যে কারণে এফএএস ফাইন্যান্স এমডির বিদেশযাত্রা আটকে দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন আর্থিক জালিয়াতের সঙ্গে জড়িয়েছে এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের নাম। এই নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানটিকে বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক নিরীক্ষণ করছে।

এফএএসের নতুন করে স্থাপিত বোর্ডের প্রথম মিটিং হয়ে সেটির মিনিটস এখনো তৈরি হয়নি। তাই নতুন বোর্ডের প্রথম মিটিং হয়ে সেটির মিনিটস তৈরি না হওয়া পর্যন্ত বিদেশে না যেতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রিতিশ কুমার সরকারকে গতকাল রোববার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রিতিশের বিদেশ যাত্রার ওপর এই ‘বিধি-নিষেধ’র সময়সীমা আরও বাড়ানো হতে পারে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি সাম্প্রতিক তদন্ত থেকে জানা গেছে, প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার এবং তার সহযোগীরা এফএএস ফাইন্যান্সের কাছ থেকে একাধিক প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব ছিল শুধুমাত্র কাগজে-কলমে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ৩১ মে এফএএস ফাইন্যান্সের বোর্ডকে পুনস্থাপন করে।

নীতিমালা মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ায় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ এই এনবিএফআই (নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন) প্রতিষ্ঠানের বোর্ডকে ভেঙ্গে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৩০ শতাংশ শেয়ার পৃষ্ঠপোষক-পরিচালকদের মালিকানায় থাকতে হবে।

এফএএস ফাইন্যান্সের জন্য পাঁচ জন স্বতন্ত্র পরিচালককে মনোনয়ন দেয় বিএসইসি।

আগের বোর্ডটি ৬ মে প্রিতিশকে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তিগত ভ্রমণের জন্য ১৮ দিনের ছুটি মঞ্জুর করেছিল।

ফলে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিদেশ ভ্রমণের জন্য অনুমোদন চেয়ে আবেদন জানান।

তবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল তার আবেদনটি নাকচ করে দিয়েছে এবং কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির কাছে পাঠানো চিঠিতে ‘আমানতকারীদের ও প্রতিষ্ঠানরটির স্বার্থ রক্ষা’কে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, সাধারণত এসব ক্ষেত্রে ছুটির অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু, এই প্রতিষ্ঠানটির সংবেদনশীল পরিস্থিতির কারণে ছুটি বাতিলের এই বিরল সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে।

এফএএস ফাইন্যান্সের নতুন বোর্ডটি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে ১ জুন থেকে। একজন বোর্ড সদস্য জানিয়েছেন, বোর্ডের পক্ষ থেকেও প্রিতিশকে এই মুহূর্তে বিদেশ ভ্রমণ না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রিতিশ এফএএস ফাইন্যান্সে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে যোগদান করেছিলেন।

এফএএস ফাইন্যান্সের নতুন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন জানিয়েছেন, আগের বোর্ডের মঞ্জুর করা ছুটিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুসারে বাতিল করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রিতিশ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বিএসইসি সম্প্রতি বোর্ডটিকে পুনস্থাপন করার কারণে তিনি নিজেই তার ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেছেন।

দুদক জানতে পেরেছে, পিকে হালদার এফএএস ফাইন্যান্সের কাছ থেকে ২২টি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, পিকে হালদার বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন।

ঋণ নেওয়া ২২টি প্রতিষ্ঠানের মাঝে ২০টির অস্তিত্ব শুধুমাত্র কাগজে-কলমে, জানিয়েছে দুদক।

এই এনবিএফআইটি গত বছরের প্রথম নয় মাসে ১২৭ কোটি টাকা লোকসানের মুখ দেখেছে। অথচ প্রতিষ্ঠানটি এর আগে পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে দুই দশমিক ২৮ কোটি টাকা করে লাভ করছিল।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

More than 290 killed in Air India plane crash: police

It’s the first Dreamliner crash since its 2011 commercial debut, says Aviation Safety Network

8h ago