পুলিশের ওয়ান্টেড লিস্ট থেকে হারিছের নাম বাদ

পুলিশের ওয়েবসাইটের ‘ওয়ান্টেড পার্সন’ তালিকা থেকে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ছোট ভাই হারিছ আহমেদের নাম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গত ২৩ মার্চ হারিছের করা আবেদনের ভিত্তিতে এটি সরানো হয়।
পুলিশের ওয়েবসাইটের ‘ওয়ান্টেড পার্সন’ তালিকায় হারিছ আহমেদের নাম ছিল, তবে বর্তমানে নেই। ছবি: স্টার গ্রাফিক্স

পুলিশের ওয়েবসাইটের ‘ওয়ান্টেড পার্সন’ তালিকা থেকে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ছোট ভাই হারিছ আহমেদের নাম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গত ২৩ মার্চ হারিছের করা আবেদনের ভিত্তিতে এটি সরানো হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে করা ওই আবেদনে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হারিছ বলেন, তাকে এবং তার ভাই আনিস আহমেদকে সরকার ক্ষমা করে দিয়েছে। তাই, পুলিশের ওয়েবসাইট থেকে যেন তাদের নাম সরিয়ে নেওয়া হয়।

কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরায় গত ১ ফেব্রুয়ারি ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামের একটি ডকুমেন্টারি প্রচারিত হয়, যেটি দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এতে হারিছকে একজন পলাতক আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

পরে জানা যায় যে, ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪০১ ধারায় হারিছ ও আনিসকে ক্ষমা করে দিয়ে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল।

কিন্তু, ডকুমেন্টারি প্রচারিত হওয়ার সময়ও পুলিশের ওয়েবসাইটে ‘ওয়ান্টেড পার্সন’ হিসেবে হারিছের নাম ও ছবি ছিল। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, আল-জাজিরা ডকুমেন্টারিটি প্রচার করার কিছুদিন পর এটি সরিয়ে নেওয়া হয়। তিনদিন পর তার নাম ও ছবি আবারও ওয়েবসাইটে দেখা যায়। অন্তত গত ১৫ মে পর্যন্ত এটি ওয়েবসাইটে ছিল। 

হারিছ আহমেদ গত ২৩ মার্চ ওয়েবসাইট নাম সরানোর জন্য যে আবেদন করেন, তাতে তিনি তার ঢাকার ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। নিজেকে ৯০ এর দশক থেকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বলে দাবি করে হারিছ এতে লিখেছেন, ৮০-৯০ এর দশক থেকে তিনি ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র’।

তার আবেদনপত্রের একটি কপি দ্য ডেইলি স্টারের কাছে রয়েছে।

এতে তিনি আরও লিখেছেন, আমি কখনোই কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলাম না। রাজনীতিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে তৎকালীন ফ্রিডম পার্টি ও জামায়াত-বিএনপির প্রধান টার্গেটে পরিণত হই। আমাকে ঘায়েল করতে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াতপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময় আমাকে বিভিন্ন মামলায় জড়িত করে থাকে।

হারিছ দাবি করেন, তাকে এবং তার দুই ভাই আনিস ও তোফায়েল আহমেদ জোসেফকে স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানের ইন্ধনে ফ্রিডম পার্টির নেতা মোস্তফা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মিথ্যা অভিযোগে জড়িয়ে দেওয়া হয়। তার মেজো ভাই জেনারেল আজিজ আহমেদ যদি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় না থাকতেন, তবে তাকেও এ ঘটনায় জড়িত করে আসামি করা হতো।

আবেদনপত্রে বলা হয়, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওই মামলায় মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত হারিছের সর্বকনিষ্ঠ ভাই জোসেফ রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার আওতায় মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পান এবং দেশের আইন অনুযায়ী তাকে ও আনিস আহমেদকে যাবজ্জীবন সাজা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

নিজের বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনো মামলা নেই দাবি করে হারিছ বাংলাদেশ পুলিশের শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা এবং ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট থেকে তার নাম সরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানান।

চলতি বছরের ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর ইস্যুকৃত একটি চিঠি বলছে, ২০০৫ সালে ইন্টারপোল হারিছের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছিল এবং ২০১৯ সালে ডিএমপি পুলিশ কমিশনারের অনুরোধে এ নোটিশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। 

চলতি বছরের ২৯ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হারিছের আবেদনপত্রটি পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে ‘নির্দেশক্রমে অনুরোধ’ জানিয়ে লিখে, যদি তার বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনো মামলা-মোকদ্দমা না থাকে, তবে নিয়মানুযায়ী যেন তার নাম ওয়ান্টেড তালিকা থেকে সরানো হয়।

১৩ এপ্রিল ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) এবং আইসিটি ডিভিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান তালুকদার গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট এবং সব বিভাগীয় উপ-পুলিশ কমিশনারদের কাছে চিঠি দিয়ে হারিছের বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমা আছে কি না, জানতে চান।

এ চিঠিরও একটি কপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে রয়েছে। 

তবে, যোগাযোগ করা হলে, জিয়াউল আহসান এ ধরনের কোনো চিঠিতে স্বাক্ষর করার কথা অস্বীকার করেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে পুলিশের মিডিয়া টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা (আইসিটি ডিভিশন) তো ইন্টারনেটের সমস্যা বা কারও রাউটার সংক্রান্ত ঝামেলা, এগুলো নিয়ে কাজ করি। ওয়েবসাইটের কাজ আমাদের না।’

দ্য ডেইলি স্টার গত ২৭ মে থেকে কয়েক দফায় পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া বিভাগের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করে আসছে। কিন্তু, তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

২৭ মে সন্ধ্যায় উপ-মহাপরিদর্শক (মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) এস এম রুহুল আমিন এ প্রতিবেদককে প্রশ্নটি লিখিত পাঠাতে বলেন। মুঠোফোনে প্রশ্নটি লিখে পাঠানোর একদিন পর তিনি বলেন, এ বিষয়টি তার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।

সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) মো. সোহেল রানা ২৭ মে থেকে ফোনও ধরছেন না এবং কোনো মেসেজের উত্তর দিচ্ছেন না।

গত ফেব্রুয়ারিতে যখন হারিছের নাম পুলিশের ওয়েবসাইটে ছিল, তখন সোহেল রানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, ‘সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নির্দেশিত হয়ে সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী ওয়ান্টেড তালিকাটি ওয়েবসাইটে আপলোড ও আপডেট করা হয়ে থাকে। তাই, কোনো ব্যক্তির নাম কর্তনের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট পক্ষের নিয়মমাফিক আবেদনের প্রেক্ষিতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা সাপেক্ষে তালিকা থেকে কোনো নাম বাদ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’

এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ফাইল না দেখে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না। 

হারিছ দুটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। দুটি ভিন্ন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল তাকে এ সাজার রায় দেন। এর মধ্যে ২০০৪ সালের ২৫ মে মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মোস্তফা হত্যা মামলা এবং ২০০৪ সালের ৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু মোরশেদ হত্যা মামলার রায় দেওয়া হয়।  

হারিছ তার আবেদনপত্রে মোরশেদ হত্যা মামলার কথা কিছু উল্লেখ করেননি। তবে, ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ জারিকৃত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দুটি মামলাতেই সরকারি ক্ষমা পেয়েছেন তিনি।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago