পর্তুগালে জুনে ২ ধাপে ৩০ ও ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা পাবেন করোনার টিকা
পর্তুগালে আগামী ৬ জুন থেকে ৪০ বছরের বেশি বয়সী এবং ২০ জুন থেকে ৩০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিক ও অভিবাসীদের করোনার টিকা দেওয়া হবে। এতদিন দেশটিতে টিকা গ্রহণের বয়সসীমা ছিল ৫০ বছর।
করোনার সংক্রামণ বেড়ে যাওয়া নির্দিষ্ট অঞ্চলগুলোতে নয়, সারাদেশে নতুন বয়সসীমার কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচির ঘোষণা করেছে পর্তুগাল সরকার।
দেশটিতে প্রতিদিন গড়ে চারশ থেকে পাঁচশ জন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি রাজধানী লিসবন ও আশপাশের এলাকায়। সপ্তাহের প্রথমদিকে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কায় শুধু রাজধানী লিসবন এবং ভেল ডো তেজোর অঞ্চলে নতুন বয়সসীমার টিকা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিল সহকারী রাজ্য ও স্বাস্থ্য সচিব।
তবে, এমন সিদ্ধান্তে বাণিজ্যিক শহর পুর্তোসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কড়া সমালোচনা হয় এবং পুরো দেশের জন্য সমান চিকিৎসার দাবি তোলা হয়। এরপরই সরকারের পক্ষ থেকে নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
সরকারি টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত বার্তায় জানানো হয়, ‘কোভিড -১৯ (করোনা) টিকা কর্মসূচির পরিকল্পনার গতি বাড়াতে এবং টিকা সহজলভ্যতার কারণে জাতীয় পর্যায়ে এই কার্যক্রমকে আরও বেগবান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
টিকা প্রদান টাস্কফোর্স-এর সমন্বয়ক ভাইস অ্যাডমিরাল হেনরিক গুউভিয়া ই মেলো পাবলিকো সংবাদপত্রকে নিশ্চিত করেছেন যে, কনিষ্ঠ বয়সের গ্রুপগুলোকে টিকা দেওয়ার সম্প্রসারণ কেবলমাত্র লিসবন অঞ্চলে নয় ‘জাতীয় পর্যায়ে’ হবে।
পর্তুগালের স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহে পর্তুগাল ফাইজারের ৯ লাখ ৫০ হাজার ডোজ, এস্ট্রাজেনেকার ৩ লাখ ৪০ হাজার ডোজ, মর্ডানার ৬৮ হাজার ডোজ এবং জনসন এন্ড জনসনের ৮৮ হাজার ডোজ টিকা পাবে। সব মিলিয়ে চলতি সপ্তাহ এবং আগামী সপ্তাহে ১৪ লাখ টিকা সংগ্রহে আসবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পর্তুগালের ১৬ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ এবং ৩৪ শতাংশ মানুষ প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন। এ পর্যন্ত ১৬ লাখ ৫৫ হাজার মানুষ দুই ডোজ টিকা এবং ৩৫ লাখ ২৭ হাজার পেয়েছেন প্রথম ডোজ টিকা।
এদিকে গত ১২ দিনে লিসবন এবং টাগুস নদী উপত্যকায় আশঙ্কাজনকভাবে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। দেশের মোট করোনা আক্রান্তের ৪৩ ভাগ এখানে শনাক্ত হয়েছে। বিশেষ করে লিসবন সিটি সেন্টার এবং মুরারিয়া এলাকায় সংক্রমণের ব্যাপকতা লক্ষণীয়। লিসবনের এই এলাকায় অনেক বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসী বাস করেন।
বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এখানকার রাজনৈতিক ব্যক্তি, সিটি করপোরেশন, কমিউনিটি সংগঠনসহ সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় কাউন্সিল সান্তা মারিয়া ম্যায়রসহ বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী ফোরাম অভিবাসীদের এবং পর্যটকদের দায়ী করছেন। তাদের মতে, একসঙ্গে বেশি মানুষের এক বাসায় বসবাস এবং নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি না মানায় সংক্রমণের হার বাড়ছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসব এলাকায় শুক্রবার থেকে ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বেশি পরিমাণে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বিশেষ করে অ্যারোইস, সান্তা মারিয়া মায়োর, আভিনিডাস নোভাস, সান্টো আন্তোনিও এবং মিসেরিকার্ডিয়া এলাকায় গণহারে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট, ট্যাক্সি ড্রাইভার, এ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং এবং খেলাধুলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। অধিকতর পরীক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে বলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সূত্রে জানা গেছে।
আগামী ৩১ মে থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, লিসবন সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে লিসবনের সব শহরেই করোনা পরীক্ষার ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিক কার্যক্রম চালু করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে জনবহুল এলাকা ছাড়াও মেট্রো, ট্রেন ও বাস স্টেশন, পর্যটন স্পট ছাড়াও ট্যাক্সি ক্যাব ও অ্যাপভিত্তিক যানবাহন চালকদের সহজলভ্য এবং দ্রুত পরীক্ষা নিশ্চিত করা হবে। অন্যদিকে প্রতি সপ্তাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনা পরীক্ষা চলছে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পর্তুগালে এ পর্যন্ত ৮ লাখ ৪৭ হাজার ৬০৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১৭ হাজার ২৩ জন। ২২ হাজারের বেশি করোনা রোগী চিকিৎসাধীন। অসংখ্য বাংলাদেশি আক্রান্ত হলেও এ পর্যন্ত পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, এই সপ্তাহের শেষ থেকে বহুল আলোচিত করোনার গ্রিন পাসপোর্ট পরীক্ষামূলকভাবে চালু করতে যাচ্ছে পর্তুগাল। এতে গ্রীষ্ম মৌসুমে পর্যটক আগমনের মাধ্যমে ঝিমিয়ে থাকা পর্যটনশিল্প চাঙ্গা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী ১ জুলাই থেকে পুরো ইউরোপে এই ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও পর্তুগালসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ আগেভাগেই পরীক্ষামূলক চালুর উদ্যোগী হয়েছে।
৩০ এপ্রিল থেকে জরুরি অবস্থা উঠে যাওয়ার পরে শুক্রবার পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ পার্টির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোভিড-১৯ বিশেষজ্ঞদের জরুরি বৈঠক হয়। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ছাড়াও আসন্ন মৌসুমে ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। আশা করা হচ্ছে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় উপযুক্ত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।
লেখক: পর্তুগালপ্রবাসী সাংবাদিক
Comments