সিএমপি থেকে একদিনে ৯ জন ‘চাটগাঁইয়া’ অফিসারসহ ১১ জন বদলি
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) থেকে একদিনে একই আদেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ১১ জন কর্মকর্তাকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে বদলি করা হয়েছে। বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে নয় জনের বাড়িই চট্টগ্রামে। বাকি দুই জনের বাড়ি পার্বত্য চট্টগ্রামে।
আজ বৃহস্পতিবার পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই বদলি করা হয়। আদেশে সিএমপির ১১ পুলিশ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন জেলার মোট ২৬ জনকে বদলি করা হয়।
সিএমপি থেকে ১১ জন অফিসারকে বদলি করা হলেও নতুন আদেশে মাত্র তিন জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে এডিসি হিসাবে সিএমপিতে পদায়ন করা হয়।
এই নয় জন 'চাটগাঁইয়া' অফিসারের বদলির আগে গত সপ্তাহে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার আরও দুই 'চাটগাঁইয়া' অফিসারকে সিএমপি থেকে অন্য জেলায় বদলি করা হয়েছিল।
সিএমপির রিজার্ভ অফিস সূত্রে জানা যায়, সিএমপির যেসব সদস্যের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলায় গত বছরের ডিসেম্বরেই তাদের তালিকা তৈরি হয়েছে। তালিকার কথা প্রকাশ পেলে চাপা অসন্তোষ তৈরি হয় সিএমপিতে কর্মরত 'চাটগাঁইয়া' সদ্যসদের মধ্যে।
পুলিশ সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানায়, এ বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি সিএমপিতে কর্মরত ছয় পুলিশ কনস্টেবল আনোয়ারা উপজেলায় এক ঠিকাদারকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। এ ঘটনা সিএমপিতে চাঞ্চল্য তৈরি করে। এদের মধ্যে কয়েকজনের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলায়।
আনোয়ারার ঘটনার চার দিন পর পুলিশ সদর দপ্তরের আদেশে সিএমপি থেকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয় সিএমপির ৩৬ কনস্টেবলকে। এ ঘটনার পরেই সিএমপি থেকে 'চাটগাঁইয়া' খেদানো বেগবান হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালের শেষ দিকে সিএমপির তৎকালীন উপকমিশনার (সদর) শ্যামল কুমার নাথ (বর্তমানে সিএমপি ট্রাফিক বিভাগরে অতিরিক্ত কমিশনার) সিএমপির বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরতদের বদলির জন্যে 'চাটগাঁইয়া' পুলিশ সদস্যদের তালিকা করতে চিঠি দিলে সমালোচনা সৃষ্টি হয়। পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সিএমপি।
সিএমপির রিজার্ভ অফিসের সূত্র মতে, সিএমপিতে বিভিন্ন পদমর্যাদার দেড় হাজার পুলিশ সদস্য রয়েছেন যাদের বাড়ি চট্টগ্রামে।
সিএমপি থেকে সর্বশেষ বদলি হওয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার-এডিসি) পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন—এডিসি (সিএমপি-সদর) মইনুল ইসলাম, এডিসি নাদিরা নুর, এডিসি (বন্দর জোনের) অলোক বিশ্বাস, এডিসি (কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ-অপরাধ ও অভিযান) আসিফ মহিউদ্দিন, এডিসি (প্রসেকিউশন) মো. রেজাউল করিম, এডিসি উক্য সিং, এডিসি নুতান চাকমা।
বদলিকৃত সহকারী পুলিশ সুপার (সহকারী পুলিশ কমিশনার-এসি) পদমর্যাদার মধ্যে রয়েছেন এসি (প্রসেকিউশন) কাজী শাহবুদ্দিন আহমেদ, এসি উত্তম কুমার চক্রবর্তী, এসি আবু জাফর ও এসি (সিটি এসবি) আতিক আহমেদ চৌধুরী। এদের মধ্যে উক্য সিং ও নুতান চাকমা ছাড়া বাকিদের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলায়।
বদলির বিষয়ে সিএমপির কোনো পুলিশ কর্মকর্তা সরাসরি মুখ খুলছেন না। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছে, চাটগাঁইয়া সদ্যসের বাইরেও অন্য জেলার অনেক পুলিশ সদস্য আছেন যারা দীর্ঘদিন ধরেই সিএমপিতে কর্মরত। তাদের না সরিয়ে শুধু চাটগাইয়া সদস্যদের সরানোতে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
'পুলিশের চাকরি বদলির চাকরি কিন্তু দুই-তিন দফায় তালিকা করে কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই বদলি করাটা দুঃখজনক,' বলে ক্ষোভের কথা জানান এক পুলিশ কর্মকর্তা।
তবে সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই বদলিকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন।
একদিনে ১১ জন অফিসারকে বদলির বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সিএমপির কমিশনার সালেহ মো. তানভীর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন 'এই বদলি রুটিন বদলির অংশ। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মেট্রোতে যারা দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করেছেন তাদের জেলায় দেওয়া হচ্ছে। মেট্রোর পাশাপাশি জেলার কাজের অভিজ্ঞতাও একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রয়োজন রয়েছে।'
Comments