সাতক্ষীরায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, সীমান্তে কঠোর নজরদারি
সাতক্ষীরা জেলায় করোনা শনাক্তের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ঈদের আগে শনাক্তের হার ছিল ১৩ শতাংশ। কিন্তু, গত ২৪ ঘণ্টায় তা বেড়ে হয়েছে ৩৩.৩৩ শতাংশ। করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় এখনই লকডাউন না দিয়ে কড়া বিধিনিষেদের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৫ জনের মধ্যে ৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের হার শতকরা হিসেবে ৩৩ দশমিক ৩৩ ভাগ। এর আগের দিন ৯০ জনের মধ্যে ৩৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। সংক্রমণের হার ছিল ৪১ দশমিক ১১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভারতফেরত ৩৩৭ জনের মধ্যে ১৭ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। কিন্তু, তাদের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আছে কিনা তা এখনো জানা যায়নি।
গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত করোনা বিষয়ক বৈঠকে হয়।
ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ‘এখনই লকডাউন নয়’ সবদিক বিবেচনা করে আগামী ৩ জুনের বৈঠকে সাতক্ষীরায় লকডাউন হবে কিনা সে বিষয় করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সাতক্ষীরা সীমান্তের চোরাপথ দিয়ে অবৈধভাবে মানুষ যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে এজন্য মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী উপজেলা সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, কালিগঞ্জ, দেবহাটা এবং শ্যামনগরের কৈখালি ইউনিয়ন সংলগ্ন সীমান্ত পাহারায় স্থানীয়ভাবে প্রতিরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে থাকছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিজিবি প্রতিনিধি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিরক্ষা কমিটি সীমান্তের চোরাচালানি, মানুষ পাচারকারী ও অবৈধ যাতায়াতকারীদের চিহ্নিত করবে। একইসঙ্গে তাদের বাড়িঘর ও চলাফেরার ওপর কড়া নজরদারি করবে।’
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল আল মাহমুদ বলেন, ‘বিজিবি সদস্যরা কয়েক সপ্তাহ ধরে সাতক্ষীরা সীমান্তে টহল জোরদার করেছে। প্রথমদিকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও বর্তমানে অবৈধ যাতায়াত করতে দেখা যাচ্ছে না।’
সাতক্ষীরা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ঈদের আগে জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ছিল শতকরা ১৩ ভাগ। ঈদের পর ১৬ মে থেকে তা বাড়তে থাকে। গত এক সপ্তাহ ধরে এ হার ৪০-৪১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ শনি থেকে রোববার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৯০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং রোববার থেকে সোমবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০৫ জনের মধ্যে ৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় এক হাজার ৫৮৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে মারা গেছেন ৪৬ জন। এছাড়া, করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২১৪ জন।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খোদা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনা রোগীর ৮৭ শয্যা বাড়িয়ে ১৫০ শয্যা করা হয়েছে। ১৫০ শয্যা প্রস্তুত করা হচ্ছে। রোগী সামলাতে চিকিৎসক ও নার্সরা হিমশিম খাচ্ছেন।’
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন সাফায়াত বলেন, ‘ভারতফেরত বাংলাদেশি ৩৩৭ জনের মধ্যে ১৭ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হলেও তাদের শরীরের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আছে কিনা জানা যায়নি। তাদের নমুনা সংগ্রহ করে ২২ মে ঢাকায় আইসিডিআর পাঠানো হলেও এখনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। তাদের সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
Comments