নোয়াখালীতে ২০ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১০ হাজারেরও বেশি, মৃত্যু ১৫

Noakhali.jpg
শয্যা সংকটের কারণে রোগীদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: স্টার

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই নোয়াখালীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। চলতি মাসের ২০ দিনে জেলায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ইতোমধ্যে ১৫ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত ও মৃতদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক।

করোনার পাশাপাশি ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগকে। তবে, ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসার ওষুধ ও শয্যা সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। করোনার মধ্যে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে।

সোমবার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে এবং সিভিল সার্জন ও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

নোয়াখালী সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তীব্র গরমে চলতি মে মাসে করোনার পাশাপাশি হঠাৎ করে ডায়রিয়া সংক্রমণ, রোগীর সংখ্যা ও চাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জে ডায়রিয়া পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

চলতি মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ও চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। এদের মধ্যে ১৫ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে তিন জন, চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাত জন, সুবর্ণচরে দুজন, হাতিয়ায় দুজন ও কবিরহাট উপজেলার ২০ শয্যা চর আলগি হাসপাতালে একজন রয়েছেন। তবে, তাদের বেশিরভাগকেই হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকরা।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, এ ওয়ার্ডের দুটি ইউনিটে শয্যা সংখ্যা ২০টি। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ আনোয়ারা বেগম জানান, শয্যা সংখ্যা ২০টি হলেও প্রতিনিয়ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন ৪৫ থেকে ৫০ জন। রোববার এ ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১১০ জন। সোমবার তা কমে এসেছে ৯০ জনে। তাই বাধ্য হয়ে শয্যা সংকটের কারণে রোগীদেরকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত মেট্রোনিডাজল (আইভি) ইনজেকশন সরবরাহে ঘাটতি থাকায় চিকিৎসা সেবা অনেকাংশে ব্যাহত হচ্ছে।

এই ওয়ার্ডের সেবিকা কল্যাণী বালা দাস জানান, প্রতিদিন শতাধিক রোগীর চিকিৎসায় মাত্র দুজন নার্স নিয়োজিত আছেন। বাকি নার্স ও স্টাফদের কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ডেপুটিশনে বদলি করায় মাত্র দুজন নার্স দিয়ে ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

কবিরহাট উপজেলার চর আলগি ২০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন গড়ে ১২-১৫ জন করে ডায়রিয়া রোগী আসছেন। এদের মধ্যে গত সপ্তাহে নয় বছরের এক শিশুকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার পর চরাঞ্চলের লোকজন স্থানীয় হাতুড়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে ভুল চিকিৎসায় অকালে মারা যাচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘চরাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির অভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করায় এবং তীব্র গরমে মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।’

সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শায়লা সুলতানা ঝুমা জানান, চলতি মে মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত সুবর্ণচর উপজেলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৫৬ জন এবং ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়েছেন দুই হাজার ৩৩ জন। এ উপজেলায় বিগত কয়েক বছরের মধ্যে মে মাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।’

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. শায়লা শাহরিয়া জাহান বলেন, ‘হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে প্রতিদিন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিতে ভিড় জমাচ্ছেন। এখানে দুটি ওয়ার্ডে ২০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ৯০ থেকে ১০০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। মে মাসে ডায়রিয়া রোগীর চাপ মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। এ মুহূর্তে হাসপাতালে মেট্রোনিডাজল ইনজেকশন ছাড়া কোনো ওষুধের সংকট নেই।’

নোয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানান, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত হাসপাতাল নেওয়া ও আইভি স্যালাইন দেওয়া প্রয়োজন। সঠিক সময়ে রোগীকে হাসপাতালে এনে চিকিৎসা সেবা দিলে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। চর ও গ্রামাঞ্চলের লোকজন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালে না এসে স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসকদের কাছে গিয়ে অপচিকিৎসায় অকালে মৃত্যুবরণ করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ চরাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব এবং তীব্র গরমে মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এসব অঞ্চলের মানুষ নদী খাল ও পুকুরের পানি পান এবং গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করেন। তাই, এসব উপজেলায় স্বাস্থ্য কর্মীদের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’

এসব অঞ্চলের মানুষদের পানি ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Produce 10 ex-ministers, 2 advisers to Hasina before tribunal on Nov 18: ICT

They will be shown arrested in case filed over crimes against humanity, genocide, says prosecutor

28m ago