দুবার জিডি করেও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ, পল্লবীতে নিহত ব্যবসায়ীর পরিবারের অভিযোগ

গত ছয় বছরে তিন বার হামলার শিকার হয়ে এবং অসংখ্য বার হত্যার হুমকি পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন রাজধানীর পল্লবীতে খুন হওয়া ব্যবসায়ী সাহিনুদ্দিন। গত ১৬ মে আরেক দফা হামলায় প্রাণ হারাতে হয়েছে তাকে।
murder logo
প্রতীকী ছবি: স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

গত ছয় বছরে তিন বার হামলার শিকার হয়ে এবং অসংখ্য বার হত্যার হুমকি পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন রাজধানীর পল্লবীতে খুন হওয়া ব্যবসায়ী সাহিনুদ্দিন। গত ১৬ মে আরেক দফা হামলায় প্রাণ হারাতে হয়েছে তাকে।

এর আগে গত নভেম্বরেও সংঘবদ্ধ একদল দুর্বৃত্ত সাহিনুদ্দিনের ওপর হামলা চালায়। সেবার প্রাণে বেঁচে গেলেও এবার আর ভাগ্য সহায় হয়নি। ওই একই দলের হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন তিনি।

সাহিনুদ্দিনের মা আকলিমা বেগমের অভিযোগ, পুলিশের অবহেলাই তার ছেলের মৃত্যুর কারণ।

গতকাল শনিবার দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘এমন হামলাকারীদের কাছ থেকে পুলিশ আর্থিক সুবিধা নেয়। এ জন্যই আমার ছেলেকে মরতে হয়েছে। জিডি করার পরও পুলিশ তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ঘটনাস্থলের পাশেই চার-পাঁচজন পুলিশ ছিল। কিন্তু, তারা তাকে বাঁচানোর কোনো চেষ্টাই করেনি।’

পুলিশ নিরাপত্তা দিলে তার নাতিকে এখন এতিম হতে হতো না বলে মন্তব্য করেন আকলিমা।

পল্লবী থানার পুলিশ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, নিরাপত্তা চেয়ে থানায় পৃথক দুটি জিডি করেছিলেন সাহিনুদ্দিন। কিন্তু, পুলিশ বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে তিনি আর থানায় আসেননি।

ওসি বলেন, ‘কী ধরনের নিরাপত্তা চাওয়া হচ্ছে জানতে এরপর আমরা পুলিশের একটি টিম পাঠাই তার বাড়িতে। পরে জানতে পারি, জিডি করার পর তিনি নিজেই হামলাকারীর সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। তাই পুলিশের আর কিছু করার ছিল না এ বিষয়ে।’

খুনের ঘটনাস্থলের পাশে পুলিশের উপস্থিতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই স্থানের কাছাকাছি কোনো পুলিশ ছিল না। ঘটনার ব্যাপারে জানা মাত্রই পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে।’

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুসারে, মাদক, অস্ত্র, বিস্ফোরণ, নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাসহ সাহিনুদ্দিনের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় প্রায় ২৬টি মামলা রয়েছে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়। ১১ মে জামিন পান তিনি।

হত্যার পটভূমি

পল্লবীর উত্তর কালশীর বুড়িরটেকের আলিনগর এলাকায় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালের ‘আলিনগর আবাসিক এলাকা’ নামের একটি প্রকল্প আছে। প্রকল্পের সীমানার ভেতর সাহিনুদ্দিনের পরিবারের প্রায় দশ একর জমি রয়েছে। এটি হাভেলি প্রোপার্টি ডেভেলপার লিমিটেড পরিচালিত একটি প্রকল্প।

Ex_MP_M_A_Awal.jpg
সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল। ছবি: সংগৃহীত

