যুক্তরাজ্যের বেসরকারি খাত থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কিনতে চায় বাংলাদেশ
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে করোনাভাইরাসের টিকা চেয়ে ইতিবাচক সাড়া পায়নি বাংলাদেশ। ফলে সরকার এবার যুক্তরাজ্যের বেসরকারি খাত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার ২০ লাখ ডোজ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা গতকাল শনিবার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, লন্ডনের বাংলাদেশ হাই কমিশন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক টিকা সরবরাহকারীর সঙ্গে যোগযোগ করেছে। সম্প্রতি ঢাকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ওই সরবরাহকারীর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন।
টিকার দামের ব্যাপারে আলোচনা চলছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সরবরাহকারী কোম্পানির কাছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কিছু প্রশ্ন ছিল। কোম্পানিটি সেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।’
দেশে টিকার বর্তমান মজুদ একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে এলেও ২০ লাখ মানুষ এখনো টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাননি। ফলে সরকার টিকার জন্য মরিয়া হয়ে বিভিন্ন দেশের কাছে আবেদন জানাচ্ছে।
শুরুতে ভারতের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইন্সটিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ কেনে বাংলাদেশ। কিন্তু, ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায় এবং টিকা সংকট তৈরি হওয়ায়, দেশটির সরকার গত মার্চ থেকে টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়।
টিকার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার কাছেও আবেদন জানিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু, এখনো দেশ দুটির কাছ থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অক্সফোর্ডের টিকার অতিরিক্ত ৮০ মিলিয়ন ডোজ রয়েছে। কিন্তু, তিনি অনানুষ্ঠিকভাবে জানতে পেরেছেন, মার্কিন সরকার বাংলাদেশের আগে ভারত, ব্রাজিল, স্পেন ও ইন্দোনেশিয়াকে সহায়তা করার চিন্তা করছে। কারণ ওইসব দেশে মৃত্যু ও সংক্রমণের সংখ্যা বেশি।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মৃত্যু ও সংক্রমণ কম হতে পারে। তবে, ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর আমরা সমস্যায় পড়েছি। আমাদের টিকার দরকার।’
রপ্তানি নিষিদ্ধ থাকায় গত সপ্তাহে এক ফোনালাপে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরকে অনুদান হিসেবে টিকার ১৫ লাখ ডোজ দেওয়ার অনুরোধ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
যুক্তরাজ্যের কাছে বারবার টিকার জন্য আবেদন জানানোর পর সম্প্রতি বাংলাদেশকে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে যুক্তরাজ্য সরকার কোনো টিকা সরবরাহ করতে পারছে না। বাংলাদেশকে দেশটির বেসরকারি খাতের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়।
২০২০ সালের জুলাইয়ে হাইকমিশন বাংলাদেশে মানবদেহে টিকা পরীক্ষার জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে অনুরোধ জানায়। কিন্তু, কোম্পানিটি তখন ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে তাদের এ সংক্রান্ত চুক্তি থাকার কথা জানায়।
হাইকমিশনের কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যদিও এখন আমরা বেসরকারি খাতের সঙ্গে আলোচনা করছি, আমরা আবারও এ টিকার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানাবো।’
গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আইটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে মোমেন যুক্তরাজ্যের কাছে জরুরিভিত্তিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার আবেদন জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি খুব বেশি চাইছি না, তাদের কাছে মাত্র এক দশমিক ছয় মিলিয়ন অ্যাস্ট্রাজেনেকা ডোজ চাইছি...। তাদের উচিত দ্রুত বাংলাদেশে এই ডোজগুলো দেওয়া, যাতে মানুষ তাদের দ্বিতীয় ডোজটি নিতে পারে।’
যুক্তরাজ্য সরকারকে আরও আন্তরিক হওয়ার বার্তা দিয়ে ড. মোমেন বলেছেন, ‘তাদের কমনওয়েলথ সদস্য দেশগুলোকে সহায়তা করা উচিত।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের ভালো বন্ধু এবং যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে অনেক বাংলাদেশি অবদান রাখছেন। ‘... তাই যুক্তরাজ্যের এগিয়ে আসা উচিত।’
গত সপ্তাহে চীন বাংলাদেশকে সিনোফার্মের টিকার পাঁচ লাখ ডোজ সরবরাহ করেছে এবং আরও ছয় লাখ ডোজ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। চীনের সিনোফার্ম এবং রাশিয়ার স্পুটনিক ভি টিকা কেনার চুক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম।
আরও পড়ুন:
জরুরিভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের কাছে ১.৬ মিলিয়ন ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা চেয়েছে বাংলাদেশ
Comments