পালিয়ে ফিরেছেন ভারতে পাচার ৩ নারী, বন্দি আরও অনেকে: পুলিশ

ভারতে পাচার হওয়ার ৭৭ দিন পর নির্যাতনের শিকার এক কিশোরী ও দুই তরুণী সম্প্রতি পালিয়ে দেশে ফিরেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া আরও অনেকে সেখানে বন্দি হয়ে আছেন পাচারকারীদের হাতে।
আজ সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রিফিং করছেন তেজগাঁওয়ের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

ভারতে পাচার হওয়ার ৭৭ দিন পর নির্যাতনের শিকার এক কিশোরী ও দুই তরুণী সম্প্রতি পালিয়ে দেশে ফিরেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া আরও অনেকে সেখানে বন্দি হয়ে আছেন পাচারকারীদের হাতে।

আজ বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁওয়ের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, ভারতে পাচার হওয়া এক কিশোরী প্রায় তিন মাস ধরে নির্যাতনের শিকার হয়ে ও বন্দিদশা থেকে পালিয়ে সম্প্রতি দেশে ফিরে আসেন। গতকাল রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে তিনি মামলা করেন। এ মামলার এজাহারের ১২ জন আসামির মধ্যে পাঁচ জন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা থেকে পাচারকারী চক্রের তিন সদস্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন--মেহেদী হাসান বাবু, মহিউদ্দিন ও আব্দুল কাদের।

পুলিশ জানায়, পালিয়ে আসা তিন নারীকেই টিকটক হৃদয়ের মাধ্যমে পাচার করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, পাচার হওয়া নারীদের সঙ্গে টিকটক হৃদয়ের পরিচয় হয় ২০১৯ সালে। টিকটক স্টার বানানোর কথা বলে হৃদয় তাকে প্রলুব্ধ করেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জের অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড পার্কে ৭০-৮০ জনকে নিয়ে ঘুরতে যান হৃদয়সহ টিকটকাররা। একই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর আবার ৭০০-৮০০ জন তরুণ-তরুণীকে নিয়ে পুল পার্টির আয়োজন করেন হৃদয়। সর্বশেষ এ বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার লালন শাহ মাজারে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে ওই কিশোরীকে ভারতে পাচার করেন হৃদয়।

ডিসি শহীদুল্লাহ বলেন, 'পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ার পর থেকে পালিয়ে দেশে ফেরা পর্যন্ত কিশোরীর লোমহর্ষক কাহিনী কল্পনাকেও হার মানায়। সে জানিয়েছে যে ভারতে পাচারের পর তাকেসহ অন্য নারীদের বেঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায় পর্যায়ক্রমে কয়েকটি বাসায় রেখে নির্যাতন করা হয়। ওই সময় বাংলাদেশের আরও কয়েকজন তরুণীকে সে সেখানে দেখতে পায়। তাদেরকে সুপার মার্কেট, সুপার শপ বা বিউটি পার্লারে ভালো চাকরির লোভ দেখিয়ে পাচার করা হয়েছে। এক পর্যায়ে সে ও দুই তরুণী পালিয়ে দেশে ফিরতে সক্ষম হয়।'

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা এক হাজারের বেশি নারীকে সীমান্তবর্তী এলাকায় দিয়ে পাচারের কথা স্বীকার করেছেন বলে জানান তিনি।

সম্প্রতি ফেসবুকে ভারতের বেঙ্গালুরুর বাংলাদেশি তরুণীকে বিবস্ত্র করে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত সবাইকে গ্রেপ্তার করে বেঙ্গালুরু পুলিশ। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রিফাদুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২৬) ঢাকার মগবাজার এলাকার বাসিন্দা। পালিয়ে আসা কিশোরীও একই এলাকার।

পুলিশ জানায়, একটি আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের মাধ্যমে এসব পাচার কাজ চলছে। হৃদয় এ চক্রের অন্যতম সদস্য। বাংলাদেশ, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে এ চক্রের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) মাধ্যমে বাংলাদেশি পাচারকারী ও পাচার হওয়া নারীদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন:

বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি নারী ধর্ষণ: ‘পালাতে গিয়ে’ গুলিবিদ্ধ আরও একজন গ্রেপ্তার

ভারতে নারী পাচার: ‘বস রাফি’সহ ৪ জন ৫ দিনের রিমান্ডে

৫ বছরে ৫০০ তরুণী ভারতে পাচার, ‘মূল হোতা’ ‘বস রাফি’সহ গ্রেপ্তার ৪



পালানোর চেষ্টাকালে পুলিশের গুলিতে ভারতে গ্রেপ্তার ২ বাংলাদেশি আহত



তরুণীকে ধর্ষণ-নির্যাতন: বেঙ্গালুরু থেকে ৫ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago