মহামারিতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বিনোদন পার্কগুলো

কুমিল্লার ম্যাজিক প্যারাডাইজ। ছবি: সংগৃহীত

করোনা মহামারির কারণে গত বছর এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া বন্ধের মধ্যেও বেতন বাতা, ব্যাংক ঋণ এবং বিশাল অংকের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বহন করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দেশের বিনোদন পার্কগুলো।

গত বছরের মার্চ মাসেই মূলত এই শিল্পের দুর্দশা শুরু হয়। দেশে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে সরকার প্রায় চার মাস দেশের পর্যটন ও বিনোদন পার্কগুলো বন্ধ রাখে।

মাঝে বিনোদন পার্কগুলো পুনরায় খুলে দেওয়া হলেও দৈনিক দর্শনার্থীর সংখ্যা ৫০ শতাংশে নেমে আসে। মানুষের সঙ্কটকালীন ব্যয় সম্পর্কে সচেতনতা এবং সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কারণেই এমনটা হয়েছে।

এ বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সর্বশেষ বিধিনিষেধ আরোপের পর এসব পার্কে কর্মরত অনেক কর্মচারীই তাদের পুরো বেতন পাননি।

শিল্পের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, এতে করে অনেক কর্মচারী পেশা বদল করছেন।

দেশে ১১টি পার্ক পরিচালনাকারী ওয়ান্ডারল্যান্ড গ্রুপের অধীনে কর্মী রয়েছে তিন হাজার পাঁচশ জন। গ্রুপটির জেনারেল ম্যানেজার মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রয়েছি।’

১৯৯০ সালে শ্যামলী শিশু মেলা প্রতিষ্ঠা করে দেশে শিশুদের বিনোদন কেন্দ্রের পথিকৃৎ রহমান জানান, মহামারির মধ্যে অনেক ক্ষতির কারণে তাকে দুটি পার্ক বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যামিউজমেন্ট পার্কস অ্যান্ড অ্যাট্রাকশনসে (বিএএপিএ) বর্তমানে ২৮০ জনের বেশি সদস্য রয়েছে। যাদের মধ্যে অনেকে কোভিড-১৯ এর কারণে অব্যাহত লোকসানের মুখে ব্যবসা থেকে সরে গেছেন।

পরিস্থিতি বিবেচনা করে পার্কগুলো আবারও চালু করার অনুমতি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মুস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘আমরা মূলত খোলা বাতাসে এবং বিস্তৃত জায়গায় কাজ করায় স্বাস্থ্য বিধি বজায় রেখে সেবা সরবরাহ করতে পারি।’

ফ্যান্টাসি কিংডম ও ফয়েস লেক পরিচালনাকারী কনকর্ড গ্রুপ অব কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক অনুপ কুমার সরকার জানান, মানুষ যেন উদ্বেগ ছাড়াই পার্কে তাদের সময় উপভোগ করতে পারেন সে ধরণের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারবেন তারা।

মহামারির আগে ফ্যান্টাসি কিংডমে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার দর্শনার্থী ভ্রমণ করতেন। বর্তমানে তাদের টিকিট ও খাবার বিক্রি না হওয়ায় প্রতিদিন আনুমানিক ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

এছাড়াও, সরঞ্জামগুলো অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় পার্ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে।

অনুপ কুমার সরকার বলেন, ‘যদি জটিল যন্ত্রপাতিযুক্ত রাইডগুলো অলসভাবে পড়ে থাকে তবে তা স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যাবে।’

প্রতিদিন দর্শনার্থীদের সংখ্যা অর্ধেক রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পার্কগুলো আবার খুলতে ইতোমধ্যে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) তৈরি করেছে বিএএপিএ।

নন্দন পার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার বিন ইউসুফ বলেন, ‘কর্মীদের বেতন পরিশোধ করা এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।’

২০০৩ সালে চালু হওয়া জনপ্রিয় এই পার্কটি মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ১ এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে তাদের প্রায় ২৫০ জন কর্মী নিযুক্ত রয়েছে।

সাধারণ সময়ে এখানে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি দর্শনার্থী ভ্রমণ করেন।

ইউসুফ জানান, বিনোদন পার্কটির প্রধান আয় হয় ঈদে। কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে গত তিন ঈদে তা হয়নি।

কুমিল্লার ম্যাজিক প্যারাডাইজ পার্কের চিফ অপারেটিং অফিসার আলিমুল ইসলাম জানান, তারা যে কতটা খারাপ সময় পার করছেন তা কথায় ব্যাখ্যা করতে পারবেন না।

‘পার্ক বন্ধ থাকলেও আমাদের ব্যয় বন্ধ নেই। আমাদের পার্কের মাসিক পরিচালনা ব্যয় এবং ১৫০ জন কর্মীদের বেতন প্রায় ২৫ লাখ টাকা,’ যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো বেসরকারি বিনোদন পার্ক দিনাজপুরের স্বপ্নপুরী গত বছরের মার্চ থেকে কর্মীদের বেতন পরিশোধ করতে রীতিমতো সংগ্রাম করছে।

স্বপ্নপুরীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের পার্কের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় প্রতি মাসে প্রায় ১৬ লাখ টাকা। বাধ্য হয়ে ৩৫ জন কর্মীকে বাদ দিতে হয়েছে।’

রংপুরের ভিন্ন জগৎ বিনোদন পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম কামাল জানান, তারা বেশ কিছুদিন ধরে পার্কটি আবারও চালু করার চেষ্টা করছেন। তবে সরকারের কাছ থেকে এখনও সবুজ সংকেত পাননি।

পার্কটি বন্ধ থাকলেও প্রতিমাসে এর পরিচালনা ব্যয় ১৮ লাখ টাকা।

নরসিংদীর ড্রিম হলিডে পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রবীর কুমার শাহা জানান, এমন পরিস্থিতিতে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা কঠিন।

২০১২ সালে চালু হওয়া পার্কটিতে বর্তমানে প্রায় ৩০০ কর্মী কাজ করেন। প্রতিদিন এই পার্কে বেড়াতে আসতেন প্রায় এক হাজার দর্শনার্থী।

সরকার টিকিট বিক্রিতে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ ভ্যাট এবং খাবারের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করে।

এই পরিস্থিতিতে বিএএপিএ তিন বছরের জন্য ভ্যাট ও ট্যাক্স কমানোর দাবিসহ শিল্পটি যাতে টিকে থাকতে পারে সেজন্য ভ্যাট ছাড়াই রাইড ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি আমদানির সুযোগ এবং প্রণোদনা প্যাকেজের দাবি করেছে।

 

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সুমন আলী।

Comments

The Daily Star  | English

Finance adviser sees no impact on tax collection from NBR dissolution

His remarks came a day after the interim government issued an ordinance abolishing the NBR and creating two separate divisions under the finance ministry

3h ago