লালমনিরহাটে সমতল ভূমিতে চা চাষে সাফল্য

লালমনিরহাটে ১২১ একর সমতল ভূমিতে চা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন ৮২ জন কৃষক। বাংলাদেশ চা বোর্ডের সার্বিক সহযোগিতায় তারা সমতল ভূমিতে চা উৎপন্ন করছেন। তাদের সফলতা দেখে অন্য কৃষকরাও চা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
লালমনিরহাটে সমতল ভূমিতে চা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। ছবি: স্টার

লালমনিরহাটে ১২১ একর সমতল ভূমিতে চা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন ৮২ জন কৃষক। বাংলাদেশ চা বোর্ডের সার্বিক সহযোগিতায় তারা সমতল ভূমিতে চা উৎপন্ন করছেন। তাদের সফলতা দেখে অন্য কৃষকরাও চা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা প্রকল্প কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় প্রথমে এক একর সমতল ভূমিতে ব্যক্তি উদ্যোগে চা চাষ শুরু করেন শাহানারা বেগম সোমা ও ফেরদৌস আলম দম্পতি। তাদের দেখে জেলার অনেক কৃষক চা চাষে উদ্বুদ্ধ হন। তবে ২০১৫ সাল থেকে চা বোর্ডের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায় কৃষকরা চা চাষ প্রসারিত করেন।

জেলায় এখন মোট ৮২ জন কৃষক চা চাষ করছেন। গড়ে প্রতি মাসে এক একর জমি থেকে কৃষকরা ১৫০০ কেজি গ্রিন চা পাতা সংগ্রহ করতে পারছেন।

পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের কিসামত নিজজমা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা কপর উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘২০১৮ সালে বাংলাদেশের চা বোর্ডের পরামর্শ ও সহযোগিতায় আমি তিন একর জমিতে চা চাষ শুরু করি। প্রতি একর জমি থেকে প্রতি মাসে গড়ে ১৫০০ কেজি চা পাতা উৎপন্ন করি।’

‘প্রতি কেজি গ্রিন চা পাতা ২১ থেকে ২৪ টাকা কেজি দরে পঞ্চগড়ের একটি চা প্রসেসিং ফ্যাক্টরিতে বিক্রি করছি,’ বলেন তিনি।

পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামের কৃষক নুর শেখ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি এক একর জমিতে চা চাষ করছেন গত তিন বছর ধরে। আশানুরূপ ফলন পেয়ে খুশি হলেও, দাম নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘প্রতি কেজি গ্রিন চা পাতা ২৫ টাকা দরে বিক্রি করতে পারলে আমরা বেশি লাভবান হতাম।’

এই কৃষক জানান, প্রতি একর জমি থেকে প্রতি মাসে ১৪০০-১৫০০ কেজি চা পাতা তুলতে শ্রমিক খরচ হয় তিন হাজার টাকা। সারা মাস জুড়ে সার কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ হয় প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা। আর চা পাতা বিক্রি করে আসে ২৯ থেকে ৩০ হাজার টাকা।

একই উপজেলার বাউড়া এলাকার কৃষক এনায়েত হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি দেড় একর জমিতে চা চাষ করছি। আগে জানতাম চা হলো পাহাড়ি এলাকার ফসল। কিন্তু চা বোর্ডের পরামর্শ ও সহযোগিতায় সমতল ভূমিতে এখন আমরা চা উৎপন্ন করতে পেরে খুশি ও গর্বিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘চা চাষে আমাদের বড় সমস্যা হলো আমাদের উৎপাদিত চা পাতা পঞ্চগড়ে নিয়ে বিক্রি করতে হয়। এতে আমাদেরকে পরিবহন খরচ বহন করতে হয়।’

বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফ খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হাতীবান্ধায় একমাত্র চা প্রোসেসিং ফ্যাক্টরিটি বৈদ্যুতিক সমস্যার কারণে বন্ধ থাকায় কৃষকদের উৎপাদিত চা পাতা বিক্রি করতে হচ্ছে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দুরে পঞ্চগড়ে গিয়ে।’

তবে চা বোর্ড থেকে কৃষকদের গাড়ির সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি। কৃষকদের গাড়ির তেল খরচ ও চালকের খরচ দিতে হয়। প্রত্যেক গাড়িতে ১৭০০ থেকে ২০০০ কেজি চা পাতা পরিবহন করা হচ্ছে।

মো. আরিফ খান বলেন, ‘লালমনিরহাটের সমতল ভূমিতে আশাতীত চা উৎপন্ন হচ্ছে যা চা বোর্ডকে বিস্মিত করেছে। এ অঞ্চলের মাটি চা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। চা চাষে আগ্রহী কৃষকদের আমরা শ্যালো মেশিনসহ চা বাগানে ব্যবহৃত বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি বিনামূল্যে সরবরাহ করে সহায়তা দিচ্ছি।’

তিনি আরও জানান, কৃষকদের বিনামূল্যে সার ও কীটনাশক সহায়তা দেওয়া হয়। এছাড়া, চা বাগানের পরিচর্যা ও কর্তন বিষয়ে কৃষকদের সবসময় পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়।

আগামী কয়েক বছরের মধ্যে লালমনিরহাট চা চাষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ আশা প্রকাশ করে আরিফ খান বলেন, ‘এক সময় চা চাষই লালমনিরহাটের অর্থনৈতিক অবস্থা চাঙ্গা করবে।’

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago