রপ্তানির জন্য সাতক্ষীরায় সরকারিভাবে হিমসাগর আম সংগ্রহ শুরু
সাতক্ষীরায় সরকারিভাবে হিমসাগর আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাধবকাটির একটি আম বাগান থেকে আম সংগ্রহ শুরু হয়। এসব আম ইতালিতে রপ্তানি করা হবে।
সকাল ১১টার দিকে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল হিমসাগর আম সংগ্রহের উদ্বোধন করেন। এনএইচবি করপোরেশন ও তাশফিক ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে চার হাজার কেজি হিমসাগর আম ইতালিতে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরায় চলতি মৌসুমে চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে পাঁচ হাজার ২৯৯টি আম বাগানে ৪০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ৫০০ মেট্রিক টন বিদেশে রপ্তানি করার কথা আছে। গত ১ মে থেকে সাতক্ষীরা জেলায় উৎপাদিত গোবিন্দভোগ আম সরকারিভাবে সংগ্রহ শুরু হয়। ৮ মে ৫০০ কেজি গোবিন্দভোগ আম প্রথমবারের মতো সাতক্ষীরা থেকে জার্মানিতে রপ্তানি করা হয়।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়া এলাকার আম চাষি হাফিজুর রহমান জানান, আমের ফলন বেশ ভালো। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় আমের আকার বড় হয়নি। পাশাপাশি প্রচণ্ড তাপদাহে আম আগেভাগে পেকে ঝরে যাচ্ছে।
তিনি জানান, বিদেশি বায়াররা প্রতি মণ আমে দুই হাজার ৮০০ টাকা দিলেও, ওজনে কম হওয়ায় হয়তো এবার আম বিক্রি করে লাভ হবে না।
সাতক্ষীরার সদর উপজেলার কুকরালি এলাকার চাষি মুকিম সরদার জানান, গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানে গত বছর বিপুল পরিমাণ আম গাছের ক্ষতি হয়েছে। ওই ঝড়ে চাষিদের কোটি টাকার ক্ষতি হয়। চাষিরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার আম চাষে বিশেষ নজর দিয়েছিল। কিন্তু সময়মতো বৃষ্টি না হওয়া আম আকারে হয়েছে ছোট। ফলে আমের ওজন কমে গেছে।
কলারোয়া উপজেলার পুটনি এলাকার আম চাষি দাউদ মোল্লা জানান, নিরাপদ বিষ মুক্ত ও পরিবেশবান্ধব আম উৎপাদন ও বিদেশে রপ্তানির জন্য সলিডারিডাড ও বেসরকারি সংস্থা উত্তরণের সহযোগিতায় জেলার সাতটি উপজেলায় তারা ৩৫০ জন আম চাষি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আম পেড়ে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে গ্রেডিং, সর্টিং, প্রসেসিং, প্যাকেজিং, পরিবহনের মাধ্যমে রপ্তানি করা হচ্ছে।'
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সাতক্ষীরা অঞ্চল থেকে নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত আম রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ভাল পরিবেশ ও নির্ধারিত ১৪ জন বায়ারের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চললে করোনার মধ্যে ৫০০ মেট্রিক টন বিভিন্ন জাতের আম রপ্তানি করা যাবে।'
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক নূরুল ইসলাম বলেন, 'সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি আমের স্বাদই আলাদা। এসব আমের বিশেষ চাহিদা আছে দেশে ও বিদেশে।'
তিনি বলেন, 'অনাবৃষ্টির কারণে আম আকারে ছোট হয়েছে। কম হচ্ছে ওজন। তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় আম আগে পেকে ঝরে পড়েছে। ফলে কৃষকরা কিছুটা অসুবিধার মধ্যে আছে।'
তিনি জানান, এ বছর পোকা দমনের জন্য ফেরামন ট্র্যাপ ব্যাবহার করে জেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে আম আবাদ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ১০ থেকে ১১ মেট্রিক টন আমের ফলন আশা করা হচ্ছে।
Comments