা ছিল। এখন সেটিও ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে।’

তিনি রোজিনা ইসলামকে হেনস্থা ও গ্রেপ্তারের পর নারীবাদীদের চুপ থাকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এবং রোজিনা ইসলামসহ সব কারাবন্দী সাংবাদিকের মুক্তির দাবি জানান।

অবিলম্বে রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি বিএফইউজের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন গাজীসহ সব কারাবন্দী সাংবাদিকের মুক্তির দাবি জানান নেতারা।

ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, সাবেক সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভী, বিএফইউজের সহ-সভাপতি মোদাব্বের হোসেন, ডিইউজের সহ-সভাপতি শাহীন হাসনাত ও রাশেদুল হক, সাংবাদিক নেতা আমীরুল ইসলাম কাগজী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সাব এডিটরস কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হৃদয়, কারা নির্যাতিত ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, ডিইউজের দপ্তর সম্পাদক ডি এম আমিরুল ইসলাম অমর ও সাংবাদিক নেতা সাখাওয়াত হোসেন ইবনে মঈন চৌধুরী।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ খায়রুল বাশার, সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশীদ আলম, দপ্তর সম্পাদক তোফায়েল হোসেন, নির্বাহী সদস্য আব্দুস সেলিম, এ কে এম মহসীন, জাকির হোসেন, ডিইউজের সাবেক সহ-সভাপতি সৈয়দ আলী আসফার, ডিইউজের নির্বাহী সদস্য জেসমিন জুঁই প্রমুখ।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago