আজ দুপুর থেকে ইন্টারনেটের গতি কম থাকবে
সাবমেরিন ক্যাবলের সংস্কার কাজের কারণে ইন্টারনেটের ধীরগতির জন্য গ্রাহকরা আজ শুক্রবার দুপুর আড়াইটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ভোগান্তিতে পড়তে পারেন।
রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানায়, সংস্কার কাজ চলাকালে দুটি সাবমেরিন ক্যাবলের একটি পুরোপুরি অকার্যকর থাকবে। এ জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আন্তর্জাতিক টেরিস্ট্রিয়াল কেবল কোম্পানিগুলো ভারতের কাছ থেকে আন্তঃসীমান্ত ব্যান্ডউইথ কিনতে বাধ্য হতে পারে।
আজ যে সাবমেরিন ক্যাবলে সংস্কারের কাজ করা হবে তার নাম এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়। পরবর্তীতে সরকার বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ভূ-গর্ভস্থ ক্যাবল ব্যবহার করে ভারত থেকে ব্যান্ডউইথ আমদানির অনুমতি দেয়।
বিএসসিসিএল ২০১৭ সালে এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫ নামে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করে। বিএসসিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, গ্রাহকরা খুব বেশি ভোগান্তিতে পড়বেন না। কারণ শুক্রবার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা কম থাকে।
মশিউর রহমানের ভাষ্য, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের জন্য অতিরিক্ত ব্যান্ডউইথ থাকায় সংস্কারকাজ চলাকালীন ভয়েস কলসহ অন্যান্য ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে খুব বেশি সমস্যা হবে না।
এই খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বিএসসিসিএল প্রায় দ্বিগুণ লাভ করেছে। তাই এর সংযোগ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা উচিত।
কলম্বোভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা ও নীতি নির্ধারণী প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাঈদ খান বিএসসিসিএল-এর ব্যবসার মডেলেকে অভিহিত করেন অচল ও সেকেলে হিসেবে।
তিনি বলেন, গ্রাহকরা ক্যাবলভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ কেনেন না। সুতরাং বিবৃতি ছাড়াই বিএসসিসিএল এক ক্যাবলের গ্রাহকদের অন্য ক্যাবলে সংযুক্ত করতে পারতো। ক্ষমতার অপব্যবহার করে একচেটিয়া ব্যবসার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি বিপুল মুনাফা করেছে।
এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ চেয়ে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসাকে উৎসাহিত করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান আবু সাঈদ খান।
বিএসসিসিএল চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ১২৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। গত বছরের তুলনায় যা ৯০ শতাংশ বেশি।
সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমানের হিসাবে, প্রথম ক্যাবলের ক্ষেত্রে ব্যান্ডউইথ ব্যবহার বেড়েছে ৫০০ জিবিপিএস পর্যন্ত। আর এক হাজার ২০০ জিবিপিএস সক্ষমতার দ্বিতীয় ক্যাবল ব্যবহার করেছে হাজার জিবিপিএস ইন্টারনেট।
বর্তমানে দেশে মোট দুই হাজার ৫০০ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে দেড় হাজার জিবিপিএসের যোগান আসে বিএসসিসিএলের কাছ থেকে। অন্য কোম্পানিগুলো বাকি জিবিপিএস ইন্টারনেট সরবরাহ করে।
মহামারির মধ্যে বাড়ি থেকে কাজ ও দূরশিক্ষণের মতো বিষয়গুলো ডেটা ব্যবহারের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়ে দিয়েছে।
মহামারির আগে ব্যান্ডউইথের ব্যবহার ছিল এক হাজার জিবিপিএসের খানিকটা বেশি। গত বছরের এপ্রিলে যা প্রায় দেড় হাজার জিবিপিএসে পৌঁছায়।
খাত সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যান্ডউইথের সংকটে পড়তে পারে।
মশিউর রহমান বলেন, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫ থেকে অতিরিক্ত ৯০০ জিবিপিএস ইন্টারনেট পাওয়া যাবে।
বিএসসিসিএলের একজন কর্মকর্তা জানান, অতিরিক্ত ৯০০ জিবিপিএস ইন্টারনেটের জন্য বাংলাদেশকে ১২ লাখ ডলার ব্যয় করতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হতে যাচ্ছে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ
Comments