মায়ের জন্যে...

প্রতিদিন ৮০-৯০ গ্লাস বিক্রি করে আটশ থেকে নয়শ টাকা আয় করে হিমেল। ছবি: সাজ্জাদ হোসাইন

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ফেরি ঘাটে ছাতার নিচে একটি টেবিল বসিয়ে লেবুর শরবত বিক্রি করেছে মো. হিমেল। তার বয়স আনুমানিক ১০ থেকে ১১ বছর। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৮০-৯০ গ্লাস শরবত বিক্রি করে আটশ থেকে নয়শ টাকা আয় করে সে। এ টাকা দিয়ে অসুস্থ মায়ের ওষুধ কেনা ও সংসারের খরচের যোগান দেয় হিমেল। তার মা হোটেলের কাজ করলেও চার মাস যাবত ধরে অসুস্থ হয়ে এখন বাড়িতে। তাই তিন মাস ধরে শরবত বিক্রি করে একাই পরিবারের হাল ধরেছে হিমেল।

স্থানীয় একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. হিমেল। সোমবার দুপুরে দ্য ডেইলি স্টারকে সে বলে, ‘ছোটবেলা থেকে বাবা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। মা ও দশ বছরের ছোট ভাইকে নিয়ে আমাদের সংসার। মা স্থানীয় হোটেলগুলোতে কাজ করে টাকা আয় করত। কিন্তু, এখন ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগ নিয়ে অসুস্থ হয়ে ঘরে আছেন। সারাদিন বাসায় থেকে বিশ্রাম নিতে বলেছেন চিকিৎসক।’

লেবু, লবণ ও চিনির সংমিশ্রণে শরবত তৈরি করে হিমেল। ছবি: সাজ্জাদ হোসাইন


হিমেল আরও বলে, ‘করোনার কারণে স্কুল বন্ধ, তাই এখন বাধ্য হয়ে পরিবারের হাল ধরতে গত ৩ মাস ধরে ঘাটে লেবুর শরবত বিক্রি করছি। ছোট ভাই রাফি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সে আমাকে সহায়তা করে।’

হিমেল জানায়, সকাল আটটায় ঘাটে এসে বিকাল পাঁচটায় বাড়িতে চলে যায়। গড়ে প্রতিদিন ৮০-৯০ গ্লাস শরবত বিক্রি হয় যা থেকে ৮০০-৯০০ টাকা আয় হয়। ঘাটে মানুষ না এলে তখন ৩০০ টাকাও হয় না, কোনদিন আবার তার চেয়েও কম হয়। শুক্রবার, শনিবার ও ছুটির দিনগুলোতে যখন অনেক মানুষ ঘাটে আসে তখন বিক্রি ভালো হয়। ঘাটের পাশে জায়গা ভাড়া নিয়ে টিনশেড বাড়িতে আমরা থাকি। এজন্য বছরে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়। করোনাকালে আমরা কোনো সহায়তা পাইনি।

হিমেল দ্য ডেইলি স্টারকে জানায়, শরবত তৈরিতে লেবু, লবণ ও চিনির প্রয়োজন হয়। যা স্থানীয় বাজার থেকে আনা হয়। বরফ ও পানি কেনা হয় ঘাটের দোকান থেকে। শরবত তৈরির কাজটি সোজা। একটি লেবু ২-৩ টুকরা করে পানিতে ভিজিয়ে রাখি তারপর যখন ক্রেতা আসে তখন লেবু চেপা মেশিন দিয়ে গ্লাসে রস দেওয়া হয়। এরপর সেখানে লবণ ও চিনি পরিমাণ মতো মিশিয়ে বরফ মিশ্রিত ঠান্ডা পানি দিয়ে তৈরি করা হয় শরবত। ঘাট এলাকার কোথাও ছায়া নেই। তীব্র রোদের মধ্যে অসুস্থ হয়ে যাই, শরীর ব্যাথা করে তখন মা বাড়ি চলে যেতে বলে।

Comments

The Daily Star  | English
Climate debt in Bangladesh from 2009 to 2022

Bangladesh’s climate debt keeps climbing

As global leaders gather in Baku, Azerbaijan to discuss finance at the 29th climate conference, the most vulnerable countries like Bangladesh are demanding new and additional climate finance that does not exacerbate climate debt.

12h ago