চেলসির বদলে যাওয়ার কারিগর টুখেল আরও উন্নতির প্রত্যাশায়
দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র চার মাসের কিছু বেশি সময়ে চেলসিকে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতিয়েছেন কোচ টমাস টুখেল। গত মৌসুমে পিএসজিকে ফাইনালে তুললেও বায়ার্ন মিউনিখের কাছে পরাস্ত হয়েছিলেন। সেই দুঃখ ভুলে এবারে তিনি হেসেছেন বিজয়ীর হাসি। যার কাছে থেকে অনেক কিছু শিখেছেন, সেই পেপ গার্দিওলাকে কৌশলের লড়াইয়ে ‘অল ইংলিশ’ ফাইনালে হারিয়েছেন তিনি।
শনিবার রাতে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ১-০ গোলে জিতে ইউরোপের ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চেলসি। পোর্তোর ড্রাগন স্টেডিয়ামে ব্লুজদের জয়ের নায়ক কাই হাভার্টজ। তবে নেপথ্যের কারিগর নিঃসন্দেহে জার্মান কোচ টুখেল যিনি পাকাপাকিভাবে বসে গেছেন সময়ের সেরা কোচদের তালিকায়।
গত জানুয়ারিতে টুখেল যখন দায়িত্ব নেন, তখন চেলসি ছিল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট তালিকার নয়ে। তারকাসমৃদ্ধ দল নিয়েও খাবি খাচ্ছিল তারা। তবে ক্লাব কিংবদন্তি ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে বিদায় করে টুখেলকে কোচ বানানোর পরপরই যেন আমূল বদলে গেছে চেলসি। তার অধীনে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগে চতুর্থ হয়েছে তারা। উঠেছিল এফএ কাপের ফাইনালেও। টুখেলের অসাধারণ পথচলায় সবশেষ সংযোজন- পরম আরাধ্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগ।
৪৭ বছর বয়সী এই কোচের অধীনে এখন পর্যন্ত ৩০ ম্যাচ খেলে ১৯টিতেই জিতেছে চেলসি। তাদের হার মাত্র পাঁচটি ম্যাচে। এসময়ে নিজেরা ৩৭ গোল করার বিপরীতে তারা হজম করেছে মাত্র ১৬ গোল। ৩-৪-২-১ কিংবা ৩-৪-১-২ ফরমেশনে নিজেদের রক্ষণভাগকে অভেদ্য বানিয়ে পাল্টা-আক্রমণে প্রতিপক্ষকে তছনছ করে দেওয়ার কৌশলে পুরোপুরি সফল হয়েছেন তিনি। সিটির গার্দিওলা, টটেনহ্যাম হটস্পারের জোসে মরিনহো, এভারটনের কার্লো অ্যানচেলত্তি, লিভারপুলের ইয়ুর্গেন ক্লপ, অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের দিয়েগো সিমিওনে, রিয়াল মাদ্রিদের জিনেদিন জিদান- সবাইকেই মুখোমুখি দেখায় হারের তিক্ত স্বাদ উপহার দিয়েছেন তিনি।
ম্যান সিটিকে হারিয়ে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পর টুখেলের কণ্ঠে ঝরেছে সন্তুষ্টি, ‘এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও শক্তিশালী ক্লাবের অংশ হতে পেরে আমি সত্যিই খুবই আনন্দিত। এই মুহূর্তে ফুটবল নিয়ে আমার যে বিশ্বাস ও আবেগ রয়েছে, সেসবের সঙ্গে তাদের চিন্তা-ভাবনার পুরো মিল রয়েছে।’
উন্নতির ধারা বজায় রাখার আকাঙ্ক্ষা জানিয়েছেন তিনি, ‘আরও আরও জয় পাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে আমার। কোচ হিসেবে আমি আরও উন্নতি করতে চাই। পরের মৌসুমের শুরু থেকেই আমার দল যেন সেরাটা নিংড়ে দেয়, সেজন্য আমি তাদেরকে প্রভাবিত করতে থাকব।’
মাত্র ১৮ মাসের চুক্তিতে টুখেলকে নিয়োগ দিয়েছে চেলসি। তবে মজার ছলে হলেও স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের দলটির সঙ্গে চুক্তি নবায়নের ইঙ্গিত দিয়েছেন টুখেল, ‘আমি শতভাগ নিশ্চিত নই। এই জয়ের মাধ্যমে হয়তো এরই মধ্যে আমার চুক্তি নবায়ন হয়ে গেছে। আমার এজেন্ট এই বিষয়ে কী যেন বলছিল।’
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা ঘরে তোলার পর চেলসির মালিক রোমান আব্রামোভিচের সঙ্গে প্রথমবারের মতো কথা হয়েছে টুখেলের, ‘মালিকের সঙ্গে একটু আগে মাঠে আমার কথা হয়েছে। প্রথম দেখার ক্ষেত্রে এর চেয়ে ভালো মুহূর্ত আর হতে পারে না। অথবা এর চেয়ে খারাপ মুহূর্ত! কারণ, এই অবস্থান থেকে এখন কেবল খারাপের দিকেই যেতে পারে সবকিছু!’
ম্যাচের আগে সিটিকে সমীহ করার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে ব্যবধান মিটিয়ে ফেলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন টুখেল। তা পূরণ হওয়া নিয়ে তার ভাষ্য, ‘আমাদের কাজ করার আরও অনেক বাকি আছে। আমরা দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলেছি। এটাই হলো সারকথা। আর আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ঘটছে তিনি (আব্রামোভিচ) প্রত্যক্ষভাবে তা জানেন এবং তার সঙ্গে দেখা করাটা বেশ ভালো ব্যাপার ছিল।’
Comments