সাতক্ষীরায় ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৫৩.১৯ শতাংশ

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের পুরুষ ওয়ার্ড। ছবি: স্টার

সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশে। এর আগের সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার পরীক্ষায় এই হার ছিল ৪৭ দশমিক ৩৪ ভাগ।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২০ শয্যার করোনা ইউনিট রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে আট শয্যার আইসিইউ ও আট শয্যার এইচডিইউ। এ ছাড়াও রয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন, প্রয়োজনীয় হাই-ফ্লো নেজাল ক্যানুলা।

একইভাবে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে রয়েছে ৪০ শয্যার করোনা ইউনিট। সেখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম চালুর কাজ চলছে। ২৮টি বড় ও ৭৪টি ছোট অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে হাসপাতালটিতে। তবে সেখানে নেই কোনো হাই-ফ্লো নেজাল ক্যানুলা, নেই ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা।

গতকাল সকাল ৮টা থেকে আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় ৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫০ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের শতকরা হার ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।

শুক্রবার সরকারি ছুটি থাকায় ওই দিন কোনো পরীক্ষা হয়নি।

গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮৯ জনের, অর্থাৎ ৪৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে।

এর আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই তলায় করোনা ইউনিটে দেখা যায়, নার্স ও চিকিৎসকরা রোগীদের কাছে তাদের অবস্থা শুনে চিকিৎসা দিচ্ছেন। করোনা ইউনিটের পুরুষ ওয়ার্ডে বসে কান্না করছেন কলারোয়া উপজেলার রায়টা গ্রামের পারভিন খাতুন। তার স্বামী কামাল হোসেন (৩৫) করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

পারভিন খাতুন জানান, চিকিৎসক ও নার্স মাঝে মাঝে তাদের দেখে যাচ্ছে। চিকিৎসক বলেছেন, তার স্বামীকে আইসিইউতে নিতে হবে। কিন্তু সেখানে শয্যা খালি নেই। কী করবেন বুঝতে পারছেন না পারভিন।

একই ওয়ার্ডে একই উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকার শামছুর রহমান (৪২) ভর্তি রয়েছেন। তিনি গত বৃহস্পতিবার ভর্তি হয়েছেন। তার স্ত্রী পম্পা খাতুন জানান, শামছুর রহমানের অবস্থা আগের চেয়ে অনেকটা ভালো। চিকিৎসক ও নার্সরা সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আজ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কথা হয় আলাউদ্দিন মোড়লের সঙ্গে। তার ছেলে ইমরান মোড়ল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন সাত দিন যাবৎ। আগের চেয়ে তার অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। চিকিৎসক ও নার্সরা তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের করছেন এবং আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসাও দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খোদা বলেন, ‘পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। রোববার রোগী ছিল ৯৭ জন। আজ রোগী রয়েছে ৯৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৩৬ জন, আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৫ জন।’

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ পরিস্থিতি উন্নতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘শনিবার ও রোববার ২৪ ঘণ্টায় রোগী ছিলেন ৪৬ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন আট জন। নতুন রোগী ভর্তি না হওয়ায় এখন রোগী রয়েছেন ৩৮ জন।’

পরীক্ষা আরও বেশি না করলে সাতক্ষীরার করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে পরীক্ষার ওপর জোর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে পরীক্ষা করলে ৩০ মিনিটের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। মানুষ সচেতন হতে পারেন।’

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন সাফায়াত বলেন, ‘পরিস্থিতি অনেকটা স্থিতিশীল। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আজ সকালে রোগী রয়েছে ১৩৬ জন। গতকাল ছিল ১৪৩ জন। এ পর্যন্ত করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২২৯ জন। আর করোনা সংক্রামিত হয়ে মারা গেছেন ৪৯ জন।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শ্যামনগর উপজেলায় র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু করা হয়েছে। গতকাল কলারোয়ায় চালু করা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে দেবহাটা ও কালীগঞ্জে এই পরীক্ষা চালু করা হবে। ভারতের সঙ্গে সীমানা রয়েছে এমন পাঁচটি উপজেলায় এই পরীক্ষা চালু করার পর আশাশুনি ও তালা উপজেলায় চালু করা হবে। লোকবল সঙ্কটের কারণে অনেক কিছু সময় মতো করা যাচ্ছে না।’

Comments

The Daily Star  | English

Wrap up polls preparations by December

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday ordered the authorities concerned to complete, by December, the preparations for the upcoming national election.

6h ago