জবাবদিহি ও শাস্তির অভাবে উপাচার্যদের একাংশ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করে না: টিআইবি

জবাবদিহি ও শাস্তির অভাবে উপাচার্যদের একাংশ কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে স্বেচ্ছাচার মনোবৃত্তির ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

আজ মঙ্গলবার টিআইবির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির নিত্য-নতুন ধরন সম্পর্কে আমরা জানছি- এ ব্যাপারে কারো কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিরও কোনো বালাই নাই। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ জরুরি।’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুর্নীতি-অনিয়মে অভিযুক্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) যেসব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানায় টিআইবি।

এছাড়াও ইউজিসির শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশের পরেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানানো হয়।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, ইউজিসির সুনির্দিষ্ট সুপারিশ বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনীহার যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা দুর্নীতি-অনিয়মের যোগসাজশের ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং সামগ্রিকভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, জবাবদিহিতার অভাব ও বিচারহীনতার সংস্কৃতিরই প্রতিফলন। টিআইবি মনে করে, এমন পরিস্থিতি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে, দেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ও  জাতীয় জীবনে যার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক গণমাধ্যমে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তা খুবই হতাশাব্যঞ্জক ও আত্মঘাতী অভিহিত করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাদান, গবেষণা ও জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার পরিবর্তে একশ্রেণির সুবিধাভোগী দলদাস তথাকথিত শিক্ষকদের কারণে দলীয় লেজুড়বৃত্তি রাজনীতির স্বার্থ রক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষাগত যোগ্যতার বদলে রাজনৈতিক পরিচয় ও সম্পৃক্ততা নিয়োগ প্রদানের অন্যতম বিবেচ্য হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে, তা সরাসরি নাকচ করে দেওয়া যাচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যসহ প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে এমনসব ব্যক্তিকে পদায়ন ও নিয়োগ দিচ্ছেন যারা উচ্চ শিক্ষার পরিবেশ নয় বরং ক্ষমতাসীন দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও দলীয় নেতাকর্মীদের সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা বিধানে সচেষ্ট থাকেন।’

‘তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী অভিযুক্ত একজন উপাচার্যকেও যদি ন্যায়বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হতো, তাহলে পরবর্তী সময়ে অন্যান্য উপাচার্যরাও অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত হওয়ার সাহস করতেন না’- মর্মে ইউজিসির একজন সদস্য সম্প্রতি যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, তার সাথে একমত পোষণ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোনো উপাচার্যের বিরুদ্ধে ২৫টি আবার কারো বিরুদ্ধে ৪৫টি পর্যন্ত অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতি দমন কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে, যা হতাশাব্যঞ্জক।

শিক্ষা উপমন্ত্রী অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ দুদকের কাছে পাঠানোর যে কথা বলেছেন সেই অনুযায়ী ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান, রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে ও কোনো ধরনের চাপের কাছে নতি শিকার না করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবে বলে টিআইবি প্রত্যাশা করছে। এক্ষেত্রে সংস্থাটি মনে করে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই।

Comments

The Daily Star  | English

JCD blocks Shahbagh again demanding justice for Shammo murder

The protesters also demanded the resignation of the vice-chancellor and proctor of Dhaka University

14m ago