ওই জমি বিক্রি করার জন্য সাহিনুদ্দিনের বাবা জয়নুদ্দিনকে দীর্ঘদিন ধরে চাপ দিয়ে আসছিল হাভেলি প্রোপার্টি। পরিবারের অভিযোগ, জয়নুদ্দিন জমি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় আউয়াল পেশী শক্তি প্রয়োগ করতে শুরু করেন।

২০১৫ সালের শুরুর দিকে ঢাকার একটি আদালতে এ বিষয়ে মামলা করেন জয়নুদ্দিন। এ মামলা নিয়ে সাবেক এমপি আওয়ালের সঙ্গে জয়নুদ্দিনের ছেলে সাহিনুদ্দিন ও মাইনুদ্দিন বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। আওয়াল তার ‘ক্যাডারদের’ ব্যবহার করে দুই ভাইকে ভয় দেখাতে শুরু করেন। ক্রমাগত হুমকি পেয়ে একই বছরের জুনে তাদের মা নিরাপত্তা চেয়ে একটি জিডি করেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

এরপর থেকে আউয়ালের লোকজন কয়েক দফায় সাহিনুদ্দিনের ওপর হামলা চালিয়েছে।

সাহিনুদ্দিনের পরিবারের দাবি, গত বছরের নভেম্বরে চাপাতি হামলার শিকার হওয়ার পর সাহিনুদ্দিন পল্লবী থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। এমনকি হামলাকারী সুমনকে আটকের কয়েকদিন পরেই ছেড়ে দেওয়া হয়।

খুনে অংশ নেয় জন

তদন্তারীরা জানিয়েছেন, ঘটনার তিন-চার দিন আগে হামলাকারীরা আউয়ালের কলাবাগান অফিসে বসে সাহিনুদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

নাম গোপন রাখার শর্তে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ওই কথোপকথনের বরাত দিয়ে বলেন, ‘আক্রমণকারীরা বলছিল, তারা আগে সাহিনুদ্দিনকে ছুরিকাঘাত করলেও তিনি মারা যাননি। তবে এবার তারা তাকে জীবিত থাকতে দেবে না। আউয়ালের ক্যাডার সুমন, মানিক, মনির, ইকবাল, মুরাদ ও হাসান এই হত্যাকা-ে অংশ নেন। খুনের পরিকল্পনার সময় আউয়াল বলেন, যত টাকা লাগে তিনি দেবেন। তার শুধু কাজ দরকার।’

হত্যার ছায়া তদন্ত পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ওই র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, হত্যার জন্য আউয়ালের কাছ থেকে টাকা নেন সুমন। কিছু টাকা অন্য আক্রমণকারীদেরও দেন তিনি। 

র‌্যাব সদর দপ্তরের পরিচালক (গোয়েন্দা) লেফট্যানেন্ট কর্নেল খাইরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা এখন দলটির দুই পলাতক সদস্যকে খুঁজছেন। শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) এখন এ মামলার তদন্ত করছে। এখন পর্যন্ত আউয়ালসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন ইতোমধ্যেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আউয়ালকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে বলে ডিবির উপ-কমিশনার মানস কুমার পোদ্দার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা ওই ঘটনার বিষয়ে কিছু তথ্য পেয়েছি এবং এগুলো বিশ্লেষণ করে দেখছি। এরপর আমরা খুনের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারব।’

 

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

 

আরও পড়ুন:



ছেলের সামনে বাবাকে হত্যা: পল্লবীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক আসামি নিহত

ছেলের সামনে বাবাকে হত্যা: সাবেক এমপি আউয়াল গ্রেপ্তার

ছেলের সামনে বাবাকে হত্যা: প্রধান আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

Comments

The Daily Star  | English

Chief adviser meets cricketers after 'historic success' in Pakistan

Bangladesh national team cricketers, along with coaching staff, and Bangladesh Cricket Board (BCB) officials, started from the BCB headquarters in Mirpur at noon today and are on their way to meet Professor Muhammad Yunus, chief adviser to the interim government, at his office in Tejgaon.

3h ago