ঝুমন দাশের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ২৪ নাগরিকের বিবৃতি
সুনামগঞ্জের শাল্লায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার ঝুমন দাশ আপনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন দেশের ২৪ নাগরিক। আজ শুক্রবার যৌথ বিবৃতিতে তারা এ দাবি জানান।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ১৭ মার্চ একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের সমর্থকরা সুনামগঞ্জের শাল্লায় একটি গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। ঘটনায় প্রকাশ হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বক্তব্যের প্রতিবাদে হবিপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাস আপন নামে এক যুবক ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন গত ১৬ মার্চ। এ ঘটনাকে ধর্মীয় উস্কানির অজুহাত দিয়ে ওই এলাকার হেফাজত নেতার অনুসারীরা রাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং পুলিশ ওই রাতেই ঝুমন দাস আপনকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু ১৭ মার্চ সকালে কাশিপুর, নাচনী, চন্ডিপুরসহ কয়েকটি মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামের মসজিদে মাইকিং করে সেখানে আক্রমণের জন্য লোকজন জড়ো করে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের কয়েক হাজার অনুসারী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামে অতর্কিত পরিকল্পিতভাবে হামলা- ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
এই ঘটনায় মামলা দায়েরের পর কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর প্রায় এক সপ্তাহ পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ঝুমন দাস আপনের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে। যে মামলায় ঝুমন দাস আপন আজ ৮০ দিন ধরে কারাগারে আটক আছে। ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় সুনামগঞ্জ মুখ্য মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট জামিন প্রদান না করায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ঝুমন দাসের জামিনের আবেদন করা হয়। কিন্তু, কয়েক দফা শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত ঝুমনের জামিন মঞ্জুর করেননি। যদিও ইতোমধ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসতিতে হামলা—ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামিদের অনেকেরই জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।
শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসতিতে হামলা—ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। এর আগেও কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বসতিতে, যশোরের মালোপাড়া, ঠাকুরগাঁওয়ের গড়েয়া-কর্ণাই, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার নাসিরনগর, রংপুরের পাগলাপীর, ভোলার বোরহান উদ্দিন, কুমিল্লার মুরাদনগরসহ বিভিন্ন স্থানে একইভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম ও মহানবীকে কটাক্ষ করে পোস্ট দিয়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অজুহাত দেখিয়ে সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে।
আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সাথে জানাচ্ছি যে, এ ধরনের ঘটনায় রাষ্ট্রীয় কঠোরতার বিপরীতে ভিকটিমের প্রতিই রাষ্ট্রের কঠোরতা দৃশ্যমান, যা স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ একইসঙ্গে সংবিধান পরিপন্থী।
আমরা বিবৃতিদাতারা লক্ষ্য করেছি যে, সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে বেড়ানো ও সামাজিক সংহতি বিনষ্টকারী সংগঠন হেফাজত ইসলামকে সমীহ করতে গিয়ে রাষ্ট্র ভিকটিমদের ন্যায়বিচার বঞ্চিত করছে। এমতাবস্থায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঝুমন দাস আপনসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারকৃত সকলের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি।
আমরা বিশ্বাস করি সরকার দ্রুততম সময়ে ঝুমন দাস আপনের মুক্তি প্রদান করবেন।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রামেন্দু মজুমদার, মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এস এম এ সবুর, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহিদুল বারী, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, উন্নয়ন কর্মী রোকেয়া কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পারভেজ হাসেম, জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের (ইনসাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপয়ন খীসা, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক জীবনানন্দ জয়ন্ত, সংস্কৃতি কর্মী ড. সেলু বাসিত, উঠোন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি অলক দাস গুপ্ত, সাংস্কৃতিক সংগঠন আনন্দন-এর সমন্বয়ক এ কে আজাদ ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল) সভাপতি গৌতম শীল।
আরও পড়ুন:
‘আওয়ামী লীগে কি সাম্প্রদায়িক লোকজন ঢুকে গেছে?’, প্রশ্ন ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতির
Comments