মহামারিকালে সঞ্চয় ও ব্যয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
চলমান করোনাভাইরাস মহামারি জীবন ও জীবিকাকে এক চরম অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত করছে। যেহেতু ভাইরাস খুব শিগগির আমাদের ছেড়ে যাচ্ছে না, তাই এটি অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং চাকরিকে হুমকির মধ্যে রাখবে।
এই অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে অনেকে বড় ধরনের বিনিয়োগের জন্য তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করছেন। অনেকে আবার নতুন করে ঋণগ্রহণ বা তাদের ক্রেডিট কার্ডের ঋণ বাড়ানো থেকে সরে আসছেন।
কিন্তু আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী কৌশল অনুসরণ করা যেতে পারে? সঙ্কটের এই সময়ে সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং ব্যয় সম্পর্কিত কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হোসেন আহমেদ এনামুল হুদা পরামর্শ দিয়েছেন যে, খুচরা পর্যায়ের বিনিয়োগ পরিকল্পনার জন্য মহামারি একটি বড় ধাক্কা। তাই একজন বিনিয়োগকারী কিছু কৌশল অনুসরণ করতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘মোটের ওপর, নিষ্পত্তিযোগ্য আয়ের স্তর কমে গেছে এবং অর্থনীতি ভালো অবস্থানে যাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করছে।’
‘এইরকম অনিশ্চয়তার মধ্যে নতুন ফ্ল্যাট বা গাড়ি কেনার মতো নিজের বিবেচনামূলক ব্যয় থেকে দূরে থাকা উচিত’, বলেন তিনি।
দ্বিতীয় কৌশলটি হলো সতর্কতামূলক উদ্দেশ্যে ভবিষ্যতের চিকিৎসা খরচ এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের জন্য আরও বেশি অর্থ সাশ্রয় বা সঞ্চয় করা।
হুদা জানান, নগদ ধরনের সম্পদে বেশি তহবিল বরাদ্দের মাধ্যমে মানুষকে তাদের পোর্টফোলিও ভারসাম্যপূর্ণ করা উচিত।
‘তারল্য অনিশ্চিত সময়ে অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং পোর্টফোলিওতে স্টক বা বন্ড তোলার সময় এই সম্পদের তারল্যের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত’, যোগ করেন তিনি।
বিশ্বব্যাপী ট্রেজারি সিকিউরিটিগুলো সাধারণত খুব তরল থাকে। বাংলাদেশের সমতাভিত্তিক বাজারের জন্য, বাজার মূলধনের মাধ্যমে স্টক শ্রেণীবদ্ধকরণ এবং দৈনিক ট্রেডিং ভলিউমের মতো মূল তারল্য বিষয়ে খোঁজ রাখা উচিত।
ক্ষেত্র পরিবর্তনের নীতিগুলো হতাশাব্যঞ্জক সময়ের মধ্যেও তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে।
আমানতের ক্ষেত্রে অন্যতম বৃহত্তম ব্যাংক ডাচ বাংলা ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিভাগের (খুচরা ও এসএমই) নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ক্রেডিট বিভাগের প্রধান মাসুদ হোসেন বলেন, ‘পুরো পৃথিবী জানে না এরপরে কী হবে। বরং আমাদের এই নিয়মটি অনুসরণ করতে হবে যে, এক টাকা সঞ্চয় মানে এক টাকা উপার্জন। সুতরাং আমাদের আপাতত অতিরিক্ত ব্যয় কমানো উচিত।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুক্তা রানি সরকার জানান, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে বৈচিত্র্যময় বিনিয়োগ করার বিষয়টি বিবেচনা করা ‘উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ ওসমান ইমাম জানান যে, ব্যাংকে আমানতের সুদের হার কমেছে। তবুও, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো আমানতের ওপর প্রায় ছয় শতাংশ হারে মুনাফা দেয়, যা বেসরকারি ব্যাংকগুলোর চেয়ে বেশি।
অতএব, সরকারি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকগুলোতে আমানত রাখা বিনিয়োগের একটি অপশন হতে পারে।
তবে উচ্চ মুনাফার অফার দিয়ে আমানতকারীদের প্রলুব্ধ করে এমন নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সাবধান থাকা উচিত।
‘কোভিড সময়কালে এ জাতীয় বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হবে’, বলেন ওসমান ইমাম।
ইমাম আরও জানান যে, শেয়ার বাজার বিনিয়োগের জন্য একটি বিকল্প হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘তবে অনভিজ্ঞ এবং সহজ সরল বিনিয়োগকারীদের সেখানে যাওয়া উচিত নয়। যাদের তহবিলের স্বল্পতা রয়েছে, তাদেরও সেখানে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। তারা সুবিধামতো মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন।’
ব্যয় করার বিষয়ে ইমাম বলেন যে, এই মহামারি চলাকালীন সময়ে বসবাসের খরচ কমানোর চেষ্টা করা উচিত।
তিনি জনগণকে ক্রেডিট কার্ডের ঋণ সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
‘ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটার প্রলোভন নিয়ন্ত্রণ করা এবং করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালীন ঋণ না নেওয়াটা ভালো হবে’, যোগ করেন ইমাম।
প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সুমন আলী
Comments