‘আমাকে কখন জেল থেকে বের করতে পারবে’

মিলন বিকাশ ত্রিপুরা। ছবি: সংগৃহীত

জেলে যাওয়ার একদিন পর থেকে প্রতিদিন স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন মিলন। গত ১৭ মে থেকে খাগড়াছড়ি জেলে থাকা মিলন বিকাশ ত্রিপুরা গত বৃহস্পতিবারও তার স্ত্রী রিমা ত্রিপুরার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তখন মিলন জানতে চেয়েছিলেন, কারাগার থেকে তিনি কখন বের হতে পারবেন।

কিন্তু, তার পরদিন শুক্রবার ভোরে কারাগারের বাথরুম থেকে গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় মিলনকে উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার আগেই মিলনের মৃত্যু হয়েছে।

মিলনের স্ত্রী রিমা ত্রিপুরা গত শনিবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘১৮ তারিখ থেকে প্রতিদিন আমি মিলনের সঙ্গে ফোনে কথা বলতাম। বৃহস্পতিবারও সে বলেছিল, তাকে জেল থেকে কখন বের করতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার যখন তার সঙ্গে ফোনে কথা হয় সে জানতে চায়, “আমাকে কখন জেল থেকে বের করতে পারবে।’”

‘আমার স্বামীর সঙ্গে কথা বলার জন্য জেল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় একটি বিকাশ নম্বরে আমি বিভিন্ন সময় দুই হাজার টাকাও পাঠিয়েছিলাম। জেলে থাকাকালীন প্রতিদিন এক থেকে দুমিনিট আমি তার সঙ্গে কথা বলতে পারতাম এবং প্রতিবারই সে জানতে চাইত, কখন জেল থেকে বের হতে পারবে,’ বলেন রিমা ত্রিপুরা।

তিনি বলেন, ‘মিলনের গলায় এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। সে কেন আত্মহত্যা করবে? কারাগারের ভেতর আমার স্বামীর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’

গত ১৬ মে খাগড়াছড়ির গুইমারা এলাকায় প্রতিবেশীর করা পর্নোগ্রাফি মামলায় গ্রেপ্তার হন মিলন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, মিলন তার মোবাইলে প্রতিবেশীর ১২ বছরের এক শিশুর গোসলের ভিডিও ধারণ করেছিলেন।

খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডা. নূপুর কান্তি দাশ বলেন, ‘মিলন আত্মহত্যা করেছেন কি না সে ব্যাপারে এখনো কোনো মন্তব্য করা যাবে না। আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরেই মিলনের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে তা নিয়ে মন্তব্য করতে পারব।’

খাগড়াছড়ির জেল সুপার ও খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘কারাগারে মিলনের মৃত্যুর ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটিকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে এবং কারা কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটিকে পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মিলনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য তার পরিবারকে ১০ হাজার টাকাও দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিলনের মৃত্যুর খবরটি প্রথমে জেলার দিদারুল আলমের মাধ্যমে জানতে পারি। দিদারুল আমাকে জানিয়েছিলেন, মিলন নামে ২৬ বছরের একজন আসামি কারাগারের বাথরুমে আত্মহত্যা করেছেন।’

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে জেলার দিদারুলকে একাধিকবার কল এবং খাগড়াছড়ি জেলের ল্যান্ড ফোনে কল দিয়ে দায়িত্বরত একজনকে অবহিত করা হলেও দিদারুল এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেননি।

বিয়ের এক মাস ১৩ দিন পর স্বামীকে হারানো রিমা ত্রিপুরা বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- মিলন গামছা পেলেন কীভাবে? জেলে থাকাকালীন আমরা তো তাকে কোনো গামছা দেইনি। এ ব্যাপারে কারা কর্তৃপক্ষ আমাকে কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেনি।’

চট্টগ্রাম কারা বিভাগের ডিআইজি এ কে এম ফজলুল হক বলেন, ‘খাগড়াছড়ি কারাগারে আসামির মৃত্যুর ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রধান কারারক্ষী এবং কারারক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ডিআইজি বলেন, ‘এখনও তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। তাদের দুজনকে শোকজ করা হয়েছে। পরে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার বাদী জানান, ঘটনার দিন মিলনের মোবাইলে তিনি সাত থেকে আটটি ভিডিও দেখেছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনি পুলিশকে সেগুলো দেখিয়ে মামলা করেছিলেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আবুল বাশার বলেন, ‘মিলনের মোবাইলে আমরা প্রায় তিন মিনিটের একটি ভিডিও ক্লিপ দেখতে পাই। যেটি আপত্তিকর ছিল।’

তবে, মিলনের আইনজীবী সৃজনি ত্রিপুরা বলেন, ‘পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ এর ৮(১)/৮(২) ধারায় মিলনের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে সেখানে যথেষ্ট ত্রুটি আছে। সে ভিডিওটা কোনো জায়গায় প্রচার করেনি কিংবা ভিডিওর কারণে কেউ হয়রানির শিকারও হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘পর্নোগ্রাফি আইনের যে ধারার কথা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে তার সংজ্ঞার মধ্যেও সেটি পড়েনি।’

এ বিষয়ে জানতে গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

Comments

The Daily Star  | English
ACC finds Nagad corruption evidence

ACC raids Nagad HQ over hiring controversy

"During the drive, the ACC team found initial evidence of irregularities in the recruitment process"

18m ago