উত্তরাঞ্চলে কৃষিশিল্পে বাজেট সহায়তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন

রাজশাহীর অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এমন উদ্যোগ নেওয়া উচিত যা দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর কৃষি ও কৃষিশিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এএনকে নোমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা দেশের বেশিরভাগ খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করে। অথচ তারা সেচের পানি ও সহায়ক বিপণন ব্যবস্থায় অভাবে নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন।’

‘এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যেখানে কৃষক তার সেচের পানি নিয়ে বা তাদের পণ্য বিক্রির জন্য কোনো দুশ্চিন্তা করবে না,’ যোগ করেন তিনি।

কৃষিক্ষেত্রে পানি নিশ্চিত করতে সরকার রাজশাহীর পদ্মাসহ কয়েকটি নদীতে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে উল্লেখ করে অধ্যাপক নোমান বলেন, ‘এই উদ্যোগগুলো আত্মঘাতী হবে।’

তিনি মনে করেন, এ ধরনের প্রকল্প থেকে যারা লাভবান হবেন কেবল তারাই এটি বাস্তবায়ন করছেন।

তার মতে, ‘বাঁধ তৈরি না করে কৃষিকাজে নদীর পানি ব্যবহার করার প্রযুক্তিগত ও আর্থিক ক্ষমতা আমাদের দেশের রয়েছে। আমাদের যা প্রয়োজন তা হলো- সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত ও তা বাস্তবায়নের সংকল্প।’

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেছেন, সরকারকে প্রথমে কৃষিক্ষেত্রে কতটা পানি প্রয়োজন তা নিরূপণ করে তারপর প্রয়োজন মতো পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে হবে।

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ইলিয়াস হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আসন্ন বাজেট প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয়। বরং এ অঞ্চলের বেকারদের, বিশেষ করে, করোনায় যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদের কর্মসংস্থানের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।’

উত্তরাঞ্চলের প্রধান সমস্যাটি হলো- এর গ্রামাঞ্চলে অর্থনৈতিক তৎপরতা কম। সম্প্রতি বেকার হয়ে পড়া মানুষের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

অধ্যাপক ইলিয়াস এই সমস্যার সমাধানে সামাজিক সুরক্ষা বরাদ্দের সম্প্রসারণ ও এ ধরনের কর্মসূচির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন ও কৃষিপণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টির কথাও বলেছেন।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান ডেইলি স্টারকে জানান, তারা ইতোমধ্যে এই অঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রে নানা উদ্যোগের বিবরণ দিয়ে সরকারের কাছে ৪৫ দফা প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।

প্রস্তাবনায় তিনি আলু সংরক্ষণে হিমঘরের বিদ্যুৎ বিলে সহায়তা, রেশম ব্যবসায়ী ও উৎপাদক, চাল ও পাটকল ইত্যাদির জন্য বিভিন্ন সুবিধার দাবি জানিয়েছেন।

‘উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো কেবল কৃষিনির্ভর শিল্পের জন্য উপযুক্ত’ উল্লেখ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কৃষি ছাড়া অন্যান্য যে কোন শিল্প যেমন পোষাক কারখানা বা চামড়া শিল্প স্থাপন করলে কেবল এই অঞ্চলের কৃষিজমিই হ্রাস পাবে।’

সুজনের পাবনা ইউনিটের সভাপতি আবদুল মতিন খান গ্রামাঞ্চলে কাজের সুযোগ তৈরি ও কৃষিতে আরও শিল্পায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মহামারি শুরু হওয়ার পরে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। তারা পরিবারের ওপর বোঝা হয়ে আছেন।’

তিনি মনে করেন, ‘গ্রামাঞ্চলে আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করার জন্য বাজেটে বরাদ্দের প্রয়োজন।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়ের যুগ্ম-সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির নিজস্ব সুবিধা থাকতে হবে।’

 

(পাবনা থেকে আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রবিউল হাসান এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন।)

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago