খাল খনন শেষের আগেই ভাঙন শুরু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়াইল বাজার খালের এক হাজার ৩০০ মিটার অংশ পুনঃখননে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, খালের তলদেশ খনন না করে শুধু পাড়ের মাটি কেটে প্রস্থ বাড়ানো হয়েছে । সেই মাটি আবার খালের পাড়েই ফেলার কারণে আসন্ন বর্ষায় মাটি ধসে ফের খালে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে বৃষ্টিতে কিছু অংশের মাটি ধসেও গেছে। ফলে দুই পাড়ের বাসিন্দাসহ এলাকাবাসী লাভের বদলে উল্টো ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, দেশের ৬৪টি জেলায় ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় এই খাল খনন করতে প্রায় ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। গত ১০ এপ্রিল শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা।
বড়াইল, খারঘর ও জালশুকা- তিনটি গ্রামের প্রায় ৩০ একর কৃষি জমিতে পানি সেচ এবং খরা মৌসুমে খালে পানি সংরক্ষণের জন্য খালটি পুনঃখনন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছিল।
কিন্তু, খাল খননের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ময়মনসিংহের এম/এস এম রহমান এন্টারপ্রাইজ নিজেরা কাজ না করে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার আল-আমিন নামের এক ঠিকাদারের সঙ্গে এটি খননের ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হন। এরপর ভৈরবের ঠিকাদারও নিজে কাজ না করে স্থানীয় খারঘর গ্রামের ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমানকে খাল খননের দায়িত্ব দেন। পরে মুজিবুরের নেতৃত্বে দায়সারাভাবে খনন কাজ করে নদীর পানি খালে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্টদের নির্লিপ্ততা ও খামখেয়ালির কারণে খননকাজ ত্রুটিপূর্ণ হয়েছে উল্লেখ করে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের এ টাকা যে জলে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, খালটি খননের ক্ষেত্রে নিয়মের ধার-ধারেনি ব্যবসায়ী মুজিবুর সিন্ডিকেট। পাউবোর লোকজন সঠিক সময়ে খনন কাজও তদারকি করেনি। বড় আকারের সাহায্যে খনন করার কথা থাকলেও ছোট মেশিনে খনন করা হয়েছে। এরপর মাটি দূরে না ফেলে পাড়েই রেখে দেওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হতেই কিছু অংশের মাটি ধসে গেছে। এ ছাড়া, খালের পাড়ে ১৮০টি গাছ লাগানোর কথা থাকলেও এখনো লাগানো হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাসসহ দুজন প্রকৌশলী খাল পুনঃখনন কাজ পরিদর্শন করেন।
রঞ্জন কুমার দাস বলেন, ‘স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে এখানে সার্ভে করা হয়েছে। খাল খনন প্রকল্পের শিডিউলে দুই হাজার ঘনমিটার মাটি কাটার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু, সার্ভেতে এক হাজার ৬০০ ঘনমিটার পাওয়া গেছে। মাটি কম কাটার বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।’
এদিকে, সরেজমিনে দেখা যায়, খনন করা মাটি পাড়ে রাখা হয়েছে। বেশ কিছু অংশের মাটি ইতোমধ্যে ধসে গেছে।
এ সময় বড়াইল গ্রামের কৃষক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যারা কাম করছে তারা কইছিল, পরে পাড়ের মাডি দূরে সরাইয়া খাল আরও গভীর কইরা দিবে। কিন্তু তারা এইডা না কইরা নদীর পানি হালে (খাল) ছাইড়া দিছে।’
অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে খনন কাজ করা মুজিবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘খাল খননের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। এলাকার একটি কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, বড়াইল বাজার মূলত নৌপথ নির্ভর। সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে এখানে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে নবীনগরের বড়াইল ইউনিয়নের খারঘর, জালশুকা, গোসাইপুর, মেড়াতলি ও কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের গৌরনগর, সাতঘরহাটি এবং পার্শ্ববর্তী সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের বিরামপুর, চিলোকুট, আলাকপুর, দামচাইল ও নাটাই উত্তর ইউনিয়নের নরসিংসার, গাছতলা ও আদমপুর এবং আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের তারুয়া ও খোলাপাড়া এবং লালপুর ইউনিয়নের লালপুর ও বায়েকসহ আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামের লোকজন তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য নিয়ে এই বাজারে যান।
নবীনগরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের যোগাযোগ বঞ্চিত গ্রাম গৌরনগরের বাসিন্দারা বছরের আট মাস সবজির চাষ করে থাকেন। তারা নৌপথ ব্যবহার করে একমাত্র বড়াইল বাজারেই তাদের পণ্য বিক্রি করেন।
Comments