জাবিতে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও শাস্তি দাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নির্মাণাধীন হল থেকে পড়ে গিয়ে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় প্রতিবাদী মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই নির্মাণাধীন হল ও শহীদ মিনারের পাদদেশে 'সাধারণ শিক্ষার্থীদের' ব্যানারে পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট, প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন। মানববন্ধনে শ্রমিক নিহতের ঘটনাকে 'হত্যা' হিসেবে অভিহিত করে ক্ষতিপূরণ ও প্রকল্প পরিচালনায় অবহেলায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করা হয়।
এছাড়া, কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে বাধ্য করার অভিযোগ তোলা হয় কর্মসূচিতে। এ সময় প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা তিন দফা দাবি উত্থাপন করেন।
দাবিগুলো হলো--নিহত শ্রমিকের পরিবারকে তার আজীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের একজন কর্মক্ষম ব্যক্তির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি দেওয়া।
মানববন্ধনে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি দীপঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, 'গতকাল যে শ্রমিক নিহত হয়েছেন তাকে আসলে হত্যা করা হয়েছে। এই নির্মাণ প্রকল্প শুরু থেকে নানা বিতর্ক, দুর্নীতি ও অন্যায়ের মাধ্যমে চলছে। যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এই কাজ পরিচালনা করছে তারা বিপুল টাকার মাধ্যমে এই কাজ পেয়েছে। সুতরাং তারা শ্রমিকদের কথা না ভেবে শুধু টাকার কথা ভাবছে।'
'শ্রমিকদের নিরাপত্তা সরঞ্জামের ব্যবস্থা না করে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। শ্রমিককে মেরে ফেলার দায়ভার কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে এবং দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত না করা পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে হবে,' বলেন তিনি।
ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হক রনি বলেন, 'শ্রমিকদের সেফটি নিশ্চিত না করে যারা কাজ করতে বাধ্য করছে তারা অপরাধী। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান টাকা লুটপাটে ব্যস্ত থাকার কারণে শ্রমিকদের নিরাপত্তার দিকে কোনো খেয়াল রাখছে না।'
'শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এই হত্যার সঙ্গে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান, তদারকি কমিটি। তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।'
এর আগে ওই শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগসহ সক্রিয় চার ছাত্র সংগঠন।
এ সময় ছাত্রলীগ জাবি শাখার উপদপ্তর সম্পাদক এম মাইনুল হুসাইন রাজনের সই করা এক শোকবার্তায় বলা হয়, 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও প্রকল্প অফিসের নির্মাণ কাজে নিরাপত্তাহীনতার ও গাফলতির কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা বারবার ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছি দাবি জানাই, এ ঘটনার সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।'
গতকাল জাবির নির্মাণাধীন একটি হলের ছয় তলা থেকে পড়ে শাহের আলী (২৫) নামে ওই শ্রমিক নিহত হন। ভবন নির্মাণে যথাযথ নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় এ দুর্ঘটনার অভিযোগ উঠেছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান নুরানী কন্সট্রাকশন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তদারকি কমিটির বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নুরানী কন্সট্রাকশনের ম্যানেজার খোরশেদ আলম খোকনকে মুঠোফোনে কয়েকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:
Comments