যমুনায় পানি বাড়ছে, পাবনা-সিরাজগঞ্জে আগাম বন্যার আশঙ্কা

যমুনায় পানি বাড়তে থাকায় সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের মানুষেরা আগাম বন্যার আশঙ্কায়। ছবিটি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/ স্টার

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে উপকূলের মানুষ যখন ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন ঘূর্ণিঝড় নিয়ে খুব বেশি ভয় না পেলেও ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী আগাম বন্যার আশঙ্কায় পাবনা ও সিরাজগঞ্জের মানুষ। গত বছরের আম্পানের অভিজ্ঞতায় ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এ বছর আগেভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ।

পাবনা ও সিরাজগঞ্জের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগাম বন্যার আশঙ্কায়, অনেকেই খেতের আধা-পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছেন, বাড়ি ঘর সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, অনেকে আবার তাদের ভাঙ্গা নৌকাটিকে মেরামত করে দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে এখনই বন্যার আশঙ্কা নেই।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে যমুনার পানি বাড়ছে। প্রতিদিন প্রায় ১৪ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে যমুনায়। তবে এ সময় যমুনায় পানি বৃদ্ধি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, যমুনার পানি হার্ড পয়েন্টে ৮ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে যা বিপৎসীমার অনেক নিচে। এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় নদীতে পানি অনেক কম বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা অভয় দিলেও নিশ্চিন্ত হয়ে ঘরে বসে থাকতে পারছেন না পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার যমুনা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের মানুষ। গত বছর আম্পান পরবর্তী আকস্মিক আগাম বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে এ বছর আগেই বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে এখানকার মানুষ।

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার রাউতারা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ কৃষক তাদের খেতের কাঁচা-পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছে। দ্রুত ধান কাটার জন্য দুর্গম এ গ্রামে কম্বাইন্ড হারভেস্ট মেশিনের ব্যবহার করছে কৃষক।

গ্রামের কৃষক পরেশ সুত্রধর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শ্রমিকের জন্য বসে না থেকে গ্রামের সব কৃষক মিলে এখানে মেশিন দিয়েই ধান কাটছে। গত বছর আম্পানের পর আমরা ঘরে ধান তুলতে পারিনি। আকস্মিক বন্যায় ভেসে যায় পুরো ধান খেত।

এ বছর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর আবারও আগাম বন্যা হলে বিশাল এ মাঠের অধিকাংশ ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হবে না ফলে কৃষকরা সবাই মিলেই মেশিন দিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলছি, বলেন তিনি।

এদিকে যমুনায় পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে রাউতারা গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত বড়ালের শাখা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে বলে জানায় গ্রামবাসী। পানি বৃদ্ধি এভাবে অব্যাহত থাকলে সাইক্লোন পরবর্তী আবারও আগাম বন্যা হওয়ার আশংকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

রাউতারা গ্রামের জেলে পরিবারের গৃহবধূ শান্তি বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তার দুই ছেলে মাছ ধরার জন্য কয়েক বছর আগে একটি বড় নৌকা কেনে, তবে গত দুই বছর তেমন কাজ না থাকায় নৌকাটি মেরামত করা সম্ভব হয়নি। নৌকাটি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ায় দ্রুত এটি মেরাতমের জন্য মিস্ত্রিকে কাজে লাগানো হয়েছে। নতুন নৌকা কেনার সামর্থ্য না থাকায় আসন্ন দুর্যোগের আশঙ্কায় ভাঙ্গা নৌকাটিই মেরামত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই মনে করছে সাইক্লোন পরবর্তী অবিরাম বর্ষণ হলে এবং নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দ্রুত পানি ঢুকে নিচু এলাকা ডুবে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এমন আশংকায় অনেকেই আগে থেকেই ঘর বাড়ি সরিয়ে নিতে উদ্যোগ নিয়েছে।

পাবনার সাথিয়া উপজেলার নাগডেমরা গ্রামের কামরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, পানি যখন বৃদ্ধি পায় তখন সবকিছু দ্রুত সরিয়ে নেয়ার সময় পাওয়া যায় না। ফলে এবার আগে থেকেই অনেকে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর আগাম বন্যা হওয়ার আশংকা না থাকলেও সাইক্লোন পরবর্তী প্রবল বর্ষণ অব্যাহত থাকলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে পারে বলে জানান তিনি। তবে তা স্থায়ী নাও হতে পারে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

42m ago