আগামী বাজেটে রেকর্ড পরিমাণ বিদেশি ঋণ সহায়তা

মহামারির বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যেই টানা দ্বিতীয় বারের মতো বাজেট নিয়ে কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের মূলমন্ত্র হবে, সুদিন থাকতে তার পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করা।
budget

মহামারির বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যেই টানা দ্বিতীয় বারের মতো বাজেট নিয়ে কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের মূলমন্ত্র হবে, সুদিন থাকতে তার পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করা।

এই মুহূর্তে রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ সহায়তা পাচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে উন্নয়ন অংশীদাররা মহামারির কারণে সৃষ্ট মন্দা থেকে বের হয়ে আসতে বাংলাদেশের দিকে উদার হাতে এগিয়ে এসেছে।

দেশের ব্যাংকগুলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত তারল্য নিয়ে অপেক্ষা করলেও মহামারিতে অর্থনৈতিক অনিশ্চিয়তায় ঋণ দেওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে না।

অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ায় আগামী বাজেটের সিংহভাগ অর্থ জোগান দিতে মন্ত্রণালয়ের কাছে এই দুটি উৎসই মূলত স্বর্ণের খনি হিসেবে কাজ করবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বরাতে জানা যায়, সরকার ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশি তহবিল থেকে রেকর্ড পরিমাণ ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা (প্রায় ১৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার) ব্যবহার করার ব্যাপারে আশাবাদী। যা গত বছরের তুলনায় ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।

এই মুহূর্তে প্রায় ৫০ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক অনুদান পাইপলাইনে রয়েছে। এছাড়াও বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদাররা মহামারির মধ্যে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

আশা করা হচ্ছে, আসন্ন বাজেট অর্থায়নের জন্য ব্যাংকগুলো ৭৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা দেবে। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ কম।

ব্যাংক ছাড়াও অন্যান্য উৎস থেকে ৩৭ হাজার কোটি টাকা আহরণ করবে সরকার। যা চলতি বাজেটের তুলনায় ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।

এবারের বাজেট ঘাটতির হার (সরকারের আয় ও ব্যয়ের ব্যবধান) হবে জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ, যা সম্প্রতি বছরগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

উন্নয়নশীল দেশের বাজেটে ঘাটতি থাকা খুব অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কারণ, সরকারকে অবকাঠামো তৈরি ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য প্রচুর পরিমাণে অর্থ ব্যয় করতে হয়। সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ ও অনুদান গ্রহণের মাধ্যমে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে থাকা ঘাটতি পূরণ করে থাকে।

তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতে এই ঘাটতির হার ৫ শতাংশের মধ্যে থাকা উচিত। এই হারকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বলে বিবেচনা করা হয়।

বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবে বাজেটের খসড়া তৈরির সময় ৫ শতাংশ ঘাটতি ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু প্রতি অর্থবছরের শেষে প্রকৃত ঘাটতি ৪ শতাংশের মতো থাকে। মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলো তাদের জন্য বরাদ্দ করা বাজেটের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই এমন হয়।

তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে বাজেটের ঘাটতি পাঁচ শতাংশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এ বছরের পূর্বাভাষ অনুযায়ী তা ছয় শতাংশের বেশি হতে পারে।

তবে এখনও এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার কারণ নেই।

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘কারিগরি দিক দিয়ে চিন্তা করলে বাজেটে ছয় শতাংশ ঘাটতি স্বাভাবিক সময়েও চিন্তিত হয়ে পড়ার মতো হার না। আর বর্তমানের জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক মন্দার ক্ষেত্রে তো কথাই নেই।’

তিনি জানান, যেসব খাতে মহামারির কারণে অতিরিক্ত তহবিলের প্রয়োজন সেসব খাতে যতক্ষণ পর্যন্ত এই ছয় শতাংশ ঘাটতি যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।

মহামারির কারণে প্রাধান্য পাওয়া খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন এবং কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের (সিএমএসএমই) প্রতিষ্ঠানগুলো।

জাহিদ হোসেন আরও জানান, এসব খাতে খরচ বৃদ্ধির কারণে বাজেটে ঘাটতি বাড়লে তা থেকে উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উপকার পাওয়া যাবে।

গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘২০২১-২২ অর্থবছরে মহামারির কারণে সরকারের বর্ধিত খরচ ও রাজস্ব সংগ্রহ কমে যাওয়া সত্ত্বেও তেমন কোনো দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি নেই। বস্তুত, ঋণ ও জিডিপির অনুপাত একটি স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে রয়েছে।’

২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রাজস্ব সংগ্রহের হার আগের বছরের তুলনায় ছয় দশমিক চার শতাংশ বেড়েছিল। কিন্তু এরপর দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে এই গতি বিঘ্নিত হয় বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সাবেক গবেষণা পরিচালক জাইদ বখত জানান, বেশিরভাগ দেশই একটি পরিবর্ধনশীল অর্থায়ন কৌশল অবলম্বন করছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

‘এক দিকে সবাই বলছে, বাজেটে ঘাটতি রেখে হলেও অর্থনীতিকে সুসংহত রাখতে এবং স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে ব্যয় করতে হবে। অপরদিকে, আমাদের কর বনাম জিডিপির অনুপাত খুবই কম এবং সাম্প্রতিক সময়ে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাহলে, বাড়তি তহবিল কোন উৎস থেকে পাওয়া যাবে?’

অসংখ্য প্রণোদনা প্যাকেজের কারণে অর্থনীতিতে টাকার সরবরাহ বেড়ে গেছে, যা অবমূল্যায়নজনিত ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দিয়েছে।

বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত জাইদ বখত বলেন, ‘কাজেই, একটি কম খরচের উৎস হিসেবে বৈদেশিক ঋণকে বিবেচনা করছে সরকার। এ ক্ষেত্রে যৌক্তিক উপসংহার এটাই যে, বাজেটের ঘাটতি পূরণের জন্য বৈদেশিক ঋণ ব্যবহার করা হবে।’

তবে আগামী অর্থবছরের জন্য ধরে রাখা বৈদেশিক অর্থায়ন সরকার সম্পূর্ণভাবে খরচ করার সামর্থ্য রাখে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘এটি খুবই উচ্চাভিলাষী একটি পরিকল্পনা। পাইপলাইনে অর্থ আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিলিয়ন ডলারের প্রশ্নটি হচ্ছে, প্রশাসন দাতাদের কাছ থেকে এক বছরে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট সহায়তা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অনুদান নির্ভর প্রকল্পগুলো চালু করতে ও তৎসংলগ্ন সংস্কার কাজ সম্পন্ন করার জন্য নিজেদের কর্মদক্ষতা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে প্রস্তুত কি না।’

২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার সাত দশমিক তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করতে পেরেছিল, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

2h ago